বাচ্চাদের ঘুমের মধ্যে ঝাকুনি কিসের লক্ষণ এবিষয়ে জানুন
আসসালামু আলাইকুম, আপনারা হয়তো আগে বাচ্চাদের
ঘুমের মধ্যে
ঝাকুনি কিসের লক্ষণ এবং হিপনিক জার্ক থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে অনেক তথ্য
বিস্তারিত ভাবে জানার জন্য খোঁজাখুঁজি করেছেন কিন্তু সঠিক তথ্য পাননি। যারা পাননি
তারা আজকে আমার এই পোষ্টের মাধ্যমে এ সকল বিষয়ের বিস্তারিত ভাবে জানতে পারবেন
এজন্য শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
আজকে আপনারা আমার এই পোষ্টের মাধ্যমে বাচ্চাদের ঘুমের মধ্যে ঝাকুনি কিসের লক্ষণ
এবং হিপনিক জার্ক থেকে মুক্তির উপায় ছাড়াও ঘুমের মধ্যে শরীর কাপে কেন, ঘুমের
মধ্যে শ্বাস বন্ধ কেন হয়, ঘুমের মধ্যে বোবা ধরে কেন সহ ঘুমের মধ্যে হাত পা অবশ
হয় কেন ইত্যাদি বিষয়ে আপনারা অনেক বিস্তারিত তথ্য সঠিকভাবে জানতে পারবেন।
বাচ্চাদের এবং বড়দের ঘুমের মধ্যে হঠাৎ করে শরীর কেঁপে ওঠায় এবং ঝাঁকুনি
দেওয়াকে বলা হয় হিপনিক জার্ক। এ সকল বিষয়ে জানতে আপনার শেষ পর্যন্ত পড়বেন।
ভূমিকা
বাচ্চাদের এবং বড়দের ঘুমের মধ্যে হঠাৎ করে শরীর কেঁপে ওঠে এবং চমকে ওঠে অথবা
শরীর ঝাকুনি দিয়ে ওঠে এরকম সমস্যাটিকে বলা হয়ে থাকে হিপনিক জার্ক। আর এটা ঘটে
থাকে মানুষ যখন কেবল ঘুমোনোর জন্য বিছানায় যায় তখন তার চোখটা কেবল বুঝে এসেছে
অর্থাৎ তন্দ্রাচ্ছন্ন অবস্থায় এমনটা ঘটে। মানুষ তখন গভীর ঘুমে থাকে না এমন সময়
তার মনে হয় যেন কেউ তাকে ধাক্কা মারছে অথবা সে শূন্য থেকে পড়ে যাচ্ছে। এ সময়
তার হঠাৎ করে ঘুম ভেঙ্গে যায়। এর প্রভাব আমাদের ব্যক্তিগত জীবনে আবার কর্ম
ক্ষেত্রে পরে। আমাদের
মস্তিষ্ক এ অবস্থাকে ঠিকমত ঠাহড় করতে পারে না। বাচ্চাদের ক্ষেত্রেও এমনটা ঘটে
থাকে। এরকম অবস্থা যদি প্রায় প্রতিনিয়ত ঘটতে থাকে তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের সাথে
কথা বলা উচিত। কারণ এই সমস্যাটি ঘটার কারণে বাচ্চাদের এবং বড়দের ঘুমের ব্যাঘাত
ঘটে অর্থাৎ তারা ঠিকমত ঘুম পাড়তে পারেনা।এই সমস্যা থেকে মুক্তির উপায় আছে এজন্য
আপনাদের নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। ক্যাফেইন এবং
অ্যালকোহল জাতীয় খাবার খাওয়া বন্ধ করতে হবে তাহলে আপনারা এটা থেকে মুক্তি পেতে
পারবেন।
ঘুমের মধ্যে শরীর কাপে কেন
আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য পর্যাপ্ত ঘুম প্রয়োজন। কিন্তু অনেকেই ঘুমের সমস্যার কথা
বলে থাকেন ঘুমোতে যাওয়ার পরে তাদের ঠিকমত ঘুম হয় না আবার দেখা যায় যে গভীর
ঘুমে থাকা অবস্থায় হঠাৎ করে লাফিয়ে উঠে বা কেঁপে ওঠার প্রবণতা ইত্যাদি সমস্যা
গুলো দেখা দেয়। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, আমাদের মধ্যে অনেকেরই গভীর ঘুমের মধ্যে হঠাৎ
করেই এক ঝটকায় ঘুম ভেঙ্গে যায় আবার এসময় যে ব্যক্তির এমন হয় সেই ব্যক্তি
ঘুমের মধ্যে কখনো শূন্য থেকে পড়ে যায় আবার কখনো সিঁড়ি থেকে পড়ে
যাচ্ছে এমন টা দেখে থাকে। আবার অনেকে দেখেন তাকে হয়তো কেউ ধাক্কা দিচ্ছে।
ঘুমের
মধ্যে এমন সমস্যা দেখা মাত্রই আমাদের শরীরটা তা রিয়েক্ট করে থাকে আর এজন্য ঘুমের
মধ্যে শরীর হঠাৎ করে কেঁপে ওঠে অথবা সে দেখতে পা দিয়ে বিছানায় জোরে আঘাত করে
এজন্য তার ঘুম ভেঙ্গে যায়। ঘুমের মধ্যে আমাদের এই চমকে ওঠা অথবা শরীর কাঁপুনি
দিয়ে ওঠা এই ঘটনাটির প্রভাব পড়ে থাকে আমাদের ব্যক্তিগত এবং কর্মক্ষেত্রের
জীবনে। এ সমস্যার মধ্যে যারা বলছেন তাদের আট ঘন্টা
ঘুম হলেও তাদের শরীর থেকে ক্লান্তির ছাপ কাটে না। আমাদের ঘুমের মধ্যে হঠাৎ করে
কেঁপে ওঠা বা শরীর ঝাকুনি দেওয়া অথবা হঠাৎ করে চমকে ওঠা এরকম সমস্যাকে চিকিৎসা
শাস্ত্রে বলা হয় হিপনিক জার্ক। চিকিৎসকরা বলেছেন যে এ ঘটনাটি আমাদের গভীর ঘুমের
মধ্যে কখনোই ঘটে না এটা ঘটে থাকে আমাদের ঘুমের শুরুর দিকে। ঘুমের শুরুর দিকে
তন্দ্রাভাব থাকে এবং আমাদের মস্তিষ্ক এ সময় কিছু একটা বিষয় নিয়ে ভাবতে থাকে আর
তন্দ্রাজালের এ সময়টাতেই মানুষের এই হিপনিক
জার্ক সমস্যাটি হয়ে থাকে। এর কারণ হিসেবে চিকিৎসকরা বলেছেন যে, এ সময় আমাদের
মস্তিষ্ক বিভিন্ন সংকেতের আদান-প্রদানের কাজে ভুল করে থাকে আর এজন্যই এই ঘটনাটি
ঘুমের মধ্যে ঘটে থাকে। অনেকের ঘুমের মধ্যে ভূতের স্বপ্ন দেখা অথবা ভয় পাওয়ার
কারণে ও এমনটা হতে পারে। ঘুমের মধ্যে আমাদের এরকম সমস্যা হলে এটি আমাদের কোন
শারীরিক অসুবিধা হিসেবে ধরা হয় না। চিকিৎসা শাস্ত্রে এই রোগটির নাম দেওয়া
হয়েছে প্যারাসামোনিয়া। যখন আমাদের মধ্যে কোন
পূর্ণ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রতিদিন ৮ ঘন্টা ঘুম হয় না তখন তাদের মস্তিষ্ক
ক্লান্ত এবং অবসাদগ্রস্থ হতে পারে। এ সময় সে অবচেতন হয়ে ওঠে এবং তার মনে নানা
রকমের বিষয়ের চিন্তা আর ভয় বাসা বাঁধে থাকে আর এটারই বহিঃপ্রকাশ ঘটে থাকে
স্বপ্নের মধ্যে দিয়ে আর এজন্যই তখনই দেখা দেয় এই হিপনিক জার্ক বা স্লিপ সুইচ এর
সমস্যা। এই সমস্যাটি যারা ধূমপান পরে তাদের বেশি হতে দেখা যায় আবার যারা
অ্যালকোহল অথবা কফি দান করেন তাদের এ সমস্যাটি আরো বেশি হতে পারে।
ঘুমের মধ্যে শ্বাস বন্ধ কেন হয়
আমাদের মধ্যে অনেকেরই ঘুমের মধ্যে শ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়া সমস্যা ঘটে থাকে কিন্তু
আমরা হয়তো অনেকেই এ বিষয়ে বুঝতে পারি না। ঘুমের মধ্যে আমাদের কিছু সময়ের জন্য
শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার এই সমস্যা কে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয়
স্লিপ অ্যাপনিয়া। এটি একটি রোগ এবং চিকিৎসকেরা মনে করেন যে এটা মানুষের জন্য
একটা গুপ্ত ঘাতক রোগ। এই রোগটি সম্পর্কে আমরা বেশিরভাগ মানুষই জানে না বা আমাদের
ধারণা কম আছে। এই রোগে আমরা ভোগলেও অনেক
সময় দেখা যায় যে এটা সম্পর্কে আমরা অর্থাৎ যে ব্যক্তি ভুগেন সেই ব্যক্তি বুঝতে
পারে না। ঢাকায় চিকিৎসকেরা বলেছেন যে, আমাদের বাংলাদেশে ও এই স্লিপ অ্যাপনিয়া
রোগে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং তা উদ্বেগ জনক হারে।
স্লিপ অ্যাপনিয়া হচ্ছে আসলেই একটা গুপ্তঘাতি রোগ। যাদের এই সমস্যা হয় তাদের
ঘুমের বারবার ব্যাঘাত ঘটে থাকে শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে। জাতীয়
নাক, কান, গলা ইনস্টিটিউট এর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক অধ্যাপক মোঃ আব্দুল্লাহ
জানিয়েছেন যে,
যখন কোন ব্যক্তির স্লিপ অ্যাপনিয়া এর সমস্যা হয় তখন সেই ব্যক্তি ঘুমানোর অল্প
কিছু সময়ের মধ্যে অনেক জোরে জোরে শব্দ করে শ্বাস নিতে থাকে। তিনি আরো বলেন যে
তখন ওই ব্যক্তির শ্বাস নেওয়ার গতি বেড়ে যায় এবং একপর্যায়ে হঠাতে
শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়া সমস্যা দেখা দেয়। তবে কিছু সময় শ্বাস-প্রশ্বাস
বন্ধ থাকার পরে আবার নতুন করে তা শুরু হয়। অধ্যাপক আব্দুল্লাহ বলেন, এই যে শ্বাস
প্রশ্বাসের ব্যাঘাত ঘটে থাকে এটাকে বলা হয়ে থাকে অ্যাপনিয়া। এখন আমাদের মনে
প্রশ্ন থাকে
যে যখন কেউ ঘুমের মধ্যে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিতে থাকে কিন্তু তারপরে হঠাৎ করে
আবার শ্বাস-প্রশ্বাস পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায় কেন? এই প্রশ্নের উত্তরে অধ্যাপক
আব্দুল্লাহ বলেছেন, বারবার শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়া হয়ে থাকে তখন আমাদের
শরীর
থেকে বাতাস বের হয়ে যায় এবং শরীর থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড বেরিয়ে আসে মূলত।
তিনি আরো উল্লেখ করেন যে যখন কার্বন ডাই-অক্সাইডের লেভেলের পরিমাণ কমে যায় তখন
একজন মানুষের শরীরে থাকা সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেম আমাদের এই শ্বাস-প্রশ্বাসের
প্রক্রিয়াকে
তখন বন্ধ করে দেয়। কিছু সময় দম বন্ধ থাকার কারণে আমাদের শরীরের সেন্ট্রাল
নার্ভাস সিস্টেমে আবার নতুন করে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের লেভেলের পরিমাণ বেড়ে গেলে
তখন আবার নার্ভাস সিস্টেম পুনরায় উজ্জীবিত হয়ে শ্বাস প্রশ্বাস ফিরে আসতে থাকে।
তিনি বলেন এই পরিস্থিতিটা আমাদের জন্য বেশ জটিল ও এরকম সমস্যার কারণে অনেক সময়
মানুষ এর মৃত্যু ঘটতে পারে। এই রোগের চিকিৎসা যদি না করা হয় তাহলে মস্তিষ্ক এবং
হৃৎপিণ্ড ও আমাদের কিডনির উপর চাপ পড়ার সম্ভাবনা থাকে এবং তখন সেটা আমাদের জন্য
উচ্চ রক্তচাপ
ও হৃদ রোগের জটিল সব সমস্যা দেখা দিতে পারে। এই রোগের কারণে মানুষের রাতে ঘুমের
ব্যাঘাতের সমস্যা ঘটে থাকে এজন্য তার প্রতিদিনের কর্মকাণ্ডে এর নেতিবাচক প্রভাব
পড়ে। এই রোগ এড়ানোর জন্য আমাদের শরীরের উচ্চতা অনুযায়ী ওজন সবসময় নিয়ন্ত্রণে
রাখতে হবে আমাদের প্রতিনিয়ত ব্যায়াম করতে হবে এবং সেই সাথে আমাদের সুষম খাবার
গ্রহণ করতে হবে। এরপরও যদি মানুষের ঘুমের মধ্যে বারবার এই দম বন্ধ হওয়া বা শ্বাস
বন্ধ হয়ে যাওয়া সমস্যা হয় তাহলে তাড়াতাড়ি চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত এবং
এতে করে ভালো থাকা যাবে বলে জানান চিকিৎসকেরা।
ঘুমের মধ্যে বোবা ধরে কেন
ঘুমের মধ্যে বোবা ধরে এ ধরনের কথা আমাদের মধ্যে অনেক মানুষই বলে থাকেন। আবার এ
বিষয়ে আমরা অনেকে হয়তো জানি না বা বুঝতে পারি না। যারা জানেন না তারা আজকে জেনে
নিন। অনেক মানুষ প্রায়ই গভীর রাতে ঘুম থেকে জেগে ওঠে এবং তাদের মনে হয় যে তাদের
শরীরের ওপর যেন কোন ভারী কিছু চাপ দিয়ে আছে আর সেটা এত ভারী যে তখন সে ব্যক্তি
নিঃশ্বাস নিতে পারে না। আবার পাশে যদি কেউ থাকে তাহলে তাকেও ডাকতে পারেনা। ঘুম
হঠাৎ করে ভেঙে যায় এবং মনে হয় যেন সে মানুষের শরীরে
কোন শক্তি নেই হাত-পা নাড়ানোর অথবা কথা বলার মত কোন শক্তি নেই। তখন মানুষের মনে
হয় যেন দম বন্ধ হয়ে সে মারা যাবে এরকম সমস্যাটি মাত্র কয়েক সেকেন্ডের জন্য
হয়ে থাকে কিন্তু তখন মনে হয় যেন এটা কয়েক ঘন্টা এবং এটা এত ভয়ংকর হয় যে
মানুষ খুব ভয় পায়। এরকম অভিজ্ঞতার কথা আমরা অনেকেই বলে থাকি বা অনেকের কাছ থেকে
শোনা যায়। এমন শোনার পরে অনেকে বলে থাকেন যে এটাকে বোবায় ধরা বলে। চিকিৎসা
শাস্ত্রে এটাকে বলা হয়ে থাকে স্লিপ প্যারালাইসিস অথবা ঘুমের মধ্যে
পক্ষাঘাত।
এরকম সমস্যা যে ব্যক্তি হয় সেই ব্যক্তি কিছু সময়ের জন্য কথা বলা এবং নড়াচড়া
করার শক্তি হারিয়ে ফেলে। এমন হলে মানুষ ভয় পায় এবং ঘাবড়ে যায়। এ বিষয়ে
স্নায়ু রোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার সামান্থা আফরিন বলেন বোবায় ধরা অথবা স্লিপ
প্যারালাইসিস এই সমস্যাটি ঘটে থাকে মানুষের গভীর ঘুম এবং জাগরনের মাঝামাঝি সময়ে
এটা একটি স্নায়ুজনিত সমস্যা। অর্থাৎ বোবায় ধরা এমন একটি অবস্থা যখন একজন মানুষ
ঘুমিয়ে পড়ে অথবা ঘুম থেকে জেগে ওঠার সময়ে তার শরীরের কোন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ
নড়াচড়া করতে না পারার
একটি অবস্থা। যখন কোন ব্যক্তিকে বোবায় ধরে তখন সেই ব্যক্তি কথা বলতে বা অঙ্গ
পতঙ্গ নাড়াচাড়া করতে পারে না। তখন সেই ব্যক্তি অসাড়তা অনুভব করে থাকে। আর এটি
ঘটে থাকে যখন মানুষ ঘুমিয়ে পড়ে অথবা জেগে ওঠার আগ মুহূর্তে অর্থাৎ মানুষের
ঘুমন্ত অবস্থা ও জাগরণের মধ্যবর্তী সময়ে। এই ঘটনাটি ঘটতে পারে কোন ব্যক্তি
ঘুমিয়ে পড়ার পরে এবং ঘুম থেকে জেগে ওঠার আগে। বোবায় ধরা পক্ষাঘাতের প্রধান
লক্ষণ হচ্ছে জাগরনের সময় নড়াচড়া করতে অথবা কথা বলতে না পারা। আর
এটার কারণ হিসেবে জানা যায় আমাদের মস্তিষ্কে দুই রকমের রাসায়নিক বা এমাইনো
এসিডের নিঃসরণের ফলে আমাদের মাংসপেশি অসাড় হয়ে পড়ে। রাসায়নিক দুইটি হলো
গ্লাইসিন ও গামা অ্যামাইনোবিউটিরিক অ্যাসিড গ্যাবা। নিউরোট্রান্সমিটার গ্লাইসিন ও
গ্যাবা আমাদের মস্তিষ্কে বেশি সক্রিয় রাখার কোষগুলাকে তখন সুইচ অফ করে দেওয়ার
কাজ করে থাকে। ঘুমের পক্ষাঘাতের সময় আমাদের মস্তিষ্কের মোটর কটেক্স আমাদের
শরীরকে নাড়াচাড়া করার জন্য সংকেত পাঠাতে
থাকে কিন্তু আমাদের পেশীগুলো অবশ্য হয়ে কারণে তখন আমাদের মস্তিষ্ক কোন
প্রতিক্রিয়া সংকেত পেতে পারেনা। এর ফলে আমাদের মস্তিষ্ক কেন পেশি গুলো হাত পা
নাড়াচাড়া করতে পারে না এর কাল্পনিক ব্যাখ্যা তৈরি করে থাকে। এজন্যই একজন
মানুষের তখন মনে হয় যে তার বুকে কেউ বসে আছে অথবা শরীরকে চেপে ধরে আছে। এ ঘটনাটি
মানুষের কয়েক সেকেন্ড অথবা প্রায় দুই মিনিট এর মত স্থায়ী হতে পারে।
বাচ্চাদের ঘুমের মধ্যে ঝাকুনি কিসের লক্ষণ
আজকাল অনেক বাবা-মা উদ্বিগ্ন থাকেন তাদের সন্তানের ঘুম নিয়ে অর্থাৎ সন্তানের যখন
সঠিক ভাবে ঘুম হয় না ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে তারা মাঝ রাতে হঠাৎ করে জেগে ওঠে এবং
জোরে জোরে শব্দ করে কানতে থাকে। অনেক সময় দেখা যায় যে তারা আতঙ্কে কাঁপতে থাকে
আবার কখনো কখনো তারা এত ভয় পায় যে তারা রাতে ঘুমোতে ও ভয় পেয়ে থাকে আর এই
অবস্থাকে বলা হয় ঘুমের ভীতি। আবার হয়তো আমরা কেবল চোখটা বুজেছি তখনই একটা
ঝাকুনি হয় এবং মনে হয় যেন আমি পড়ে
যাচ্ছি এরকম সমস্যার অনেকের হয়ে থাকে প্রায় ৭০% মানুষের। ঘুমের মধ্যে এমন
ঝাকুনিকে বলা হয়ে থাকে হিপনিক জার্কস। অনেক সময় বাচ্চাদেরও ঘুমের মধ্যে এমন
ঝাকুনি হয়ে থাকে এগুলো হওয়ার কারণ হচ্ছে
- অনিদ্রা
- অনিয়মিত ভাবে ঘুমের সময় বা রুটিন
- অ্যালকোহল অথবা ক্যাফেইন গ্রহণ করা
- কোনো প্রকার ওষুধের সাথে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার কারণে।
এছাড়াও কিছু নির্দিষ্ট শারীরিক অবস্থা যেগুলো রেস্টলেস লেগ সিনড্রোম,অ্যাডিসন
ডিজিজ এবং বহুমুখী নিউরোপ্যাথি ইত্যাদি। বাচ্চাদের ঘুমের মধ্যে ঝাঁকুনি ক্ষতিকর
নয়। কিন্তু এটা বাচ্চাদের ঘুমের সমস্যা অর্থাৎ ব্যাঘাত সৃষ্টি করতে পারে এবং
বাচ্চারা যখন ঘুম থেকে জেগে উঠবে তখন তাদের ক্লান্তি অনুভূত হতে পারে। বাচ্চাদের
ঘুমের মধ্যে ঝাকুনি এর চিকিৎসার জন্য সাধারণত কোন ওষুধের দরকার হবে না। কিন্তু
যদি তাদের ঘন ঘন অথবা তীব্র হিপনিক জার্ক ঘটে থাকে তাহলে নিচে পদক্ষেপ গুলো গ্রহণ
করতে পারেন
- মানসিক চাপ অথবা উদ্বেগ কমানো যেতে পারে।
- প্রতিদিন নিয়ম মত ঘুম পাড়া এবং নিয়মিত ঘুমের রুটিন তৈরি করার মাধ্যমে সে অনুযায়ী ঘুম আসা।
- অ্যালকোহল অথবা ক্যাফেইন জাতীয় খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
- যদি কোন প্রকার ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বুঝতে পারেন তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
যদি বাচ্চাদের হিপনিক জার্ক সহ অন্যান্য শারীরিক সমস্যা বা লক্ষণ যেমন স্বপ্নের
মধ্যে হাঁটা বা স্বপ্নের মধ্যে কথা বলা এবং শরীরে টান ইত্যাদি সমস্যা গুলো হতে
দেখা যায় তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই ডাক্তারের সাথে কথা বলা উচিত। বাচ্চাদের ঘুমের
মধ্যে ঝাঁকনির বেশ কয়েকটি সাধারণ লক্ষণগুলো হলো
- রাতে ঘুমের মধ্যে বাচ্চা হঠাৎ করে ঝাঁকুনি দিবে এবংজেগে উঠবে।
- বাচ্চাদের দেহের যেকোনো অংশ যেমন মাথা পুরো শরীর হাত-পা ঝাঁকুনি দিবে।
- বাচ্চা ভয় পাবে আতঙ্কিত হবে অর্থাৎ বাচ্চার মুখের অভিব্যক্তি পরিবর্তিত হবে।
- বাচ্চার হৃদস্পন্দন অথবা শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার হার বেড়ে যাবে হঠাৎ করে।
- বাচ্চাদের ঘুমের মধ্যে এরকম ঝাঁকুনি যদি নিয়মিত হয় এবং সেটা তীব্র হতে দেখা যায় তাহলে আপনারা অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করবেন। তারা বাচ্চা স্বাস্থ্য পরীক্ষা করবে এবং প্রয়োজন হলে তারা চিকিৎসা গ্রহণ করার কথা বলবে।
ঘুমের মধ্যে কথা বলা কিসের লক্ষণ
আমাদের মধ্যে অনেকেই আছে যারা আমরা রাতে ঘুমের মধ্যে কথা বলি এটা একটি অদ্ভুত
ঘটনা বলে মনে করা হয়। কিন্তু এটা খুব একটা সাধারণ ঘটনা। ঘুমের মধ্যে কথা বলার
কারণ কি অথবা ঘুমের মধ্যে কথা বলা এটা কিসের লক্ষণ এবং এটা আমাদের জন্য কোন
ক্ষতিকারক কিনা এ বিষয়ে জেনে নিতে পারবেন আজকে আমার এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনারা।
তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক। ঘুমের মধ্যে কথা বলা হচ্ছে একটা সাধারন রকমের
প্যারাসোমনিয়া অথবা অস্বাভাবিক ঘুমের কার্যকলাপ বলে ব্যাখ্যা করেছেন
বিশেষজ্ঞরা।
বিশেষজ্ঞরা আরো বলেছেন যে, এরকম ঘটনা প্রতি তিনজনের মধ্যে দুজন মানুষের জীবনে
হয়ে থাকে তারা জীবনের কোন না কোন পর্যায়ে এসে ঘুমের মধ্যে কথা বলে থাকে। এ
ধরনের ঘটনা বেশিরভাগ অল্প বয়সীদের মধ্যে প্রায়ই ঘটতে দেখা যায় তবে এটা আমাদের
জন্য ক্ষতিকর নয়। ঘুমের মধ্যে মানুষ নানা রকমের কথা বলতেই পারে যেমন শব্দ করা বা
শব্দ করে পুরো কথোপকথন তারা চালিয়ে যেতে পারে। এ সময় তাদের মস্তিষ্কে কি ঘটনা
ঘটছে এটা বোঝা কঠিন হয়ে পড়ে। ঘুমের মধ্যে একজন মানুষ তার জীবন সাম্প্রতিক
ঘটনা
এবং আগে ঘটে যাওয়া কোন বিষয় নিয়ে তারা কথা বলতে পারে আবার কোন কথা না বলতে
পারে। স্বপ্নের সাথে সম্পর্ক থাকতে পারে আবার নাও থাকতে পারে। এ বিষয়টা একটু
জটিল এজন্য আরো অনেক গবেষণার প্রয়োজন। তবে এখন আমরা অনেকে মনে করে থাকি যে ঘুমের
অভাব হয়ে থাকলে অথবা ঘুমের ব্যাঘাত ঘটার কারণে মানুষ ঘুমের মধ্যে কথা বলতে পারে।
আবার ঘুমের জন্য যদি উপযুক্ত পরিবেশ না পায় তাহলেও এমনটা হতে পারে। যেমন ধরুন
আপনার ঘরটি যদি খুব গরম অথবা ঠান্ডা হয় এবং আপনার
ঘরে যদি খুব বেশি আলো দেওয়া থাকে তাহলে ও আপনার ঘুমের মধ্যে কথা বলার ঘটনাটি
ঘটতে পারে। আবার অন্যান্য কারণেও এমনটা ঘটতে পারে যেমন যাদের মানসিক সমস্যা আছে
তারা ঘুমের মধ্যে বেশি কথা বলে থাকে অনেকেই এ বিষয়টা ভাবেন এবং বলে থাকেন। আবার
যে সকল ব্যক্তি পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিস-অর্ডার বা পিটিএসডি তে ভুগছেন তাদের
ক্ষেত্রে প্রায়ই এমনটি ঘটতে দেখা যায় বলে মনে করা হয়ে থাকে। আবার আপনি যদি
ঘুমের মধ্যে হঠাৎ করে চিৎকার করে ওঠেন তাহলে আপনার কাছে যারা ঘুমাবে
তাদের ঘুম ভেঙ্গে যাবে তাদের ঠিকমতো ঘুম আসতে সমস্যা হবে।আরইএম স্লিপ বিহেভিয়ার
ডিস-অর্ডার ও ঘুমের মধ্যে আতঙ্ক মানুষকে ঘুমানোর সময়ে বাধ্য করে থাকে চিৎকার
করতে। ঘুমের আতঙ্ক যেটা রাতের আতঙ্ক নামে পরিচিত এটার লক্ষণ হচ্ছে ভয়ংকর চিৎকার
করা এবং লাথি মারা ইত্যাদি। ঘুমের মধ্যে কথা বলা আমাদের জন্য ক্ষতিকর বা কোন
সমস্যা নয় তবে এরকম সমস্যা যদি প্রতিনিয়ত হতে থাকে এবং আমাদের গ্রুপের সমস্যা
হয় তাহলে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞের সাথে কথা বলা উচিত।
হিপনিক জার্ক থেকে মুক্তির উপায়
হিপনিক জার্ক আসলে কোন জটিল রোগ নয়। এটা হচ্ছে একটি স্বাভাবিক ঝাঁকুনি। এরকম
ঝাকুনি প্রায় ৭০% মানুষের জীবনে ঘটতে দেখা যায় গবেষণা করে পাওয়া গেছে। মনে
করেন আপনি কেবল বিছানায় গেছেন এবং আপনার চোখ কেবল বুজে এসেছে তখনই মনে হয় যেন
আপনি হঠাৎ করে পড়ে যাচ্ছিলেন এবং তখনই আপনার শরীরে একটা ঝাঁকুনি দিয়ে থাকে একে
বলা হয়ে থাকে হিপনিক জার্কস। এটা যেমন প্রায় মানুষের জীবনে ঘটে থাকে কিন্তু
এটার থেকে মুক্তির উপায় আছে।
আপনারা কিভাবে এই হিপনিক জার্ক থেকে মুক্তি পাবেন এবং কিভাবে এটাকে প্রতিরোধ করা
যায় সে বিষয়ে আপনাদের কয়েকটি উপায় বলবো
ভালো ঘুমের অভ্যাস গড়ে তুলুনঃ আপনারা প্রতিদিন নিয়ম করে এবং তৈরি করার
মাধ্যমে ঘুমাতে পারেন এবং উন্নত করতে পারেন আপনার ঘুমকে আর এভাবে আপনি আপনার
জীবনে ঘটে থাকা হিপনিক জার্ক এর ঘটনা কমাতে পারবেন। এক্ষেত্রে আপনারা কিছু টিপস
অনুসরণ করতে পারেন। যেমন ধরুন
- আপনারা প্রতিদিন একই সময়ে বিছানায় ঘুমাতে যাবেন এবং প্রতিদিন একই সময়ে ঘুম থেকে উঠে পড়বেন।
- আপনাদের ঘরের তাপমাত্রা রাখবেন কম থেকে মধ্যে পর্যায়ে।
- আপনার শোবার ঘর ঘুমোতে যাওয়ার আগে শান্ত এবং অন্ধকার রাখবেন প্রয়োজনে আপনারা জানাল ব্যবহার করতে পারেন।
- আপনারা ঘুমোতে যাওয়ার কমপক্ষে এক ঘন্টা আগে থেকে ইলেকট্রনিক জিনিস যেমন টিভি মোবাইল এবং কম্পিউটার এগুলো ব্যবহার বন্ধ করবেন।
- আপনারা প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর জন্যে একটা নির্দিষ্ট রুটিন অনুসরণ করে রাতে ঘুমাতে যাবেন।
আপনার মানসিক চাপ কমানঃ আপনি যদি মানসিক চাপ কমান তাহলে এটা আপনার ঝাকুনি
কমাতে সাহায্য করবে। আপনি সেই সকল শিথিলকরন কৌশল গুলো প্রয়োগ করতে পারেন যাতে
করে আপনার মানসিক চাপ উপশম হয়। এজন্য আপনারা গভীর শ্বাস নিতে পারেন এবং ধ্যান
করতে পারেন এগুলো আপনার মানসিক চাপ কমাতে অনেকটাই সহায়তা করবে। আপনি যদি ইসলাম
ধর্মের হন তাহলে ঘুমোতে যাওয়ার আগে আপনি নামাজ অথবা নফল নামাজ পড়তে পারেন
তাহলে
আপনার মানসিক চাপ কমবে। আপনার ঘুমোতে যাওয়ার আগের রুটিনকে রাখতে পারেন শান্ত এবং
আপনি বই পড়তে পারেন। আর যদি এ সকল কিছু করার পরে আপনার মানসিক চাপ এবং
চিন্তাভাবনা না কমে এবং এটা যদি আপনার জীবনযাত্রার মান কে হস্তক্ষেপ করে থাকে
তাহলে আপনি অবশ্যই একজন ডাক্তারের সাথে কথা বলতে পারেন।
আপনি দৈনিক ব্যায়াম করতে পারেনঃ আপনি যদি প্রতিদিন নিয়ম করে ব্যায়াম
করেন তাহলে এটা আপনার হিপনিক জার্ক থেকে মুক্তির উপায় হবে। আপনারা প্রতিদিন
আরামদায়ক ঘুম এর জন্য ব্যায়াম করতে পারেন এটা করার মাধ্যমে আপনাদের স্ট্রেস
কমবে। আপনারা যদি শুধু রাতে ব্যায়াম করতে চান তাহলে আপনারা অবশ্যই কম বা মাঝারি
ব্যায়ামগুলো যেমন হাটা অথবা যোগ ব্যায়াম করতে পারেন। আপনি যখন ঘুমোতে যাবেন তার
অন্তত ৯০ মিনিট আগে আপনার এই সমস্ত ব্যায়াম শেষ করতে হবে। যাতে করে আপনাদের
হৃদস্পন্দন মন্থর হয় এবং আপনি সহজেই হিপনিক জার্ক বা ঝাকুনি রোধ করতে পারেন।
ক্যাফেইন জাতীয় খাবার খাওয়া কমিয়ে দিনঃ ক্যাফেইন দিনের বেলায় উপকারী
শক্তি বর্ধক প্রভাব প্রদান করে থাকে কিন্তু এটা খুব বেশি বার এবং বেশি পরিমাণে
খাওয়া উচিত নয়। এর কারণ এটা মাত্রা অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়ার ফলে আমাদের
আরামদায়ক ঘুমের হস্তক্ষেপ বা ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। আপনারা যদি হিপনিক জার্ক এর
সম্মুখীন হন এবং আপনাদের যদি ঘুমাতে সমস্যা হয়ে থাকে তাহলে আপনারা অবশ্যই এই
ক্যাফিন কম পরিমানে খাবেন। প্রতিদিন আপনারা ৪০০ মিলি গ্রাম বেশি খাবেন না এবং
ঘুমোতে যাওয়ার অন্তত ছয় ঘন্টা আগে আপনারা কফি পান করবেন।
নিকোটিন ও অ্যালকোহল এড়িয়ে চলুনঃ নিকোটিন হচ্ছে একটা উদ্দীপক যেটা
আপনাদের মস্তিষ্কের রাতে ঘুমানোর ক্ষমতাকে সহজেই নষ্ট করে দিতে পারে। আপনারা যদি
একবার ঘুমিয়ে পড়েন তাহলে এটি আপনাদের ঘুমের গুণগতমান এর ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।
অপরদিকে অ্যালকোহল হচ্ছে একটি প্রশান্তি দায়ক এটা আপনাদের ঘুমের স্থাপত্যকে
ব্যাঘাত করে থাকে। যেটা আমাদের ঘুমের বঞ্চনার দিকে পরিচালিত করে থাকে এবং
পরবর্তীতে এটা আমাদের হিপনিক জার্কস এর ঝুঁকি
বাড়াতে সাহায্য করে। এজন্য আমাদেরকে সব সময় সচেতন থাকার চেষ্টা করতে হবে। এই
টিপসগুলো মানার পরেও যদি আপনার মাঝে মধ্যেই হিপনিক জার্কস এর সমস্যা ঘটে থাকে
তাহলে অবশ্যই আপনি ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন। আশা করব আপনারা উপরের এই আলোচনা
পড়ার মাধ্যমে হিপনিক জার্কস থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে এবং এটা প্রতিরোধ করার
ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য সঠিকভাবে বুঝতে পেরেছেন।
ঘুমের মধ্যে হাত পা অবশ হয় কেন
অনেক সময় দেখা যায় যে ঘুমের মধ্যে
হাত পা
অবশ হয়ে যায়। আবার অনেক সময় রাতে ঘুম থেকে উঠতেই হাত এবং পায়ের আঙ্গুল অবশ
হয়ে যায়। এটার জন্য অনেকে মনে করেন যে অনেকক্ষণ ধরে রাতে একপাশে শোয়ার কারণে
দেহের অতিরিক্ত চাপ পড়ার কারণে এমনটা হতে পারে। কিন্তু যদিও এই ধারণাটা পুরোপুরি
ভুল নয়। কিন্তু চিকিৎসকরা বলেছেন যে, অনেকক্ষণ ধরে আমরা একভাবে শুয়ে থাকলে
আমাদের রক্ত সঞ্চালনে সমস্যা হয় আর তখন আমাদের হাত বা পায়ের স্নায়ু
গুলো কাজ না ও করতে পারে। তবে এ কারণ ছাড়াও আরো অনেকগুলো কারণ আছে হাত-পা অবশ
হওয়ার বা অসাড় হয়ে যাওয়ার। নিচে এর কারণগুলো আলোচনা করা হলো
শোয়ার ভঙ্গিঃ অনেক সময় আমাদের শোয়ার দোষেও এমনটা হতে পারে অর্থাৎ
হাত-পা অবশ হতে পারে। বিশেষ করে আমরা যখন এক পাশ হয়ে অনেক সময় ধরে ঘুমিয়ে থাকি
তখন আমাদের গোটা শরীরের ভার এক দিকে পড়ে আর তখন অনেকেরই হাত পা অবশ হয়ে যেতে
পারে। ঘুম থেকে ওঠার পরেও আমাদের অনেকের আঙ্গুল মোরাতে অসুবিধা হতে দেখা যায়।
ভিটামিন বি ১২ এর অভাব হলেঃ আমাদের শরীরে অনেক সময় নানা রকম ভিটামিনের
অভাব হলে হাত পা অবশ বা অসাড় হতে দেখা যায়। এটাকে চিকিৎসা পরিভাষায় বলা হয়ে
থাকে পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথি। আমরা যখন ঘুম থেকে উঠে তখনও এজন্য আমাদের হাত পায়ের
আঙ্গুল গুলোর স্নায়ু সঠিকভাবে কাজ করতে চাইনা।
স্ট্রোকঃ হাত পায়ের আঙ্গুল অবশ হয়ে যাওয়া কিন্তু আবার স্ট্রোকের লক্ষণ
হতে পারে। কারণ হচ্ছে স্ট্রোক হওয়া মাত্র কোনো ব্যক্তির মস্তিষ্কের রক্ত সঞ্চালন
এর ব্যাঘাত ঘটে থাকে। আর এজন্যই আমাদের মস্তিষ্কের স্নায়ু আমাদের শরীরের বিভিন্ন
অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে তখন সঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারে না। তবে সব ক্ষেত্রে এমনটা হবে
তার কোন মানে নেই।
রক্ত সঞ্চালনে সমস্যাঃ হঠাৎ করে আমাদের হাত পা ঠান্ডা হয়ে যায় রক্ত
সঞ্চালন এর ব্যাঘাত ঘটলে। চিকিৎসা পরিভাষায় যেটা পরিচিত রেনড্স ডিজ়িজ় নামে।
এক্ষেত্রে শুধু যে রক্ত সঞ্চালন ব্যাঘাত হয় তা নয় আমাদের ত্বকের রং ও ফ্যাকাশে
হয়ে যায়।
ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথিঃ অনেকদিন ধরে যাদের শরীরে ডায়াবেটিস আছে তাদের
অনেকেরই এরকম সমস্যা হতে দেখা যায় বা দেখা দিতে পারে। তবে রক্তে শর্করার মাত্রা
অনিয়ন্ত্রিত অবস্থায় থাকার কারণে হাত ও পায়ের স্নায়ু গুলো ক্ষতিগ্রস্ত হতে
পারে। আপনারা এ বিষয়টি বাইরে থেকে বুঝতে না পারলেও দেখা গেল যে আপনারা কোন কিছু
যদি ধরতে চান তাহলে হাত থেকে সেটা পরে যায় আবার অনেক সময় রোগীর যদি আঘাত লাগে
সেটাও সে বুঝতে পারে না।
লেখকের মন্তব্য
প্রিয় পাঠক ম্যাক্সিমো ইনফো এই পোস্টটিতে আপনাদের জন্য বাচ্চাদের ঘুমের মধ্যে
ঝাকুনি কিসের লক্ষণ এ বিষয়ে এবং এটা থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে অনেক তথ্য
দিয়েছে যেগুলা জানার মাধ্যমে আপনারা অনেক উপকৃত হবেন হবেন। বাচ্চাদের ঘুমের
মধ্যে হঠাৎ করে জেগে ওঠা বা চমকে ওঠা বা শরীর কেঁপে ওঠা এরকম অবস্থা কে বলা হয়ে
থাকে হিপনিক জার্ক। আর এটা থেকে মুক্তির উপায় আছে এজন্য আপনাদের মানসিক চাপ
কমাতে হবে, ব্যায়াম করতে হবে এবং অ্যালকোহল
জাতীয় খাবার খাওয়া বন্ধ করতে হবে। এছাড়াও আরো অনেক বিষয়ে এই পোস্টটিতে বলা
হয়েছে আপনাদের ঘুমের মধ্যে বোবা ধরে কেন এবং ঘুমের মধ্যে হাত-পা অবশ হয়ে
যাওয়ার কারণ কি ইত্যাদি বিষয়ে আপনারা এই পোস্টটি পড়ে জানতে পারবেন আশা করি। আর
আপনাদের যদি এই পোস্টটি পড়ে ভালো লাগে তাহলে আপনারা অবশ্যই এই পোস্টটি আপনাদের
পরিচিতদের মাঝে শেয়ার করে দিবেন যাতে করে তারা পড়ার সুযোগ পায়।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url