পুঁইশাকে কি পুষ্টিগুণ রয়েছে এবং পুঁইশাক খাওয়ার উপকারিতা
আসসালামু আলাইকুম, আপনারা হয়তো আগে পুঁইশাকে কি পুষ্টিগুণ রয়েছে এবং
পুঁইশাক খাওয়ার উপকারিতা
সহ পুঁইশাক চাষের সময় ও চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে অনেক সঠিক তথ্য খোঁজাখুঁজি করেছেন
কিন্তু পাননি যারা পাননি তারা আজকে আমার এই পোষ্টের মাধ্যমে জেনে নিন। তাই জানার
জন্য আপনাদের শেষ পর্যন্ত পড়ার অনুরোধ করছি।
এখানে আজকে আপনাদের জন্য পুঁইশাক সম্পর্কিত অনেক তথ্য দিয়েছি যেমন পুঁইশাকে কি
পুষ্টিগুণ রয়েছে এবং পুঁইশাক খাওয়ার উপকারিতা, পুঁইশাক চাষের সময় ও চাষ
পদ্ধতি, পুঁইশাক খেলে কি গ্যাস হয়, পুঁইশাক খাওয়ার অপকারিতা ইত্যাদি বিষয়ে। এ
সকল বিষয়গুলো পড়ে আপনারা অনেক সঠিক তথ্য জানতে পারবেন এবং উপকৃত হবেন। এই শাক
খাওয়ার ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়, হজম শক্তি বৃদ্ধি পায়, নানা রকম সংক্রমক রোগ
থেকে রক্ষা পাওয়া যায় ইত্যাদি আরও নানা উপকারিতা আছে এ সকল বিষয়ে জানতে শেষ
পর্যন্ত পড়ুন।
ভূমিকা
আমাদের বাংলাদেশের সারা বছরই পুঁইশাক পাওয়া যায় এবং এই সবজিটা একটা সহজলভ্য এবং
সুস্বাদু সবজি। আমরা সকলেই এই সবজিটা খেতে খুব পছন্দ করে থাকি এবং এর অনেক
উপকারিতা আছে। এই শাকে আছে ভিটামিন এ, সি, কে, আয়রন, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম,
ক্যালসিয়াম, ফাইবার, জিঙ্ক, প্রোটিন ও শর্করা ইত্যাদি। এই শাক খাওয়ার ফলে
আমাদের চোখ ভালো থাকে চোখের নানা রকম অসুখ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। ক্যান্সার,
পাইলস, ফিস্টুলা ইত্যাদি রোগ থেকে সহজে রক্ষা পাওয়া যায়। আমাদের ত্বকের যত্নে
এতে থাকা ভিটামিন সি খুবই প্রয়োজনীয় এবং বিভিন্ন সংক্রামক রোগ থেকে রক্ষা
পাওয়া যায় চুলের যত্নেও এই শাক অনেক উপকারে আসে। বেশি পরিমাণে এই শাক খাওয়ার
ফলে অনেকের গ্যাসের সমস্যা এবং এলার্জির সমস্যা দেখা দিতে পারে। এছাড়াও এই শাক
খাওয়ার ফলে আমাদের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়, হজম শক্তি বাড়ে, রক্তশূন্যতা রোধ করা
যায় ও হাড় শক্ত এবং মজবুত হয়। এছাড়া গর্ভবতী মহিলাদের এই শাক খাওয়ার ফলে
তাদের পুষ্টির চাহিদা আইরন এবং ভিটামিন সি এর অভাব পূরণ হয়।
পুঁইশাক খেলে কি গ্যাস হয়
পুঁইশাক আমাদের সকলের কাছে একটা পরিচিত শাক। এই শাক খাওয়ার অনেক উপকারিতা আছে
কারণ এই শাকে আছে অনেক পুষ্টি উপাদান এবং ভিটামিন যেগুলো আমাদের শরীরের জন্য অনেক
প্রয়োজনীয়। পুঁইশাকে আছে ক্যালোরি, শর্করা, ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, প্রোটিন,
ফাইবার, পানি, ম্যাঙ্গানিজ ইত্যাদি আর এগুলো আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুব
প্রয়োজনীয়। এখন অনেকের প্রশ্ন জাগতে পারে যে পুঁইশাক খেলে কি গ্যাস হয় হ্যাঁ
পুঁইশাক খাওয়ার ফলে গ্যাস হতে পারে। আবার অতিরিক্ত বেশি পরিমাণে পুঁইশাক
খাওয়ার ফলে আপনাদের গ্যাস হতে পারে। যাদের পেটে আগে থেকে গ্যাসের সমস্যা আছে
তাদের বেশি হতে পারে কিন্তু সকলের ক্ষেত্রে গ্যাসের সমস্যা নাও হতে পারে। আবার
কেউ যদি অতিরিক্ত বেশি পরিমাণে এই শাক খায় তাহলে সকলের ক্ষেত্রে গ্যাসের সমস্যা
দেখা দিতে পারে। যদি কারোর পুঁইশাক খাওয়ার ফলে গ্যাসের সমস্যা হয় তাহলে কিছু
বিষয়ের দিকে নজর দিবেন সেগুলো হচ্ছে খাবার খাওয়ার কমপক্ষে ২৫ থেকে ৩০ মিনিট পর
পানি পান করা তাহলে আপনাদের গ্যাসের সমস্যা থেকে
মুক্তি পাবেন, তৈলাক্ত ভাজাপোড়া খাবার এড়িয়ে চলা, আপনারা যদি কেউ একটানা অনেক
সময় ধরে বসে থাকেন তাহলে গ্যাসের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে এটা করা থেকে বিরত
থাকবেন। আবার অনেকের দুধ জাতীয় খাবার খেলে গ্যাসের এবং বদহজম এর সমস্যা হতে পারে
এছাড়া আপনারা যদি সকালে সঠিক সময়ে নাস্তা করেন তাহলে গ্যাসের সমস্যা দূর হয়ে
যাবে।
পুঁইশাক চাষের সময় ও চাষ পদ্ধতি
বর্তমানে এখন পুঁইশাকের অনেক উন্নত জাত আছে যেমন বারি পুঁইশাক-১ এবং বারি
পুঁইশাক-২। এটা বপনের সঠিক সময় হচ্ছে চৈত্র ভাদ্র মাস অর্থাৎ মার্চ আগস্ট মাসে।
পুঁইশাক চাষ করার জন্য আগে জমি চাষ দিয়ে এবং মই দিয়ে জমির মাটি ভালোভাবে
ঝুরঝুরে করে নিতে হবে। প্রথমে এর চারা উৎপাদন করে তারপরে এটা লাগানো যায়। পুই
শাকের চারা লাগানোর জন্য একটা চারা থেকে আরেকটা চারার মাপ হবে ২০ ইঞ্চি এবং একটা
লাইন থেকে আরেকটা লাইনের মাপ হবে ৪০ ইঞ্চি দূরত্ব। এছাড়াও আপনারা পুঁইশাক চাষ
পদ্ধতি সম্পর্কে আরো ভালোভাবে জেনে নিন নিজের আলোচনা থেকে
পুঁই শাকের চারা কিভাবে তৈরি করবেন আপনারাঃ আপনারা যদি সারিতে বুনেন তাহলে
প্রতি শতক জমির জন্য বীজ লাগবে ৮ থেকে ১০ গ্রাম আর যদি আপনারা জমিতে ছিটিয়ে
বুনেন তাহলে বীজের পরিমাণটা একটু বেশি লাগবে। এর বীজ বপণের জন্য ১৮ থেকে ২০
সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রার দরকার হয়। আর শীতের সময় তাপমাত্রা কম থাকে এজন্য এ সময়
বীজ বপন করলে ভালো হবে। সাধারণত গ্রীষ্মকালে বর্ষার সময় এর চাষ ভালো হয়। এর বীজ
২৪ ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখার
পরে সেগুলো জমিতে বুনতে হয়। ফেব্রুয়ারি এবং মার্চ মাস পর্যন্ত এর চারা তৈরি
করার জন্য পলিব্যাগে এবং বেডে বীজ বোনা হয়ে থাকে। এবং এরপর যখন তুই সপ্তাহ হয়
তখন এগুলো তুলে নিয়ে তারপরে মূল জমিতে লাগানো হয়। আপনারা যদি সারি করে বুনেন
তাহলে হেক্টর প্রতি লাগবে ১.৫ থেকে ২.৫ কেজি বীজ।
জমি তৈরি এবং চারা রোপনঃ যে জমিতে চারা রোপন করবেন প্রথমে সেই জমিটাকে
তৈরি করে নিতে হবে। জমির আগাছা পরিষ্কার করে ৫ থেকে ৬টি চাষ দিতে হবে এবং তার
সাথে মই দিতে হবে যাতে করে মাটি ঝুরঝুরে হয়। চারা লাগাতে হবে ১৫ থেকে ২০ দিনের
চারা। এই চারার রোপন করার জন্য আপনারা এক সারি থেকে আরেক সারির মাপ হবে এক মিটার
এবং প্রতিটি সারিতে পঞ্চাশ সেন্টিমিটার দূরত্বে আরেকটি চারা রোপন করতে হবে।
সার প্রয়োগ এবং ব্যবস্থাপনাঃ ইউরিয়া সার ছাড়া সব সারই জমি তৈরি করার
সময় দিতে হবে। চারার বয়স যখন ১০থেকে ১২ দিন হবে তখন ইউরিয়া সার প্রথম কিস্তিতে
৩০ থেকে ৪০ দিন পর ও প্রথমবার পুঁইশাকের ফলন তোলার পরে বাকি দুই কিস্তিতে মোট তিন
কিস্তিতে প্রয়োগ করতে হবে। গোবর এবং টিএসপি সার অর্ধেক জমি তৈরি করার সময় এবং
পাকে যে অর্ধেক থাকবে সেগুলো চারা রোপণের সময়ে গর্ত প্রয়োগ করতে হবে। এই শাক
চাষের সারের মাত্রা শতক প্রতি গোবর সার ৬০ কেজি, ৫০০ গ্রাম সরিষার খৈল, ইউরিয়া
সারের পরিমাণ হচ্ছে ৮০০ গ্রাম, টিএসপির মাত্রা ৪০০ গ্রাম এবং এমওপি সার ৪০০ গ্রাম
লাগবে।
সেচ এবং পানি নিষ্কাশনঃ বর্ষার সময় জমিতে পানি সেচ দেওয়ার প্রয়োজন হয়
না। তবে মাটিতে যদি রস না থাকে তাহলে অবশ্যই পানি সেচ দিতে হবে। এছাড়াও মাটি
আলগা করে দেওয়ার দরকার হবে প্রায়।
আগাছা ও নিড়ানিঃ জমির আগাছা পরিষ্কার করে দিতে হবে এবং ফলন বেশি
পাওয়ার জন্য বাউনি দেওয়া দরকার। পুইশাকের গাছের গোড়ায় কখনোই পানি জমতে দেওয়া
ঠিক হবে না তাহলে গাছের গোড়য় পচন ধরে গাছ মরে যেতে পারে। আবার যখন বেশি বৃষ্টি
হবে তখন গোড়ার মাটি ধুয়ে যায় এ বিষয়টিকে লক্ষ্য দিতে হবে এবং যদি মাটি হয়ে
যায় তাহলে মাটি দিতে হবে। ২৫ থেকে ৩০ সেন্টিমিটার উঁচু চারা হলে তখন আগা কাটতে
হবে এতে করে গাছ হবে ঝোপালো।
পোকামাকড় এবং রোগ দমনঃ এই শাকের পাতার বিটল অথবা ফ্লি বিটল পোকা ক্ষতি
করে এছাড়া অন্য কোন প্রকারের ক্ষতি করতে পারে না। এই পোকা এই স্বাদের পাতা ছোট
ছোট করে ছিদ্র করে ফেলে আরেকটি পুঁইশাকের মারাত্মক রোগ হচ্ছে সারকোস্পোরা পাতার
দাগ। এগুলো ছাড়াও পুঁইশাকের গাছে আরো নানা ধরনের রোগ হতে পারে এগুলো ছত্রাক নাশক
স্প্রে করার মাধ্যমে রোগ নিয়ন্ত্রণ করা যায়। পুঁইশাকের ডগা মাঝেমধ্যে কাটতে হয়
এতে করে যেমন শাক খাওয়া হয় তেমনি গাছে আবার নতুন করে ডগা বের হয়।
পুঁইশাকের ফলনঃ পুই শাকের ফলন হয় প্রতি শতকে ২০০ থেকে ২৮০ কেজি আর হেক্টর
প্রতি হয় ৫০ থেকে ৭০ টন। এখন অনেক চাষী পুঁইশাকের ফলন থেকে অনেক লাভবান হচ্ছে।
গর্ভাবস্থায় পুঁইশাক খাওয়া যাবে
গর্ভাবস্থায় পুঁইশাক খাওয়া যাবে কি এ বিষয়ে অনেকের প্রশ্ন থাকে হ্যাঁ
গর্ভাবস্থায় পুঁইশাক খাওয়া যাবে। কারণ এই শাকে আছে অনেক পুষ্টিকর ভিটামিন
যেগুলো একজন গর্ভবতী মহিলার জন্য এবং তার সন্তানের জন্য অনেক উপকারী।
গর্ভাবস্থায় একজন মহিলাকে লৌহ সমৃদ্ধ খাবার যেমন ডিম, কলিজা, কাঁচাকলা, কচুশাক,
লালশাক, ডাটাশাক, পুঁইশাক ও মাংস ইত্যাদি এবং সবুজ শাকসবজি এবং টাটকা ফলমূল বেশি
করে খেতে হবে প্রতিদিন। তাহলেই গর্ভবতী মহিলায় এবং তার সন্তান দুজনে ভালো থাকবে।
সবুজ এবং রঙিন শাকসবজিতে
আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এবং মিনারেলসহ অনেক উপকারী ডায়াটেরি ফাইবার। আর
গর্ভাবস্থায় একজন মায়ের এ সকল শাকসবজি গ্রহণ করা খুব দরকার। সবুজ শাকসবজির
মধ্যে পুঁইশাক অন্যতম। প্রতি ১০০ গ্রাম পরিমাণে পুঁইশাকে আছে ১৯ কিলো ক্যালরি
শক্তি যা প্রাপ্তবয়স্ক একজন পুরুষের প্রতিদিনের শক্তির ০.৭৬% প্রাপ্তবয়স্ক একজন
মহিলার প্রতিদিনের শক্তির ০.৮৩% পূরণ করে থাকে। একজন গর্ভবতী মহিলার প্রথম তিন
মাস অনুযায়ী প্রতিদিনের শক্তির ১.০৬% এবং দ্বিতীয় তিন মাস অনুযায়ী প্রতিদিনের
শক্তির ০.৮৬%
আবার শেষ তিন মাসের অনুযায়ী প্রতিদিনের শক্তির ০.৭৬% পূরণ করে থাকে এই পুঁইশাক।
এছাড়াও এই শাকে আরো আছে শর্করা, আমিষ, সোডিয়াম, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম এবং
ফ্যাট। গর্ভাবস্থায় একজন মহিলাকে অনেক ফলিক এসিড এবং ভিটামিন সি গ্রহণ করতে হয়।
এছাড়াও প্রতিদিনের সর্বনিম্ন ৮৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি এবং সর্বোচ্চ দুই হাজার
মিলিগ্রাম গ্রহণ করতে পারবে একজন গর্ভবতী মহিলা। আবার একজন গর্ভবতী মহিলাকে
ভিটামিন সি এর অভাব পূরণ করতে সাহায্য করে এই শাক আর গর্ভাবস্থায় ভিটামিন সি খুব
দরকার।
আপনারা কি জানেন আমাদের দেশের ৯০ ভাগ গর্ভবতী মহিলার রক্তশূন্যতার সমস্যায় ভুগে
থাকেন আর ভিটামিন সি আমাদের রক্তের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ঠিক রাখে এবং এর ফলে
রক্তশূন্যতা রোধ করা সম্ভব হয়। এছাড়াও গর্ভাবস্থায় একজন গর্ভবতী মহিলাকে
ভিটামিন সি রক্ষা করে থাকে প্রিএকলামশিয়ার জটিল রোগ থেকে। এছাড়া এই শাকে রয়েছে
ফলিক অ্যাসিড যা একজন গর্ভবতী মহিলার জন্য খুব দরকার। প্রতি ১০০ গ্রাম পুই শাকে
আছে ১৪০ গ্রাম ফলিক এসিড যেটা একজন গর্ভবতী মহিলার প্রতিদিনের
চাহিদার ৩৫% পূরণ করতে সক্ষম এজন্য একজন গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকায় এই শাক
রাখা দরকার। এ ছাড়া একজন গর্ভবতী মা পুইশাক খাওয়ার ফলে রক্তশূন্যতা দূর করতে
পারবে কারণ এই শাকে আছে আইরন যার রক্তশূন্যতা দূর করতে সাহায্য করবে। আবার এই
শাকে আছে জিংক যেটা গর্ভবতী মহিলার পেটের বাচ্চাকে খাটো হওয়ার হাত থেকে রক্ষা
করবে। আবার গর্ভকালীন সময়ে ক্লান্তি এবং অবসন্নতা রোধ করতে সাহায্য করে জিংক।
পুঁইশাকে কি পুষ্টিগুণ রয়েছে এবং পুঁইশাক খাওয়ার উপকারিতা
আমাদের দেশে এখন সারা বছর এই পুঁইশাক পাওয়া যায় এবং এই শাক অনেক সহজলভ্য। এই
শাক এখন আমাদের সবার কাছেই খুব সুস্বাদু এবং পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ একটা শাক। আমাদের
স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য এর অনেক পুষ্টিগুণ আছে। এই শাকে আছে প্রোটিন
কার্বোহাইড্র ভিটামিন সি এ বি-৬ ক্যালসিয়াম পটাশিয়াম আয়রন ফাইবার ইত্যাদি। এতে
থাকা ভিটামিন সি আমাদের ত্বকের সুরক্ষার জন্য এবং বিভিন্ন সংক্রামক রোগ থেকে
রক্ষা করার জন্য এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য কাজ করে। এছাড়াও এতে
থাকা ফাইবার আমাদের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে,
হজম শক্তি বৃদ্ধি করে, খাবার হজমে সাহায্য করে। ভিটামিন এ আমাদের চোখের জন্য অনেক
ভালো। এই শাক খাওয়ার ফলে আমাদের পাইলস ফিস্টুল এবং হেমোরয়েড ইত্যাদি রোগ থেকে
খুব সহজে রক্ষা পাওয়া যায়। এছাড়াও এই শাক খাওয়ার ফলে আমাদের পাকস্থলী এবং
কোলন ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা কম থাকে এছাড়াও আরো অনেক উপকারিতা আছে এই শাকের
কারণ এই শাকে আছে অনেক পুষ্টিগুণ। এই শাক খাওয়া ছোট বড় প্রাপ্তবয়স্ক নারী
পুরুষ এবং গর্ভবতী মহিলা সকলের জন্য অনেক উপকারী।পুইশাকে রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ
এবং ভিটামিন।
প্রতি ১০০ গ্রাম পরিমাণের পুঁইশাকে রয়েছে
- প্রোটিন-২.২ গ্রাম
- কার্বোহাইড্রেট-৪ গ্রাম
- আয়রন-১০ মিলিগ্রাম
- জলীয় অংশ-৯২.০ গ্রাম
- খনিজ-১.৪ গ্রাম
- খাদ্য শক্তি-২৭ কিলো ক্যালরি
- চর্বি-০.২ গ্রাম
- ক্যালসিয়াম-১৬৪ মিলিগ্রাম
- ভিটামিন সি-৬৪ মিলিগ্রাম
- ক্যারোটিন-১২৭৫০ মাইক্রগ্রাম।
পুঁইশাক আমাদের সকলের কাছে একটা জনপ্রিয় এবং সুস্বাদু শাক। পুইশাকে আছে কম
পরিমাণে ক্যালরি এবং ফ্যাট এবং এতে ভিটামিন, খনিজ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আছে।
এখন প্রায় সারা বছরই এই শাক দেখা যায় এবং বাজারে পাওয়া যায়। এই শাক আমরা নানা
ভাবে রান্না করে খেয়ে থাকি। এই শাক খাওয়ার অনেক উপকারিতা আছে যেগুলো নিচে বলা
হলো
- পুইশাকে অনেক ফাইবার থাকে যেটা আমাদের হজম শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে থাকে।
- ছোট বাচ্চাদের নিয়মিত পুঁইশাক খাওয়ার ফলে তাদের বুদ্ধি ভালো হবে এবং শিশুদের বেড়ে ওঠার জন্য এই শাকের অনেক প্রয়োজন আছে কারণ এই শাকে আছে প্রোটিন এবং ভিটামিন আরো আছে অনেক রকমের খনিজ পদার্থ যেগুলো শিশুদের জন্য খুব প্রয়োজন।
- পুইশাকে আছে বিটা ক্যারোটিন, লুটেইন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ইত্যাদি উপাদান যেগুলো আমাদের ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখতে সাহায্য করে সেই সাথে আমাদেরকে নানা রোগের হাত থেকে রক্ষা করে থাকে।
- এই শাকে ভিটামিন এ আছে যেটা আমাদের দৃষ্টি শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে এবং আমাদের চুল মজবুত রাখতে ও সহায়তা করে থাকে।
- এই শাকের প্রতি ১০০ গ্রাম আমাদের প্রতিদিনের চাহিদার ১০০ ভাগের বেশি পাওয়া যায় ভিটামিন সি। আর ভিটামিন সি আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে।
- আমাদের প্রতিদিনের চাহিদার ১৫ ভাগ আয়রন পাওয়া যায় এই পুঁইশাক থেকে অর্থাৎ ১০০ গ্রাম পুঁইশাক থেকে আর এর কারণে আমরা রক্তশূন্যতার হাত থেকে রক্ষা পেতে পারি আমাদের রক্তশূন্যতা রোধ করা সম্ভব।
- এই শাকে আছে ভিটামিন বি-৬ এবং ফলিক এসিড ও রিভোফ্লাভিন যা গর্ভাবস্থায় একজন গর্ভবতী মা খাওয়ার ফলে তার শিশুর নার্ভ ভালো থাকবে।
- এই শাকে আছে বিভিন্ন রকমের খনিজ পদার্থ যেমন পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, কপার এবং ম্যাঙ্গানিজ আর পটাশিয়াম আমাদের রক্তচাপ কমাতে সহায়তা করে।
- এই শাকে আছে স্যাপোনিন উপাদান যেটা আমাদের ক্যান্সার রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। পুই শাকে রয়েছে ফাইবার যেটা আমাদের পাকস্থলী এবং কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে।
- পুইশাকে আছে ডায়াটেরি ফাইবার যেটা আমাদের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে হজম শক্তি উন্নত করে হয় খাবার হজমে সাহায্য করে।
- পুইশাক আমাদের বিভিন্ন সংক্রমণ রোগ থেকে রক্ষা করে যেমন ফোড়া এবং স্ক্যাব।
- নিয়মিত পুইশাক খাওয়ার ফলে আমাদের পাইলস ফিস্টুলা ও হেমোরয়েড ইত্যাদি রোগ হওয়ার আশঙ্কা কম হয় এবং এটা আমাদের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করতে সাহায্য করে।
- পুইশাক আমাদের ব্রণের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।
- পুইশাকে থাকা ফাইবার আমাদের শরীরের জমে থাকা বর্জ্য পদার্থ বের করতে সাহায্য করে।
- আপনারা যারা গ্যাস, বদহজম এবং এসিডিটির সমস্যায় ভুগছেন তারা এই শাক খেতে পারেন।
- শরীরে যদি কোন অংশ ফুলে যায় বা আঘাত লাগে তাহলে আপনারা এই গাছের শিকড় ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিয়ে সেটা বেটে আঘাত লাগা জায়গায় লাগাতে পারেন এতে আরাম পাওয়া যাবে।
- যাদের মাথা ব্যাথার সমস্যা আছে তারা এই শাক খেতে পারেন এতে করে মাথা ব্যথা থেকে আরাম পেতে পারবেন।
- পুঁইশাক খাওয়ার ফলে আপনাদের এনার্জি বাড়বে। এতে করে আপনাদের ক্লান্তি দূর হবে এবং কাজ করার জন্য শক্তি পাবেন।
- যাদের ডায়াবেটিস আছে তারা পয়সা খেতে পারেন এতে করে ডায়াবেটিস কমতে থাকবে। পুইশাকে আছে লিপোইক অ্যাসিড আর এই অ্যাসিড আমাদের রক্তের শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।
- পুঁইশাক খাওয়ার ফলে আপনাদের চোখ ভালো থাকবে অর্থাৎ আপনারা যারা চোখের নানা রকম সমস্যার তারা নিয়মিত এই শাক খেতে পারেন কারণ এই শাকে আছে অনেক পুষ্টি উপাদান যেগুলো আপনাদের চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করবে।
- ব্লাড প্রেসার কমায় এই শাক। যাদের ব্লাড প্রেসার এর সমস্যা আছে তারা পুঁইশাক খেলে ব্লাড প্রেসার কমে যাবে বা ঠিক থাকবে।
- পুইশাকে আছে ক্যালসিয়াম যা আপনাদের হাড় শক্ত করবে মজবুত করবে। আবার এই শাকে আছে ভিটামিন কে। ভিটামিন কে যদি আমাদের শরীরে কম প্রবেশ করে তাহলে আমাদের হাড় শক্ত মজবুত হবে না। এজন্য আপনাদের খাবার তালিকায় পুঁইশাক রাখা দরকার তাহলে আপনাদের হাড় শক্ত হবে মজবুত হবে।
- পুইশাকে থাকা ভিটামিন সি আমাদের ত্বকের নানা রকমের রোগ জীবাণু দূর করতে এবং শারীরিক বৃদ্ধিতে সাহায্য করে থাকে।
পুঁইশাক খাওয়ার অপকারিতা
আমাদের যেকোনো রকমের খাবারই পরিমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত অতিরিক্ত বেশি পরিমাণে
খাওয়া উচিত নয় এতে করে আমাদের স্বাস্থ্যের উপকারের চাইতে অপকার হবে। পুঁইশাক
খাওয়ার ফলে যেমন অনেক উপকারিতা পাওয়া যায় তেমনি এটা অতিরিক্ত বেশি পরিমাণে
খাওয়ার ফলে আমাদের নানা রকমের ক্ষতি হতে পারে। আপনারা উপরের আলোচনা থেকে পুঁইশাক
খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জেনেছেন এবার আপনারা জানবেন পুঁইশাক খাওয়ার অপকারিতা
সম্পর্কে
- পুঁইশাক যৌন ক্ষমতা কমিয়ে ফেলে। এজন্য যুবক বয়সে পুঁইশাক কম খাওয়া ভালো।
- এছাড়া যাদের যৌন সমস্যা রয়েছে তারা এই শাক খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন অর্থাৎ কম পরিমাণে খাবেন।
- এই শাক বেশি পরিমাণে খাওয়ার ফলে কিডনি রোগীদের সমস্যা হতে পারে তাদের কিডনিতে পাথর হওয়া আশঙ্কা আছে। আবার যাদের কিডনি রোগ আছে তারা পুঁইশাক খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে খাবেন।
- পুইশাকে থাকা অক্সালেট এবং পিউরিন নামক উপাদান আমাদের গেঁটেবাত এবং বাত ব্যথা রোগীদের জন্য মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। ইউরিক এসিড বাড়ানোর কাজ করে থাকে এই পিউরিন। এজন্য যাদের গেঁটেবাত এবং বাত ব্যথার সমস্যা আছে তারা পুইশাক খাবেন না
- বেশি পরিমাণে এই সাপ খাওয়া ফলে আপনাদের শরীরে পিউরিনের মাত্রা বাড়তে পারে। আর ইউরেনের মাত্রা বাড়ার ফলে আপনাদের ইউরিক অ্যাসিড এর পরিমাণও বেড়ে যাবে।
- আর আপনার শরীরে যদি ইউরিক এসিডের পরিমাণ বেড়ে যায় তাহলে এটা আপনার কিডনিকে ধ্বংস করে দেওয়ার কাজ করবে।
- পুঁইশাকে থাকা এই অক্সালেট পিত্ত রোগীদের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এটা পিত্ত রোগীদের জন্য নানা রকমের সমস্যার কারণ হতে পারে এবং পিত্তে পাথরের জন্য দায়ী হতে পারে। এজন্য যাদের পিত্তথলিতে পাথর আছে অথবা পিত্তের কোন সমস্যা আছে তারা পুঁইশাক খাওয়ার পূর্বে চিকিৎসকের সাথে কথা বলে তারপরে খাবেন।
- বেশি পরিমাণে পুঁইশাক খাওয়ার ফলে আপনাদের এক সময় কিডনির সমস্যা পিত্তথলির সমস্যায় এবং ইউরিক এসিডের সহ নানা রকমের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- রাতে পুঁইশাক খাওয়ার ফলে আপনাদের গ্যাসের সমস্যা বাড়বে। এছাড়া যাদের বাতের ব্যথা আছে তারা রাতে এই শাক খাবেন না। যাদের বদহজমের এবং গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা আছে তারা ও রাত্রে পুঁইশাক খাবেন না।
- রাত্রে পুঁইশাক খাওয়ার ফলে এগুলো আমাদের শরীরে তরল পদার্থে অক্সাইডের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয় এর ফলে আমাদের শরীরে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যার মত আরো নানারকমের সমস্যা হতে পারে।
- পুঁইশাক আপনারা যদি অনেক সময় নিয়ে বেশি তাপমাত্রায় রান্না করে খান তাহলে এর পুষ্টি মান নষ্ট হয়ে যায়। এটা আপনারা ভাপে সিদ্ধ করে এবং হালকা তেলে ভেজে তারপরে খেতে পারেন।
পুঁইশাক খেলে কি এলার্জি হয়
পুঁইশাক আমাদের সকলের কাছেই একটা জনপ্রিয় এবং সহজলভ্য সবজি এবং এটা আমরা সকলেই
খেতে খুব পছন্দ করি। পুঁইশাক খেলে কি এলার্জি হয় এ বিষয়ে অনেকের প্রশ্ন থাকে।
যাদের মনে এই প্রশ্ন আছে তারা আজকে আমার এই পোষ্টের মাধ্যমে তার উত্তর জেনে নিন।
পুঁইশাক একটা পুষ্টিকর এবং সুস্বাদু সবজি এটা আমাদের সকলেরই খাওয়া উচিত। পুঁইশাক
খেলে কি এলার্জি হয় বা আপনার এলার্জির সমস্যা আছে কিনা পুঁইশাকে এ প্রশ্নের
উত্তর জানার জন্য অবশ্যই আপনাকে পুঁইশাক খেতে হবে। এই শাক খাওয়ার পরে যদি আপনার
শরীরে কোন রকমের এলার্জির লক্ষণ
দেখা দেয় তাহলে বুঝতে হবে পুঁইশাকে আপনার এলার্জি আছে। যদি আপনার এলার্জির
সমস্যা হয় তাহলে আপনি পয়সা খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন। এছাড়া যদি এটা খাওয়ার
ফলে আপনার এলার্জির সমস্যা দেখা না দেয় তাহলে বুঝতে হবে আপনার এই শাক খাওয়ার
ফলে আপনার এলার্জি নেই। তবে অনেক মানুষের অনেক রকমের শাকসবজিতে এলার্জির সমস্যা
দেখা দিতে পারে। পুইশাকে এলার্জি আছে এটা আমার জানা মতে। যদি কারো এলার্জি সমস্যা
হয় এটা খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন। পুঁইশাকে
আপনার এলার্জি আছে কিনা এটা আপনাকে বুঝতে হবে।
লেখক এর মন্তব্য
প্রিয় পাঠক ম্যাক্সিমো ইনফো এখানে এই পোস্টের মাধ্যমে আপনাদের পুইশাক সম্পর্কিত
অনেক তথ্য দিয়েছে। পুঁইশাকে কি পুষ্টিগুণ রয়েছে এবং পুঁইশাক খাওয়ার উপকারিতা
আছে এই পোস্টটি পড়ার মাধ্যমে আপনারা তা জানতে পারবেন। এজন্য যদি আপনারা এই শাক
খাওয়ার অভ্যাস শুরু করেন তাহলে আমার এই পোস্টটি পড়ার মাধ্যমে অনেক উপকৃত হতে
পারবেন এজন্য আমাদের প্রতিদিনের খাবার তালিকায় এই শাক থাকা জরুরী। এই পোস্টটি
পড়ে যদি আপনাদের ভালো লাগে তাহলে আপনারা অবশ্যই এই পোস্টটি অন্যদের শেয়ার করে
দিবেন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url