প্রাকৃতিক পরিবেশের উপর জলবায়ুর প্রভাব এবং আমাদের করণীয় আলোচনা
আসসালামু আলাইকুম, আপনারা হয়তো আগে অনেকেই প্রাকৃতিক পরিবেশের উপর জলবায়ু
প্রভাব এবং আমাদের করণীয় এবং বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব
সম্পর্কে অনেক তথ্য খোঁজাখুঁজি করেছেন জানার জন্য কিন্তু জানতে পারেননি। যারা
পারেননি তারা আজকে আমার এ পোষ্টের মাধ্যমে জেনে নিন এ সকল বিষয়ে এজন্য শেষ
পর্যন্ত পড়ুন।
আজকে আপনারা আমার এই পোস্টের মাধ্যমে জানতে পারবেন জলবায়ু পরিবর্তনের কারণ এর
প্রভাব অর্থাৎ প্রাকৃতিক পরিবেশের উপর জলবায়ু প্রভাব এবং আমাদের করণীয় এছাড়াও
বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব, কৃষিতে জলবায়ু পরিবর্তনের
প্রভাব, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এছাড়াও আরো অনেক বিষয়
আছে যেগুলো আপনারা পড়ার মাধ্যমে সঠিক তথ্য জানতে পারবেন। আর এ সকল বিষয়ে জানার
জন্য আপনাদের শেষ পর্যন্ত পড়ার অনুরোধ করছি।
ভূমিকা
জলবায়ু পরিবর্তনের যেমন অনেকগুলো প্রাকৃতিক কারণ আছে তেমন আছে মানব সৃষ্ট কারণ।
আর এখন মানবসৃষ্ট কারণে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণগুলোকে মুখ্য ধরা হয়। মানুষ এখন
নানা ভাবে আমাদের জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটিয়ে থাকছে। মানুষ এখন গাছপালা এবং বন
ধ্বংস করছে এর ফলে আমাদের পৃথিবীপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে
কার্বন-ডাই-অক্সাইড এর পরিমাণ বৃদ্ধি পাছে গ্রিনহাউস গ্যাসের পরিমাণ বৃদ্ধি
পাচ্ছে এছাড়াও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে বরফ গলা শুরু হচ্ছে
মেরু অঞ্চলের হিমবাহে হিমালয়ের। আর এগুলোর প্রভাব পড়ছে আমাদের প্রাকৃতিক
পরিবেশের উপর কৃষি এবং অর্থনৈতিক পরিবেশের ওপর। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে
তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে এর ফলে অনেক ভূমি
সমুদ্রপৃষ্ঠে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এছাড়াও তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে অনেক পশুপাখি
এবং জীবজন্তু মৎস্য প্রাণী ইত্যাদির সমস্যা হচ্ছে তারা তাদের বিচরণে এবং প্রজননে
সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। মানুষ নানা রকম স্বাস্থ্য সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে
জলবায়ু
পরিবর্তনের ফলে খাদ্য অভাব দেখা দিচ্ছে সুপ্রিয় পানির অভাব এবং প্রাকৃতিক
দুর্যোগ যেমন বন্যা খরা সাইক্লোন টর্নেডো আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত ইত্যাদি বেশি
পরিমাণে হচ্ছে আর এর প্রভাব পড়ছে পরিবেশের ওপর তথা সকল ক্ষেত্রে। আর এজন্য
আমাদের বেশি বেশি করে গাছপালা লাগাতে হবে যাতে করে তাপমাত্রা বৃদ্ধি না পায়
পরিবেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা থাকতে হবে
জনমত জনসচেতনতা তৈরি করতে হবে ইত্যাদি আরও নানা সচেতনমূলক কর্মকাণ্ড।
কৃষিতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব
জলবায়ু পরিবর্তন এর ফলে কিসের ওপর এর ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এর ফলে
বিশ্বব্যাপী খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়ছে এবং এই কাজটি কৃষি
কার্যক্রমের জন্য কঠিন। বর্তমানে ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা এবং আবহাওয়ার পরিবর্তন
এর কারণে প্রায়ই খরা বন্যা তাপ প্রবাহ পানির অভাব এর কারণে ফসলের উৎপাদন কমে
যাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তন এর এই প্রভাবগুলো অনেক অঞ্চলের ফসল নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি
বাড়িয়ে দিচ্ছে। যার ফলে বিশ্বে খাদ্য সরবরাহ করা কঠিন হয়ে পড়ছে
আর এজন্য বিশ্বে খাদ্যের অভাব দেখা দিচ্ছে। অনেক নতুন নতুন কি একটু পতঙ্গ ও
উদ্ভিদ রোগ ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়ছে নতুন নতুন অঞ্চলে এর ফলেও ফসল উৎপাদন
ব্যাহত হচ্ছে। বিশ্বে গবাদি পশুর ও এই সমস্যাগুলো দেখা দিচ্ছে এবং এদের প্রভাবিত
হওয়ার আশঙ্কা আছে। পশু খাদ্যের অভাব দেখা দিবে এবং পরজীবী এবং ভেক্টর বাহিত
রোগের বিস্তার অত্যাধিক পরিমাণে তাপের এবং চাপের কারণে। মানুষের অনেক কার্যকলাপের
জন্য বায়ুমন্ডলে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে
আর এর প্রভাব পড়ছে কৃষির ওপর। উপকূল অঞ্চলে কৃষি জমি সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতার
কারণে হারিয়ে যাচ্ছে। অপরদিকে হিমবাহ গলে যাওয়ার ফলে জমিতে পানি সেচের জন্য
পানির অভাব দেখা দিতে পারে। এছাড়াও মাটির ক্ষয় এবং মাটির উর্বরতার পরিবর্তন
হচ্ছে মাটির ক্ষয় হচ্ছে এবং মাটির উর্বরতার শক্তি কমে যাচ্ছে এর ফলে শস্য উৎপাদন
করা কঠিন হয়ে পড়ছে। জলবায়ু উষ্ণায়নের সাথে সালমোনেলা তৈরি করার ছত্রাকের মতো
ব্যাকটেরিয়া থেকে খাদ্য নিরাপত্তায় নেতিবাচক প্রভাব
বৃদ্ধি পাচ্ছে যার ফলে খরচ ও খাদ্যের ঘাটতি বাড়ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে
ফসলের উৎপাদনের ওপর এর ব্যাপক প্রভাব পড়ছে তবে এ বিষয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে।
বিশেষ করে আমাদের চারটি প্রধান ফসল যেমন ভুট্টা, ধান, গম এবং সয়াবিন এগুলোর ওপর
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে আলোচনা গবেষণা হচ্ছে। আমাদের বাংলাদেশে এখন
প্রতিনিয়ত নানা ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দিচ্ছে আর এর প্রভাব পড়ছে কৃষি
খাতের ওপর। জলবায়ু বলতে বোঝায় কোন স্থানের ৩০ বছরের
বেশি সময়ের আবহাওয়া অর্থাৎ তাপ তাপ বৃষ্টিপাত এবং বায়ু ইত্যাদির গড়কে বোঝানো
হয়। গত শতাব্দীতে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ বেড়েছে ২৩ শতাংশ এবং নাইট্রাস
অক্সাইড এর পরিমাণ বেড়েছে ১৯ শতাংশ আর মিথেনের পরিমাণ বেড়েছে শতভাগ। জলবায়ু
পরিবর্তন তুষারপাত বরফ গলা সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি ইত্যাদি জলবায়ু
সংশ্লিষ্ট দুর্যোগ গুলো সৃষ্টির কারণ হিসেবে মানুষকে দায়ী করা হচ্ছে। আর
জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব পড়ছে আমাদের বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে আর
এর প্রভাবে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আর আমাদের বাংলাদেশে এই
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কৃষি ক্ষেত্রে সবচাইতে বেশি। বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড়,
সাইক্লোন, অতিবৃষ্টি-অনাবৃষ্টি, লবণাক্ততা এবং নদী ভাঙ্গন ইত্যাদি দুর্যোগের কবলে
পড়ছে আমাদের বাংলাদেশ। বর্তমান সময়ে এখন গ্রীষ্মকালে প্রচন্ড তা প্রবাহ এবং
শীতকালে তীব্র শীত অথবা মুষলধারে বৃষ্টি অনাকাঙ্ক্ষিত। বর্ষাকালে কম বৃষ্টি অকালে
বন্যা শিলাবৃষ্টি ইত্যাদি আমাদের দেশের আবহাওয়া পরিবর্তন এর সরাসরি ফল।
এরূপ জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে আমাদের দেশের কৃষি জমির উর্বরতা দিন দিন কমে
যাচ্ছে এর ফলে ফসল উৎপাদনে সমস্যা হচ্ছে এবং ফসল উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে। ২০২১ ২০২২
অর্থবছরের তথ্য অনুযায়ী মোট দেশ উৎপাদনের ক্ষেত্রে কৃষি খাতের অবদান হচ্ছে
প্রায় ১১.৫০% এছাড়াও শ্রম ও শক্তির প্রায় ৪১ শতাংশ কৃষি খাতের সাথে নিয়োজিত
আছে। আমাদের দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ প্রত্যক্ষ অথবা
পরোক্ষভাবে কৃষির ওপর নির্ভরশীল কারণ আমাদের দেশ কৃষি
প্রধান দেশ। দীর্ঘমেয়াদি বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন এর দুর্যোগে সবচাইতে ঝুঁকিতে
থাকা দেশগুলোর মধ্যে আমাদের বাংলাদেশের অবস্থান হচ্ছে সপ্তম পরিবর্তন যদি কমানো
না যায় তাহলে বিশ্ববাসীকে খুব তাড়াতাড়ি খারাপ পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হবে।
অতিরিক্ত হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং সামাজিক সুরক্ষার ও পর্যাপ্ততা আমাদের
বাংলাদেশকে আরো ঝুঁকির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। উন্নত দেশগুলো ৮৬ শতাংশ কার্বন নিঃসরণ
এর জন্য দায়ী আর আমাদের বাংলাদেশ এর মত দেশগুলো মাত্র ১৪
শতাংশ কার্বন নিঃসরণ করে থাকে। তাপমাত্রা লবণাক্ত তাই এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা
বৃদ্ধির কারণে আগামী দিনে সবচাইতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত খাত গুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে
কৃষি। প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০৫০ সালের মধ্যে শুধু জলবায়ু পরিবর্তন জনিত কারণে
বাংলাদেশ হারাবে জিডিপির দুই শতাংশ। আমাদের বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রাণশক্তি
হচ্ছে কৃষি। আর জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এর ওপর ব্যাপক খারাপ প্রভাব পড়ছে। অসময়ে
বন্যা এর কারনে নানা উপকূলীয় অঞ্চলের কোটি কোটি
মানুষ নানা বিপদের মুখে পড়ছে এবং তাদের খাদ্য অভাব দেখা দিচ্ছে। সমুদ্রপৃষ্ঠের
উচ্চতা ৬৭ সেন্টিমিটার বাড়লে সুন্দরবন পানিতে তলিয়ে যাওয়া সম্ভাবনা আছে। ১৯৯১
সালে রাজশাহীর উচ্চ বরেন্দ্র এলাকা গুলোতে পানির স্তর ছিল ৪৮ ফুট। ২০০০ এবং ২০০৭
সালে সেটা নেমে গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৬২ এবং ৯৩.৩৪ ফুট এ। বর্তমানে এর স্তর আরো নিচে
নেমে যাচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিষের গড় তাপমাত্রা যদি এক থেকে দুই ডিগ্রি
সেলসিয়াস বৃদ্ধি পায় তাহলে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের ১১ থেকে ১৫ শতাংশ
অনাআসে পানিতে তলিয়ে যাবে। এর ফলে কৃষি জমির পরিমাণ কমবে এবং খাদ্যের অভাব দেখা
দিবে। অপরদিকে আমাদের বাংলাদেশের গড় বৃষ্টিপাত আগের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে এর
ফলে বন্যার সৃষ্টি হচ্ছে এবং কৃষি জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। বর্তমানে প্রতি বছর
বাংলাদেশের প্রায় ১৫ লাখ হেক্টর জমি বন্যা কবলিত। পাহাড়ি এলাকায় অতি বর্ষণের
কারণে উঁচু এলাকার উপরিভাগের উর্বর মাটি ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে এবং এর ফলে ওইসব
এলাকার মাটি ক্রমান্বয়ে উর্বরতা শক্তি হারাচ্ছে হলে ধীরে ধীরে
ফসল উৎপাদন করার অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। ফসল উৎপাদন করার আরেকটি প্রধান অন্তরায়
হচ্ছে খরা। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দিন দিন খরা প্রকট আকার ধারণ করছে বিভিন্ন
এলাকায় দেখা দিচ্ছে তীব্র করা এ জন্য তাদের ফসল উৎপাদন করা কঠিন হয়ে পড়ছে
পানির অভাবে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আমাদের দেশের উত্তর পশ্চিমা অঞ্চলে খরা দিন
দিন বেড়ে চলেছে। এর ফলে আউশ, আমন এবং বোরো ধান, পাট,তেল, আলু, আখ এবং অনেক
শীতকালীন সবজি চাষাবাদ করা কঠিন হয়ে
পড়ছে এবং অনেক ক্ষতি হচ্ছে। কৃষি ক্ষেত্রে এর উৎপাদনশীলতা নির্ভর করে তাপমাত্রা
বৃষ্টিপাত সূর্যের বিকিরণ রৌদ্রের সময়কাল ও জলবায়ু সম্পৃক্ত কারণ গুলোর উপরে।
গ্রীষ্মকালে অতি তাপ এবং শীতকালে অতি শীতের জন্য ফসল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ফসল
উৎপাদনের জন্য তাপমাত্রা এর প্রভাব অনেক গুরুত্বপূর্ণ আর এর সমস্যা হলে এর ফলে
ফসলের নানারকম রোগ এবং গাছ দুর্বল হয়ে পড়ে চারা দুর্বল হয়ে পড়ে এর ফলে তাদের
বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। হঠাৎ করে যদি অনেক সইতো প্রবাহ হয় তাহলে সরিষা, মসুর এবং
ছোলা
ইত্যাদির ফসলের অনেক ক্ষতি হয় এবং এ সকল ফসলের পরাগায়নেও ব্যাহত হয়। জলবায়ু
পরিবর্তন এর কারণে নদী ভাঙ্গন বাড়ছে আর এর প্রভাব পড়ছে কৃষি জমির উপর। এর ফলে
অর্থাৎ নদী ভাঙ্গনের ফলে কৃষি জমির পরিমাণ দিন দিন কমে যাচ্ছে। কৃষি জমে কমে
যাওয়ার কারণে কৃষি উৎপাদন কম হচ্ছে এবং এর ফলে দেশে খাদ্যের অভাব দেখা দিবে। এ
সকল নানা সমস্যার কারণে অর্থাৎ জলবায়ু পরিবর্তনের এই সকল সমস্যার কারণে আমাদের
কৃষির অনেক ক্ষতি হচ্ছে আর এর প্রভাব পড়ছে আমাদের জনজীবনের উপরে।
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ইতিবাচক প্রভাব
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে অনেক নেতিবাচক প্রভাব লক্ষ্য করা যায় যেমন অতিবৃষ্টি,
অনাবৃষ্টি, বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড় ইত্যাদি। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ও কিছু
ইতিবাচক প্রভাব লক্ষ্য করা যায় সেগুলো হচ্ছে
পলি পড়ে নতুন ভূমি গঠনঃসম্প্রতি বাংলাদেশ সরকারের প্রাকৃতিক সম্পদ বিষয়ক
গবেষণা সংস্থা জানাচ্ছে যে হিমালয় থেকে প্রতিবছর ১০০ টন পলি এসে সমুদ্রে পড়ে।
আর এই পলি সমুদ্রের জোয়ার ভাটায় এসে উপকূলে জমা হয়। অপরদিকে হিমালয় কেন্দ্রিক
নদী গুলো থেকে যে পলি আমাদের বাংলাদেশে আসে সেটার তিনভাগের এক ভাগ আমাদের দেশের
ভেতরে থাকা নদী এবং নদী তীরে জড়ো হয়। পলির এক অংশ খুলনা, সাতক্ষীরা, যশোর এবং
নোয়াখালী এলাকার উপকূলীয়
নদী অপরদিকে বাকি অংশ সমুদ্র হয়ে ইন্দোনেশিয়ার দিকে চলে যায় আর এভাবেই নতুন
ভূমি জেগে ওঠে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা যদি বেড়ে যায় তাহলে দেশের ভেতর দিয়ে বয়ে
যাওয়া নদী গুলোতে পানির পরিমাণ বাড়বে এবং সেই সাথে পলির পরিমাণ বাড়বে।
গবেষণায় দেখা গেছে যে বাংলাদেশের ভূখণ্ডের মেঘনা নদী হচ্ছে পৃথিবীর একমাত্র
সক্রিয় বদ্বীপ আর এখানে এখনো ভূমি গঠিত হচ্ছে। অপরদিকে খুলনা সাতক্ষীরা এবং
বাগেরহাট জেলার সীমানায় অবস্থিত নদী যেমন পশুর এবং বলেশ্বর নদীর
গুলো দিয়ে এখনো অনেক পরিমাণে পলি আসে এবং বাংলাদেশের ভূখণ্ডে জড়ো হচ্ছে।
নোয়াখালী উপকূলে ভূমি জেগে উঠেছে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে এর ফলে দেশের বেশিরভাগ
উপকূল এবং নদীর তীরবর্তী এলাকা গুলো ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা নেই। বন্যার ফলে কৃষি
জমিতে নতুন পলিমাটি পড়ে এবং এতে করে ফসল উৎপাদন ভালো হয়।
সীমিত প্রাকৃতিক সম্পদ বৃদ্ধিঃজলবায়ু পরিবর্তনের ফলে একদিকে যেমন কমে
যাবে প্রাকৃতিক সম্পদ অন্যদিকে চিরতরে হারিয়ে যাবে অনেক প্রাকৃতিক সম্পদ অপরদিকে
পরিবেশের বিরূপ অবস্থা অথবা পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে টিকে থাকবে সীমিত তথা অল্প
পরিমাণে প্রাকৃতিক সম্পদ।
জীবজন্তুর সীমিত বৃদ্ধিঃসমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ার ফলে সুন্দরবনে থাকা
কুমিরের সংখ্যা বাড়বে এছাড়াও বাড়বে শুকর এর সংখ্যা। এছাড়াও মাটির তলদেশে
বাসকারী প্রাণ সম্পদ এবং চরবাসি কীটপতঙ্গ গুলো বাড়বে।
উদ্ভিদ প্রজাতির সীমিত বৃদ্ধিঃখুলনার সুন্দরবনের সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা
বাড়ার কারণে ধীরে ধীরে গু ভাগের পরিমাণ কমে যাবে মাটি ধষে বা ক্ষয় হয়ে জমি বা
বনের এলাকার কমে যাবে এবং পানির এলাকা দিন দিন বৃদ্ধি পাবে। এর ফলে লবণাক্ত নতুন
চরে গরান, গেওয়া, গর্জন এবং কিছু পরিমাণে পশুর ও ধুন্দল গাছের সংখ্যা বাড়বে।
এছাড়াও ও আরো বাড়বে কাঁকড়া,ঝানা এবং গুড়াল গাছ এবং এতে করে জ্বালানি কাঠের
পরিমাণও বেড়ে যাবে।
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে যেমন আমাদের দেশের কৃষি ক্ষেত্রে এর ব্যাপক প্রভাব পড়ছে
এবং কৃষি ক্ষেত্রে ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে তেমনি করে জলবায়ু পরিবর্তন এর প্রভাব ও
বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও পড়ছে বিরূপ ভাবে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সারা বিশ্বে
অর্থনৈতিক ক্ষতির কারণ দাঁড়িয়েছে বিরাট আকারে। সম্প্রতি এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক
(ADB) জানিয়েছে যে জলবায়ু পরিবর্তন জনিত কারণের জন্য বাংলাদেশের মোট দেশ
উৎপাদনের জিডিপি ৮ থেকে ৯ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে ধরা হচ্ছে অতিরিক্ত পরিমাণে কার্বন
নিঃসরণকে আর এজন্য কয়েক শতক ধরে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশ্বের গুটি
কয়েক দেশ তথা শিল্পোন্নত রাষ্ট্রগুলো বেশি পরিমাণে কার্বন নিঃসরণ এর জন্য দায়ী
অপরদিকে এর প্রভাব পড়ছে বিশ্বের প্রত্যেকটি দেশে। ২০১৫ সালের প্যারিস জলবায়ু
চুক্তিতে কার্বন নিঃসরণের হার কমানোর কথা এবং জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারের পরিমাণ
কমানোর কথা থাকলেও এ বিষয়ে এখনো কোন দেশই এই বিষয়গুলোকে গুরুত্বের
সাথে দেখছে না। এর ফলে দরিদ্র এবং উন্নয়নশীল দেশগুলো মারাত্মকভাবে অর্থনৈতিক
ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। আর এর মধ্যে অর্থাৎ জলবায়ু পরিবর্তন এর সবচেয়ে উচ্চ
ঝুঁকিতে আছে বাংলাদেশ। আমাদের দেশে জনসংখ্যা বেশি এবং কম আয়তন এছাড়াও
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এটা কম উচ্চতায় হওয়ার জন্য আমাদের দেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগের
ঝুঁকি অন্যান্য সকল দেশের চাইতে অনেক বেশি। তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার ফলে ধানের
উৎপাদন কম হচ্ছে ধান চাষ করার জন্য প্রয়োজন ১৮ থেকে ৩৫ ডিগ্রি
সেলসিয়াস তাপমাত্রার। শীতের সময় তাপমাত্রা অনেক কমে যায় এবং গরমের সময়
তাপমাত্রা অনেক বেড়ে যায় এতে করে ধান চাষ করা কঠিন হয়ে পড়ছে ধানের পরাগায়নে
অনেক সমস্যা দেখা দিচ্ছে এতে করে ধান উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির
কারণে মরু অঞ্চলে বড় গলা শুরু হচ্ছে এবং সমুদ্র স্তরের উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে কৃষি জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে এবং মাটির লবণাক্ততার পরিমাণ
বৃদ্ধি পাচ্ছে এতে করে ফসল উৎপাদন করা কঠিন হয়ে
পড়ছে। গবেষকদের মতে এভাবে যদি কৃষি জমিতে লবণাক্ত তার পরিমাণ বাড়ে তাহলে কৃষি
আয় বছরে ২১ শতাংশ কমে যাবে এছাড়াও উপকূলীয় অঞ্চলের কৃষি জমি হুমকির মুখে পড়বে
প্রায় ৪০ শতাংশ। এতে করে উপকূলীয় অঞ্চলের প্রায় ২ লাখ ৪০ হাজার কৃষকের
বাস্তুচ্যুত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। শুধু ধান নয় এতে করে দেশের অন্যান্য অর্থকরী
ফসল পাট, গম, ভুট্টা, মটর এবং ছোলা সহ এ সকল ফসলের উৎপাদন কমে যাবে। এছাড়াও এর
প্রধান কারণ হলো শিলা বৃষ্টি, ঝড় ও অসময়ে বন্যা ইত্যাদি এতে
করে মানুষের মাথাপিছু আয় কমে যাচ্ছে। অতিরিক্ত পরিমাণে সইত প্রবাহ থাকায় রবি
মৌসুমে ফসল উৎপাদন এ অনেক সমস্যা হচ্ছে এবং ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। আমাদের
বাংলাদেশের অর্থনীতির আরেকটি বড় খাত হচ্ছে মৎস্য খাত। তথ্য অনুযায়ী, আমাদের
বাংলাদেশে প্রায় এক লাখ ৪৭ হাজার হেক্টর পুকুর ৫০০০৪৮৮ হেক্টর বাওর এছাড়াও ১১
কোটি হেক্টর চিংড়ি ঘেরে মাছ চাষ করা হয়ে থাকে। এছাড়াও আছে ৪৪ লাখ ৭০ হাজার
হেক্টর মুক্ত জলাশয় যেমন নদী, হাওর, বিল এবং খাল
এগুলোতে প্রায় ২৫০ প্রজাতির মাছ বাস করে থাকে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে এবং
জলবায়ু পরিবর্তনের বিভিন্ন কারণের জন্য মৎস্য সম্পদ উৎপাদন হুমকির মুখে পড়ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের যদি বেশি হয় তাহলে পানি গরম
হয়ে পানিতে অক্সিজেনের অভাব দেখা দিবে এতে করে মাছের পোনা উৎপাদন অনেকটাই কমে
যাবে। আর এর প্রভাবে মৎস্য খাত থেকে আয় কমে যাচ্ছে এছাড়াও এর প্রভাব পড়ছে যারা
মসজীবী তাদের ওপর। এতে করে তাদের জীবিকা নির্বাহ
করা কঠিন হয়ে পড়ছে আয় কমে যাচ্ছে। এছাড়াও জলবায়ু পরিবর্তন এর কারণে ঘন ঘন
বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দিচ্ছে যার প্রভাবে অনেক মানুষ তাদের ঘরবাড়ি
হারিয়ে ফেলছে আর এতে করে তাদের পুনর্বাসন করার জন্য সরকারকে অনেক টাকা ব্যয়
করতে হচ্ছে। এতে করে এ সকল বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে ও অনেক
গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন কর্মকান্ড এতে করে ক্ষতিগ্রস্ত ও বাধা প্রাপ্ত হচ্ছে। মানুষ
এখন কাজের সন্ধানে নিজ গ্রাম ছেড়ে শহরের দিকে যাচ্ছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অসময়ে বন্যা বৃষ্টি খরা ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগে
অনেক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এছাড়াও অনেক হাট বাজার, নগরায়ন, অফিস আদালত,
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বসতবাড়ি, আবাদি জমি এবং গাছপালা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। মানুষ
যখন তাদের ঘর গরম করার জন্য এবং কলকারখানা ও যানবাহন চালানোর জন্য তেল গ্যাস এবং
কয়লা এর ব্যবহার করছে তখন থেকে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে আরো দ্বিগুণ
বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাস কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বৃদ্ধি
পেয়েছে উনবিংশ শতকের চেয়ে পঞ্চাশ শতাংশ বেশি। আর গত দুই দশকে বেড়েছে ১২%।
বনাঞ্চল ধ্বংসের কারণে বায়ুমন্ডলে এই গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমন দিন দিন বাড়ছে
গাছপালা কার্বন ধরে রাখছে ফলে গাছপালা যখন কাটা হচ্ছে বা পোড়ানো হচ্ছে তখন সেই
সঞ্চিত কার্বন বায়ুমণ্ডলে নিঃসরণ হয়।
প্রাকৃতিক পরিবেশের উপর জলবায়ুর প্রভাব এবং আমাদের করণীয়
আমাদের পরিবেশের উপর যেমন জলবায়ুর প্রভাব পড়ছে তেমনি করে এটা আমাদের প্রাকৃতিক
পরিবেশের ওপরও এর প্রভাব পড়ছে। তবে বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের পেছনে যেমন
অনেকগুলো প্রাকৃতিক কারণ আছে তেমনি রয়েছে মানব সৃষ্ট কারণ। আর এখন এই মানব সৃষ্ট
কারণগুলোকে মুখ্য বলা হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তন এর ফলে দেশের বায়ুমণ্ডলের
তাপমাত্রা বায়ুর চাপ বাতাস বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বৃষ্টিপাতের সময় ইত্যাদি
নানাগুলো বিষয়ে পৃথিবীর পৃষ্ঠে প্রভাব পড়ছে। বিশ্বব্যাপী
তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে সাথে বাড়ছে মেরু অঞ্চলের হিমবাহের আয়তন। জলবায়ু
পরিবর্তনের এসব কারণের জন্য মানুষের জীবন যাপন এ যেমন প্রভাব পড়ছে তেমনি সারা
বিশ্বে প্রায় সবকিছুতেই এর প্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এগুলো আমাদের দেশ তথা
বাংলাদেশ এবং মালদ্বীপের মতো দেশগুলোর আবহাওয়ার ওপর অনেক নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে
সব থেকে বেশি। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশসহ অনেক ছোট ছোট দ্বীপ
রাষ্ট্রগুলো আংশিক অথবা সম্পূর্ণ ভাবে সমুদ্র গর্ভে বিলীন
হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে যে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা যদি এক
মিটার বৃদ্ধি পায় তাহলে.২০৫০ নাগাদ দেশের মোট ভূমির ১৮ শতাংশ পানিতে ডুবে যাবে
আর এর জন্য প্রায় ১১ শতাংশ উপকূলবাসীরা সহায় সম্বলহীন হারা হবে। তাদের
সুস্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ পানি এবং স্যানিটেশনের অভাব দেখা দিবে তাদের জীবন
হুমকির মুখে পড়বে। পৃথিবীর তাপমাত্রা উষ্ণ হওয়ার কারণে আমাদের পরিবেশ ও
জীবজগতের ওপর এর ভয়ানক প্রভাব পড়ছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে মাটি শুষ্ক
হয়ে যাচ্ছে এবং দাবানলের ঝুঁকি বাড়ছে। এর ফলে ভূমির উর্বরতা কমে যাচ্ছে এবং
খাদ্য উৎপাদন কম হচ্ছে। পৃথিবীর অনেক প্রজাতির জীব বেঁচে থাকার জন্য ঠান্ডা
অঞ্চলের দিকে যাচ্ছে এছাড়াও আগের অনেক প্রজাতি উঁচু অঞ্চলে যাচ্ছে তাপমাত্রা
যেখানে কম। সামুদ্রিক প্রাণীরা গভীর সমুদ্রে বাস করার জন্য যাচ্ছে যেখানে পানি
অনেক ঠান্ডা। তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য খাদ্য নিরাপত্তা ও পরিষ্কার পানির উৎস গুলো
হুমকির মুখে পড়ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর অনেক
প্রভাব
পড়ছে তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য মানুষের নানা রকম সমস্যা দেখা দিচ্ছে এতে করে অনেক
অর্থনৈতিক খাত হুমকির মুখে পড়ছে। কার্বন ডাই অক্সাইড বেশি পরিমাণে নির্গত করছে
অনেক ধনী শিল্পোন্নত দেশ। জলবায়ু পরিবর্তন কৃষি মৎস্য জ্বালানি বীমা ও পর্যটন সহ
অনেক অর্থনৈতিক খাতকে হুমকির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। অতিবৃষ্টি এর কারনে অসময়ে বন্যা
দেখা দিচ্ছে যার ফলে অনেক উপকূলীয় অঞ্চল পানিতে ডুবে যাচ্ছে এতে করে কৃষি জমির
পরিমাণ কমে যাচ্ছে এবং অনেক ফসলি জমি
ফসল উৎপাদন করা থেকে ব্যাহত হচ্ছে। ফসল উৎপাদন করা কঠিন হচ্ছে এবং খাদ্য অভাব
দেখা দিচ্ছে। অসময়ে খরা এর জন্য আমাদের প্রাকৃতিক পরিবেশের অনেক ক্ষতি হচ্ছে এতে
করে পানির অভাব দেখা দিচ্ছে মানুষ ফসল উৎপাদন করতে পারছে না। মানুষ গাছপালা কেটে
ফেলছে বনায়ন ধ্বংস করছে এতে করে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে এবং
অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যাচ্ছে তাপমাত্রা বৃদ্ধি বেড়ে যাচ্ছে। তাপমাত্রা বাড়ার
কারণে মানুষ অস্বস্তিতে পড়ছে দিন দিন
উৎপাদন কমে যাচ্ছে এতে করে মানুষের খাদ্যের অভাব দেখা দিচ্ছে মানুষ দরিদ্র হয়ে
পড়ছে এবং কর্মসংস্থান কমে যাচ্ছে মানুষের মাথাপিছু আয় কমে যাচ্ছে। অনেক
বন্যপ্রাণী ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে তারা তাদের বাস উপযোগী জায়গা পাচ্ছে না। অনেক
মৎস্য সম্পদ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে মৎস্যজীবী মানুষের মাথাপিছু আয় কমে যাচ্ছে অনেক
মৎস বিলুপ্তের পথে হারিয়ে যাচ্ছে। সুমদ্রিত হওয়ায় অতিবৃষ্টি অনাবৃষ্টি লবণাক্ত
তার পরিমাণ বেড়ে যাওয়া বন্যা খরা ঝড় মরুকরণ সুপেয় পানির অভাব মৎস্য
সম্পদ জীবজন্তু ও পাখির অবলুপ্তি হাওর বাওর খাল বিল এর তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়ার
কারণে দুর্যোগের মাত্রায় অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে চলেছে। ১৯৮৮ সালে আইপিসিসি এর
ভবিষ্যৎ বাণী ছিল প্রতি দশকে পৃথিবীর তাপমাত্রা ০.২-০.৫° সেলসিয়াস বাড়তে পারে।
সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়বে তিন থেকে ১০ সেন্টিমিটার। কার্বন ডাই-অক্সাইডের
পরিমান দ্বিগুণ হলে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বাড়তে পারে ১.৫ থেকে ৪ দশমিক পাঁচ
ডিগ্রি। আর এভাবে যদি চলতে থাকে তাহল ২১০০ ছালে বায়ুমন্ডলে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের
পরিমাণ বেড়ে হবে ৪০ গুন।
তাহলে কি ভয়াবহ অবস্থা হবে চিন্তা করেছেন এছাড়াও আরো আছে মারাত্মক
স্বাস্থ্যঝুঁকি আছে নিরাপদ পানির সংকট। উন্নয়নের নামে বাড়ছে প্রতিনিয়ত পরিবেশ
দূষণের মাত্রা। আর এজন্য আমাদের দরকার স্বাস্থ্য সচেতনতা এবং জনসচেতনতা। আমাদের
সকলকে অর্থাৎ গ্রাম শহর সর্বত্র এলাকার মানুষদের পরিবেশ দূষণ থেকে বিরত থাকতে হবে
এবং যাতে করে আমাদের জলবায়ু পরিবর্তন না হয় সেদিকে মনোনিবেশ করতে হবে। আমাদের
বেশি বেশি করে গাছপালা লাগাতে হবে যাতে করে তাপমাত্রা বৃদ্ধি না পায়। এ বিষয়ে
আমাদের করণীয় গুলো আলোচনা করা হলো
- বনায়ন এবং সামাজিক বনায়ন সৃষ্টি করতে হবে।
- পানি সম্পদ প্রকল্প গুলোকে যতটা সম্ভব বহুমুখী প্রকল্প পরিকল্পনা করা এবং তার সঠিক বাস্তবায়ন করা দরকার।
- পানি দূষণ রোধ করতে হবে এবং কৃষি ক্ষেত্রে এর ব্যবহার এবং পানীয় জলের চাহিদা পূরণ করার চেষ্টা করতে হবে।
- বৃষ্টির পানি প্রয়োজনে সংরক্ষণের ব্যবস্থা চালু করতে হবে।
- ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহারের ক্ষেত্রে সর্তকতা এবং তার গুন ওমানের পরিবর্তনের পরিবিক্ষণ করতে হবে।
- মৎস্য সম্পদের উন্নয়ন করতে হবে।
- বন্যপ্রাণী এবং জীববৈচিত্র সংরক্ষণ করা।
- প্রাকৃতিক জলাশয় যেমন নদী-নালা ভরাট না করে সেগুলোর পানি প্রবাহ অক্ষুন্ন রাখতে হবে।
- চলাচলের জন্য নৌপথ সজল রাখতে হবে এবং পানি দূষণ রোধ করতে হবে।
- পর্যটন সংক্রান্ত সুবিধা গুলোর উন্নয়ন করার কাজে সহযোগিতা করা এবং উন্নয়ন করে জলাশয় হাওর বাওর বিল সমুদ্র দীঘি ইত্যাদি জায়গায় বিভিন্ন বিনোদন সুবিধার ব্যবস্থা করতে হবে।
- প্রাকৃতিক পরিবেশের ক্ষয় রোধ এবং সেগুলোর সংরক্ষণ করতে হবে এছাড়াও টেকসই উন্নয়ন করার জন্য ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল এবং বনাঞ্চলের উদ্ভিদ ও প্রাণী গুলোকে সংরক্ষণ করতে হবে।
- উদ্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রযুক্তি নির্বাচন ও এর প্রয়োগ করতে হবে।
- বন্যা নিয়ন্ত্রণ এবং ব্যবস্থাপনায় ঐক্যমত সৃষ্টি করতে হবে এবং স্থায়ী পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।
- পানি সম্পদ এ মালিকানা সত্তের উন্নয়ন, বন্টন, ব্যবহার, সংরক্ষণ এবং ক্ষয় রোধ সংক্রান্ত আইন গুলো সংশোধন করতে হবে।
পরিবেশের উপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব pdf
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব আমাদের পরিবেশের ওপর এবং আমাদের জীববৈচিত্র্য
মানবসমাজের ওপর পড়ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পৃথিবী ক্রমশ উত্তপ্ত উষ্ণ অথবা
গরম হচ্ছে এর ফলে আবহাওয়া গরম হচ্ছে আরো এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি
পাচ্ছে। এছাড়াও মরু অঞ্চলে বরফ গলা শুরু হচ্ছে। আর এই জলবায়ের পরিবর্তন এখন
মানব সৃষ্ট কারণে বেশি হচ্ছে মানুষ বেশি পরিমাণে গাছপালা ধ্বংস করছে গাছপালা কেটে
ফেলছে এর ফলে গ্রীন হাউস গ্যাসের পরিমাণ বেড়ে
যাচ্ছে পৃথিবীপৃষ্ঠ উত্তপ্ত হচ্ছে। এর ফলে আমাদের পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে মানব
সমাজের ক্ষতি হচ্ছে এবং অন্যান্য মৎস্য প্রাণী বন্যপ্রাণী ইত্যাদির ক্ষতি হচ্ছে।
সব অঞ্চলে কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সমান হয় না। মহাসাগরের ওপর জলবায়ু
পরিবর্তনের প্রভাব বহুমুখী এর মধ্যে আছে মহাসাগরের তাপমাত্রা বৃদ্ধির মহাসাগর গরম
হওয়া এবং বরফ গলা আর এজন্য সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ও বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত কয়েক শতক
ধরে পৃথিবীর তাপমাত্রা দিন দিন বৃদ্ধি পেয়েছে আর এই তাপমাত্রা বৃদ্ধির
কারণে আমাদের পরিবেশ এবং জীবজগতের ওপর এর প্রভাব পড়ছে নানা ভাবে এবং এর ক্ষতি ও
ভয়াবহ। তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে মাটির শুষ্ক হয়ে পড়ছে এবং দাবানলের ঝুঁকি
বাড়ছে এর ফলে জমির তথা ভূমির উর্বরতা কমে যাচ্ছে ও খাদ্য উৎপাদন কম হচ্ছে। অনেক
জেদ বেঁচে থাকার জন্য শীতল অঞ্চলের দিকে যাচ্ছে আবার অনেক প্রজাতির উঁচু অঞ্চলে
দিকে যাচ্ছে। সামুদ্রিক অনেক প্রাণীরা গভীর সমুদ্রের নিচে চলে যাচ্ছে যেখানে পানি
অনেক ঠান্ডা। বৈশ্বিক এই উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে
অনেক স্থলজ প্রজাতি মারাত্মকভাবে বিপদে পড়ছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য খাদ্য
নিরাপত্তা ও পরিষ্কার সুপেয় পানির উৎসগুলো হুমকির মুখে পড়ছে এবং মানুষের সুপের
পানির অভাব দেখা দিচ্ছে। মানুষের নানা রকম স্বাস্থ্য সমস্যা হচ্ছে। অনেক ধনী
শিল্প উন্নত দেশ বেশি পরিমাণে কার্বন-ডাই-অক্সাইড এ নির্গত করছে আর এর ফলে আমাদের
মত অনেক উন্নয়নশীল দেশগুলো হুমকির মুখে পড়ছে। মানুষ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে
নিজ বাসস্থান ত্যাগ করে শহরের দিকে চলে যাচ্ছে। তাপমাত্রা
বৃদ্ধির কারণে বরফ গলা শুরু হচ্ছে এর ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং
অনেক উপকূলীয় অঞ্চল পানিতে প্লাবিত হচ্ছে। অসময়ে বন্যা এর কারণে অনেক উপকূলীয়
অঞ্চল পানিতে ডুবে যাচ্ছে এতে করে অনেক কৃষি জমি ডুবে যাচ্ছে পানিতে এতে করে ফসল
উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। বন্যার কারণে অনেক ফসল ধান পাট গম ভুট্টা ছোলা ইত্যাদি ফসল
গুলো উৎপাদন করা কঠিন হয়ে পড়ছে এবং অনেক ক্ষতি হচ্ছে। আবার খরা এর কারণে আমন
ধান বোরো এবং আউশ ধান উৎপাদন
করা কঠিন পানির অভাবে অনেক ফসল উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে না এতে করে খাদ্য অভাব
দেখা দিচ্ছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে মানুষের স্বাস্থ্য সমস্যা এবং খাদ্য
নিরাপত্তা এবং পানি নিরাপত্তা করা কঠিন হয়ে পড়ছে। মানুষের নিরাপদ পানির অভাব
দেখা দিচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে মৎস্যসম্পদ এবং অনেক প্রাণী সম্পদের ক্ষতি
হচ্ছে। আমাদের দেশে অনেক হাওর-বাওর নদনদী এবং খাল বিল আছে এছাড়াও আছে পুকুর
জলাশয় দিঘী যেখানে প্রচুর পরিমাণে মাছ চাষ করা হয়
এবং চিংড়ি চাষ করা হয়ে থাকে। আর জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এ সকল সম্পদের ক্ষতি
হচ্ছে মানুষ ভালোভাবে এগুলোর পরিচর্যা এবং উৎপাদন করতে পারছে না এতে করে আমাদের
দেশের অর্থনীতিতে এক বিরূপ প্রভাব পড়ছে। অনেক প্রাণীর বিলুপ্তের পথে চলে যাচ্ছে
তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য এবং অতি শীতের কারণে অনেক প্রাণী তাদের বাসস্থান ত্যাগ
করে অন্যত্র চলে যাচ্ছে। গবাদি পশুর খাদ্য অভাব দেখা দিচ্ছে এবং বিভিন্ন নিত্য
নতুন রোগ এবং রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ফসল উৎপাদন করার ক্ষেত্রেও অনেক নতুন নতুন পোকামাকড় এবং কীটপতঙ্গের আবির্ভাব
হচ্ছে। এতে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। বায়ুমন্ডলে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ
বৃদ্ধি পাচ্ছে কারণ মানুষ গাছপালা কেটে ফেলছে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে তাই। ফসলের
পুষ্টি মান কমে যাচ্ছে মানুষ অধিকারের রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহার করছে ওজোন
স্তরের ক্ষয় হচ্ছে। মাটি ক্ষয় হচ্ছে এবং মাটির উর্বরতা যাচ্ছে এতে করে ফসল
উৎপাদন ও কমে যাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে চারটি প্রধান ফসল যেমন ভুট্টা,
ধান, গম এবং
সয়াবিন এগুলোর উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়াও আরো অন্যান্য ফসল মসুর ডাল এগুলোর ও
সঠিক উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে না কারণ এগুলোর জন্য প্রয়োজন তাপমাত্রা। তাপমাত্রা
বেশি হওয়ার কারণে এগুলোর বৃদ্ধি এবং অঙ্কুরিত হওয়ার ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে
এবং গাছ দুর্বল হয়ে পড়ছে তাদের পরাগায়নে সমস্যা হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে
মানুষ খাদ্যের অভাবে অপুষ্টিতে ভুগছে এতে করে অনেকের বিশেষ করে ছোট বাচ্চা এবং
বয়স্কদের নানা রকমের স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিচ্ছে।
বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তনের কারণ
বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তনের অনেকগুলো কারণ আছে। তবে মানব সৃষ্ট কারণগুলো বেশি।
মানুষ তার জীবন যাপন এবং নানা কর্মকান্ড পরিচালনার জন্য ব্যবহার করছে খনিজ তেল
কয়লা এবং গ্যাস এর আর এতে করে অনেক ক্ষতি হচ্ছে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তনের কারণগুলো হলো
- অস্বাভাবিক হারে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়া
- বৃষ্টিপাত হ্রাস পাওয়া এবং লবণাক্ততা বৃদ্ধি পাওয়া
- অসময়ে বন্যা, খরা বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ এর কারণে জলবায়ু পরিবর্তন হয়।
- মরুকরণ এবং ভূগর্ভস্থ পানির স্তর কমে যাওয়ার কারণে
- সমুদ্রস্তরের উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়া এবং মেরু অঞ্চলে হিমবাহে বরফ গলা
- মানুষ অধিক পরিমাণে গাছপালা কেটে ফেলার কারণে
- প্রাকৃতিক সম্পদ কমে যাওয়ার কারণে
- নদীর গ্রেডিয়েন্ট কমে যাওয়ার কারণে যেমন গঙ্গা মেঘনা এবং ব্রহ্মপুত্র নদীর অববাহিকায় অধিক পরিমাণে বৃষ্টিপাত এবং হিমালয়ের হিমবাহ বরফ গলার কারণে ।
- গ্রিনহাউস গ্যাসের মুক্তি অর্থাৎ গ্রিনহাউস গ্যাসের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়া
- সৌর বিকিরণ এবং আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত
- জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বা পোড়ানো বন ধ্বংস করা
- কার্বন ডাই অক্সাইড এর পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে ও বাংলাদেশের জলবায়ুর পরিবর্তন হচ্ছে।
বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব
বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে মানুষ এবং পরিবেশের নানা রকম ক্ষতি হচ্ছে এবং
এর প্রভাব পড়ছে কৃষি ক্ষেত্রে এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে
মানুষ সহ প্রাণী এবং বনজ সম্পদ ইত্যাদির ক্ষতি হচ্ছে। বাংলাদেশের জলবায়ু
পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব গুলো আলোচনা করা হলো
বৃষ্টিপাত কমে যাওয়াঃ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বৃষ্টিপাত কমে যাচ্ছে কোন
সময় বৃষ্টিপাত বেশি হচ্ছে অসময়ে বন্যা খরা দেখা দিচ্ছে এতে করে আমাদের জনজীবন
এবং কৃষি খাতের ওপর প্রভাব পড়ছে। বর্ষা মৌসুমে কম বৃষ্টি হচ্ছে এবং এতে করে ফসল
উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে খাদ্যের অভাব দেখা দিচ্ছে। বৃষ্টি পাতা কমে যাওয়ার কারণে
জমিতে ফাটল দেখা দিচ্ছে এবং ফসল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের দেওয়া
তথ্যমতে ২০১০ খ্রিস্টাব্দে বিগত ১৫ বছরের তুলনায় কম বৃষ্টি হয়েছে।
লবণাক্ততা বৃদ্ধিঃ বৃষ্টিপাত কম হওয়ার কারণে নদনদীর পানি প্রবাহ শুকনো
মৌসুমে স্বাভাবিক মাত্রায় থাকছে না এর ফলে নদীর পানির অনেক পরিমাণ চাপের কারণে
সমুদ্রের লোনা পানি যতটুকু পরিমান এলাকা জুড়ে থাকার কথা ততটুকু এলাকায় থাকছে না
আর পানির প্রবাহ কম হওয়ার কারণে সমুদ্রের লোনা পানি স্থলভাগের কাছাকাছি চলে
আসছে। আর এর ফলে লবণাক্ত তা বৃদ্ধি পাচ্ছে দেশের বিভিন্ন উপকূলীয় অঞ্চলে।
অস্বাভাবিক তাপমাত্রা বৃদ্ধিঃ আমাদের দেশ নাতিশীতোষ্ণ তাপ মাত্রার দেশ
হওয়া সত্বেও বিগত কয়েক বছরে আমাদের দেশের তাপমাত্রা অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি
পেয়েছে। তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণে পানির বাষ্পীভবন বেড়ে যাচ্ছে এবং বাতাসে
জলীয় বাষ্পের পরিমাণ ও বেড়ে যাচ্ছে। আর জলীয়বাষ্পের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার মানে
হচ্ছে বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ বেড়ে যাওয়া।তাপমাত্রা বাড়ার কারণে জনজীবন
অতিষ্ঠ হয়ে পড়ছে এবং বরফ গলা শুরু হচ্ছে উপকূলীয় অঞ্চলের ফলে প্লাবিত হচ্ছে।
মরুকরণঃ তাপমাত্রা বাড়ার কারণে এবং বৃষ্টিপাত কম কারণে খরা দেখা দিচ্ছে
আর এর ফলে মরুকরণ হচ্ছে। বৃষ্টি পাতা কম হওয়ার কারণে এবং সময়মতো বৃষ্টি বা
বন্যা না হওয়ার কারণে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে এবং পানির অভাব দেখা দিচ্ছে মানুষ
খরায় পড়ছে ২০৫০ খ্রিষ্টাব্দ নাগাদ খরায় পড়তে পারে প্রায় আশি লাখ মানুষ।
ভূগর্ভস্থ পানির স্তর হ্রাসঃ অনেক এলাকায় ভূগর্ভস্থ পানি স্তর কমে যাচ্ছে
এবং দেখা দিচ্ছে স্থায়ীভাবে মরুকরণ। রাজশাহীর বরেন্দ্র এলাকায় বৃষ্টিপাত কমে
যাওয়ার কারণে পানির স্তর নেমে গেছে। ফারাক্কা বাঁধের প্রভাব এর জন্য দায়ী।
অনাবৃষ্টির কারণে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে এতে করে সুপেয়পানের
অভাব দেখা দিচ্ছে।
সুপেয় পানির অভাবঃ ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ার কারণে এবং
অনাবৃষ্টি ও খরার কারণে গর্ভস্থ পানির স্তর অনেক নিচে নেমে যাচ্ছে এর ফলে মানুষের
সুপেয় পানির অভাব দেখা দিচ্ছে। মানুষ ধীরে ধীরে খাবার পানির সংকটে পড়ছে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ বৃদ্ধিঃ পরিবর্তনের কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন
ঘূর্ণিঝড় বন্যা নদী ভাঙ্গন ভূমিধস ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগ গুলো দিন দিন
বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ গুলোর ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের
স্থান সবার আগে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এখন ঘূর্ণিঝড়, সাইক্লোন এবং টর্নেডো
এর মত অনেক প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দিচ্ছে এর ফলে জনজীবন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং
পরিবেশের ওপর এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। খাদ্য অভাব দেখা দিচ্ছে এবং মানুষের নানা
রকম স্বাস্থ্য সমস্যা হচ্ছে।
স্থায়ী জলাবদ্ধতাঃ সাইক্লোনের সময় সমুদ্র থেকে লোনা পানি অনেক
নিম্নভূমিতে জমে থাকার কারণে দীর্ঘমেয়াদী জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করে এর ফলে এবং
ঘূর্ণিঝড় এর কারণে ভেঙে পড়ে অনেক উপকূলীয় অঞ্চলের বেড়িবাঁধ এবং অবকাঠামো গত
অনেক কর্মকান্ড।বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ার কারণে অনেকের চলাচলের অসুবিধা হয়।
শিলাবৃষ্টিঃ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশে বেড়ে চলেছে শিলা বৃষ্টি।
প্রতি বৈশাখ মাসে প্রাকৃতিক স্বাভাবিক কারণে মাঝে মধ্যে হয় শিলা বৃষ্টি।
শিলাবৃষ্টির কারণে অনেক মানুষ এবং গবাদি পশু আহত ও নিহত হয় ক্ষতিগ্রস্ত হয় অনেক
ফসল এবং বাড়ি ঘর।
অতিবৃষ্টি এবং তীব্র বন্যাঃ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অসময়ে অতিবৃষ্টি ও
বন্যা দেখা দেয় এর ফলে অনেক ফসল নষ্ট হয়ে যায় এবং পানিতে ডুবে যায়। অনেক
উপকূলীয় অঞ্চল বন্যায় প্লাবিত হয় এতে করে মানুষের খাদ্য অভাব দেখা দেয় এবং
জনজীবনে দুর্ভোগ নেমে আসে।
নদী ভাঙ্গনঃ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এবং বর্ষাকালে উজানে প্রচুর
বৃষ্টিপাত হওয়ার কারণে নদীর পানি বেড়ে যায় এবং তা প্রচন্ড গতিতে সমুদ্রের দিকে
ধাবিত হতে থাকে এ সময় উপকূলীয় অঞ্চলের নদী সংলগ্ন এলাকার নদীর তীর পানের
তীব্রতরে ভেঙে যায় এবং নদী ভাঙ্গনের সৃষ্টি হয়। এতে করে কৃষি জমির অনেক অংশ নদী
ভাঙনের কবলে পড়ে।
ভূমিধ্বস ও ভূমিকম্পঃ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অনেক এলাকায় ভূমিধস দেখা
যায় এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ও ভূমিকম্প হয়। আর এগুলোর পরিমাণ এখন দিন দিন
বেড়ে চলেছে এর ফলে মানুষ এবং অন্যান্য পশুপাখি ও প্রাণীর অনেক ক্ষতি হচ্ছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পাহাড় দুর্বল হয়ে যাচ্ছে এবং যার ফলে বর্ষা মৌসুমে
পাহাড় ধসে পড়ছে এতে অনেক মানুষ মারা যাচ্ছে। ভূমিকম্প হয়ে থাকে প্রাকৃতিক ভাবে
কার্বন চক্রের কারণে। ভূমিকম্পের কারণেও অনেক ক্ষতি হচ্ছে অনেক মানুষ এবং শহর
এলাকা ধ্বংস হয়ে হয়ে যাচ্ছে সেই সাথে গাছপালা পশু পাখি ফসলি জমি ধ্বংস হচ্ছে।
সমুদ্র স্তরের উচ্চতা বৃদ্ধিঃ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে অর্থাৎ
পৃথিবীপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে সমুদ্রস্ত স্তরের উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং
মেরু অঞ্চলের হিমালয়ে বরফ গলা শুরু হয়েছে এর ফলে অনেক অঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে
বন্যার কবলে পড়ছে। সমুদ্র স্তরের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে অনেক ভূমিকা সমুদ্র গর্ভে
তলিয়ে যাচ্ছে।
প্রাকৃতিক সম্পদ কমে যাওয়াঃ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রাকৃতিক সম্পদ এর
পরিমাণ দিন দিন কমে যাচ্ছে এর ফলে গাছপালা পশু পাখির মাছ ফুল ফল ইত্যাদি সবকিছুই
কমে যাচ্ছে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং সুন্দরবন ধ্বংস হয়ে যাওয়ার কারণে
এ সকল প্রাকৃতিক সম্পদের পরিমাণ দিন দিন কমে যাচ্ছে।
মৎস্য সম্পদ কমে যাওয়াঃ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এবং পৃথিবীপৃষ্ঠের
তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে অনেক মৎস্য সম্পদ বিলুপ্তির পথে চলে যাচ্ছে। এছাড়াও
অসময়ে ভারী বৃষ্টি হওয়া এর জন্য অনেক মাছের প্রজননে সমস্যা হচ্ছে তাপমাত্রা
বেশি থাকার জন্য মৎস্য সম্পদ গুলো কৃত্রিম প্রজননে সারা দিচ্ছে না। এতে করে মৎস
সম্পদ দিন দিন কমে যাচ্ছে এবং অনেক মাছ উৎপাদন ও চিংড়ি উৎপাদনে সমস্যা দেখা
দিচ্ছে ফলে উৎপাদনও কমে যাচ্ছে।
জীবজন্তুর অবলুপ্তিঃ সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে উল্লেখযোগ্য ভাবে
হ্রাস পাচ্ছে দেশের বিপুল পরিমাণে জীবজন্তু। সমুদ্রের লোনা পানির উচ্চতা বাড়ার
জন্য খুলনা সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগারের বিচরণ উপযোগী বনভূমি কমে যাচ্ছে।
এছাড়াও আরো অনেক জীবজন্তু যেমন মায়া হরিণ শঙ্খচূড় সাপ ইত্যাদি এগুলো কমে
যাচ্ছে এছাড়াও নদীতে বিচরণকারী শুশুক এর পরিমাণও কমে যাচ্ছে। তবে কীটপতঙ্গ যেমন
মশা এর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে মারাত্মকভাবে।
উদ্ভিদ প্রজাতি ধ্বংসঃ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অনেক উদ্ভিদ প্রজাতির
ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। সিলেটের অঞ্চলে সাধারণত দুই ধরনের গাছ জন্মে একটা হচ্ছে
শেকড়ধারী আর ভাসমান হাওরে যদি পানি কম হয় তাহলে শেখর ধারী উদ্ভিদের পরিমাণ বেড়ে
যাবে অন্যদিকে অপর উদ্ভিদের সংখ্যা বেড়ে যাবে। এছাড়াও অনেক গাছপালা আছে যেগুলো
চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বিভিন্ন জায়গায় এগুলোর পরিমাণ কমে যাবে পানির
অভাব হলে।
পাখি প্রজাতির বিলুপ্তিঃ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পাখি প্রজাতির বিলুপ্তি
হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অনেক পাখি প্রজাতি ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে এর ফলে
সবচেয়ে বেশি কমে যাচ্ছে জলচর পাখিরা।
কৃষিভিত্তিক উৎপাদন হ্রাসঃ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অসময়ে বন্যা খরা এবং
নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দিচ্ছে যার ফলে ফসল উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে না এবং
বন্যার কারণে অনেক ফসলি জমি পানিতে ডুবে যাচ্ছে এতে করে ফসল উৎপাদন করা কঠিন হয়ে
পড়ছে খাদ্যের অভাব দেখা দিচ্ছে। খরা এর জন্য অর্থাৎ পানির অভাবে ফসল উৎপাদন
ব্যাহত হচ্ছে। তা বৃদ্ধির কারণে অনেক ফসলি জমে পানিতে ডুবে যাচ্ছে এবং লোনা
পানিতে ডুবে যাচ্ছে অনেক ফসলি জমি এতে করে ফসল উৎপাদন কমে যাচ্ছে।
খাদ্য সংকটঃ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং অসময়ে
বন্যা খরা লবণাক্ততা বৃদ্ধি জমিতে ইত্যাদি কারণে মানুষের খাদ্য অভাব দেখা দিচ্ছে
মানুষ দুই বেলা ঠিকমতো খেতে পারছে না।
জীবিকার উৎস ধ্বংসঃ পরিবর্তনের প্রভাবে এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ এর কারণে
মানুষ নানাভাবে তাদের জীবিকার উৎস হারাচ্ছে। মাঠের উৎপাদন কম হওয়ার কারণে সাধু
পানির মৎস্যজীবী এবং উপকূলীয় জেলেরা তাদের পরিবার চালাতে কষ্ট হচ্ছে এবং কেউ কেউ
তাদের জীবিকার উচ্চ মাছ ধরা থেকে দূরে চলে যাচ্ছে।
স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে মানুষঃ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণ নিয়ে মানুষের
স্বাস্থ্যের ওপর নানার ভাবে প্রভাব পড়ছে মানুষ খাদ্য অভাবে পড়ছে এবং অপুষ্টি
এবং নানা রোগ ব্যাধিতে ভুগছে। বিশেষ করে ছোট বাচ্চা এবং বয়স্ক ব্যক্তিদের নানা
রকম সমস্যা চর্মরোগ শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি রোগ দেখা দিচ্ছে।
অর্থনৈতিক ক্ষতিঃ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অর্থনৈতিক ক্ষতি হচ্ছে দেশের
অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে দ্রুত। এই জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশের
বাৎসরিক ক্ষতির পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে এবং আয় কমে যাচ্ছে মানুষের মাথাপিছু আয় কমে
যাচ্ছে। মৎস সম্পদ এবং বনজ সম্পদ কমে যাচ্ছে এতে করে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে এবং আয়
কমে যাচ্ছে। এছাড়াও কিসের ভিত্তিক উৎপাদন কমে যাওয়ার কারণে অর্থনৈতিক ক্ষতি
হচ্ছে।
লেখকের মন্তব্য
প্রিয় পাঠক ম্যাক্সিমো ইনফো তার এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনাদের সুন্দরভাবে
বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছে প্রাকৃতিক পরিবেশের ওপর জলবায়ুর প্রভাব এবং আমাদের
করণীয় কি এ বিষয়ের ওপর এবং এর ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে। এছাড়াও আরো অনেক
বিষয়গুলো আলোচনা করেছে এই পোস্টের মধ্যে কৃষি ক্ষেত্রে অর্থনীতির ক্ষেত্রে এর
প্রভাব। এ সকল বিষয়গুলো পড়ে যদি আপনাদের ভালো লাগে তাহলে আপনারা এই পোস্টটি
শেয়ার করে দিবেন এবং আমার সঙ্গে থাকুন নিত্য নতুন তথ্য পেতে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url