পালং শাক খাওয়ার উপকারিতা এবং অপকারিতা অথবা পুষ্টিগুণ জানুন
আসসালামু আলাইকুম, আপনারা হয়তো আগে পালং শাক খাওয়ার উপকারিতা এবং অপকারিতা অথবা
পুষ্টিগুণ
ছাড়া পালং শাকের জুসের উপকারিতা সম্পর্কে অনেক সঠিক তথ্য খোঁজাখুঁজি করেছেন
কিন্তু পাননি যারা পাননে তারা আমার এই পোষ্টের মাধ্যমে জেনে নিতে পারেন। এজন্য
শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
আমার এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনারা পালং শাক সম্পর্কিত অনেক কয়েকটি তথ্য দেব
বিস্তারিতভাবে। যেগুলো পড়ে আপনারা অনেক উপকৃত এবং সঠিক তথ্য জানতে পারবেন। পালং
শাক খাওয়ার উপকারিতা এবং অপকারিতা অথবা পুষ্টিগুণ সহ পালং শাক খাওয়ার নিয়ম,
পালং শাকে কি এলার্জি আছে এ বিষয়ে আবার পালং শাকের জুসের উপকারিতা ইত্যাদি
বিষয়ে অনেক তথ্য দিয়েছি। পালংশাক আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী কারণ এতে
অনেক পুষ্টিগুণ এবং ভিটামিন উপাদান আছে। এ সকল বিষয়ের জানার জন্য শেষ
পর্যন্তপড়ুন।
ভূমিকা
পালং শাক আমাদের দেশের একটা পরিচিত এবং পুষ্টিকর শাক। কারণ এই শাকে আছে অনেক
পুষ্টিকর ভিটামিন এবং খনিজ উপাদান যেগুলো আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী।
আছে ভিটামিন এ, সি, ডি, কে, ই এবং ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম এবং
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ইত্যাদি। এ সকল উপাদান গুলো আমাদের শরীরকে রোগ প্রতিরোধ
ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে সেই সাথে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে, ক্যান্সার প্রতিরোধে,
হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে, চোখের ছানিপড়া রোধে এবং দৃষ্টি শক্তি উন্নতি করতে
সাহায্য করে থাকে। পালং শাক খাওয়ার ফলে আমরা এ সকল উপকারিতা পেয়ে থাকি। আবার
বেশি পরিমাণে খাওয়ার ফলে হতে পারে বমি, ডায়রিয়া, পেট ব্যথা করা ও পেট ফুলে
যাওয়া ইত্যাদি সমস্যা। যাদের কিডনিতে পাথর হওয়ার অসুখ আছে তাদের বেশি পরিমাণে
পালং শাক খাওয়া উচিত নয়। পালং শাকের জুস খাওয়ার ফলেও আমাদের হজম শক্তি উন্নত
হয়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে, দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি পায় এবং চোখের ছানি পড়া এর
ঝুঁকি কমানো সম্ভব হয়।
পালং শাকে কোন ভিটামিন থাকে
পালং শাক হচ্ছে আমাদের কাছে একটা জনপ্রিয় সবজি বা শাক। এই পালং শাক আমরা সকলে
খেতে পছন্দ করি। কারণ এই পালং শাকে থাকে অনেক রকমের ভিটামিন যেমন
ভিটামিন ই, এ, সি, কে, ডি, বি৩ ও ভিটামিন বি ২ ইত্যাদি আছে এছাড়াও আছে পটাশিয়াম,
ক্যালসিয়াম, আয়রন, ফাইবার, ম্যাগনেসিয়াম, প্রোটিন, ফসফরাস, কপার ও জিংক
ইত্যাদি। আর এ সকল উপাদান এবং ভিটামিন গুলো আমাদের শরীর স্বাস্থ্যের জন্য অনেক
উপকার করে এগুলো বাদেও এই পালং শাক আমাদের ত্বক এবং চোখের জন্য অনেক উপকারী।
পালং শাকে ভিটামিন এ আছে যেটা আমাদের চোখের জন্য অনেক ভালো। আবার এইশাকে অনেক
পরিমাণে ভিটামিন কে থাকায় এটি একটি ক্যালসিয়ামের ভালো উৎস হিসেবে বিবেচিত আর
ক্যালসিয়াম আমাদের হাড়ের জন্য অনেক উপকারী। পালং শাকে আছে ফাইবার যা আমাদের
খাবারে হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে এবং খাবার তাড়াতাড়ি হজমে সাহায্য করে
এর ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। এতে থাকা ভিটামিন এ এবং সি আমাদের ত্বকের জন্য অনেক
উপকারী। এটা আমাদের ত্বকের আদ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে।
উচ্চ মাত্রার ম্যাগনেসিয়াম যেটা আমাদের রক্তচাপ কমাতে সহায়তা করে। এক কাপ
পরিমাণে পালং শাক আমাদের প্রতিদিনের ফাইবারের চাহিদার ২০ শতাংশ পূরণ করে থাকে।
এবং এই শাকে থাকা ভিটামিন এ আমাদের রক্তের শ্বেত কণিকার মাত্রা ঠিক রাখতে এবং
আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে থাকে।আমাদের বিভিন্ন সংক্রমণ রোগের
হাত থেকে রক্ষা করে এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি ও চোখে ছানি পড়ার ঝুঁকি কমাতে সাহায্য
করে ও দৃষ্টি শক্তি উন্নত করে। আমাদের ত্বকের ব্রণ, বলি রেখা দূর করে এবংত্বককে
রাখে নরম কমল এবং মসৃণ।
পালং শাক খাওয়ার নিয়ম
পালং শাক আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী কারণ এতে আছে ভিটামিন এবং
প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান যেগুলো আমাদের শরীরে পুষ্টির যোগান দিয়ে থাকে। কিন্তু
এটা আমাদের খেতে হবে সঠিক নিয়ম করে। তবে আমরা আরো বেশি পুষ্টি পাব। আমরা পালং
শাক রান্না করে খেয়ে থাকি কিন্তু অতি তাপমাত্রায় রান্না করে খাওয়ার কারণে এর
পুষ্টিগুণ এবং এতে থাকা অনেক পুষ্টি উপাদান নষ্ট হয়ে যায় বা কমে যায়। সুইডেনের
লিংকোপিং বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় বলা হয়েছে যে রান্না নয় পালং শাক
এর বেশি পুষ্টি মাত্রা পাওয়া যাবে যদি আমরা কাঁচা অবস্থায় খেয়ে থাকি তাহলে।
কাঁচা
অবস্থায় পালং শাক খেলে এর পুষ্টিমান বজায় থাকে আর রান্না করার কারণে এর ভেতরে
থাকা এন্টিঅক্সিডেন্ট লুটেইন নষ্ট হয়ে যায়। লুটেইন সবুজ শাক-সবজিতে অনেক বেশি
থাকে কিন্তু পালং শাকে আরও বেশি থাকে। লুটেইন আমাদের রক্তে চর্বি জমার কারণে যে
রক্তনালী বন্ধ হয়ে যায় তার ঝুঁকি কমায় এবং সেই সাথে আমাদের রোগ প্রতিরোধ
ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। গবেষকরা পালং শাক বিভিন্ন
তাপমাত্রায় সেদ্ধ করে অথবা ভাবে রান্না করে এবং ভেজে দেখেছেন যে স্বাভাবিক
তাপমাত্রাতে পালং শাকের পুষ্টি গুণ বেশি থাকে। বেশি তাপমাত্রায় রান্না করার
কারণে এর পুষ্টি উপাদানের মাত্রা ও লুটেইন নষ্ট হয়ে যেতে থাকে। বেশি তাপে পালং
শাক ফ্রাই প্যানে রান্না অথবা ভাজি করলে এর লুটেইন ২ মিনিটের মধ্যেই কমে যেতে
পারে একেবারে। আবার গবেষকরা দেখেছেন যে, পালং শাক মাইক্রোওভেনে গরম করার কারণেও
এর লুটেইন কমে যেতে থাকে। এজন্য গবেষকরা
পালং শাক রান্না না করে খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। আমরা এই পালং শাক স্মুদি
তৈরি এবং সালাদ করে খেতে পারি এ কথা গবেষকরাও বলেছেন। এর সাথে আবার আমরা ক্রিম,
দই এবং দুধ মিশিয়ে নিলে আরো পুষ্টিকর হবে আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য।
পালং শাকে কি এলার্জি আছে
আমরা প্রতিদিনই প্রায় কমবেশি সব রকমের শাকসবজি খেয়ে থাকি। এ সকল সবজি বা
খাবারের মধ্যে কিছু খাবারে এলার্জি আছে আবার কিছু খাবারে এলার্জি নেই তবে এগুলো
ব্যক্তি বিশেষের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। পালং শাকের কি এনার্জি আছে এ বিষয়ে হয়তো
আমরা অনেকেই জানিনা আজকে তারা জেনে নিন। পালং শাক খাওয়ার ফলে অনেকের এলার্জি হতে
পারে তবে এটা খাওয়ার পরে যদি আপনাদের কারো এলার্জির কোন রকমের লক্ষণ দেখা দেয়
তাহলে বুঝতে হবে যে আপনার
পালং শাকে এলার্জি আছে। কারণ পালং শাক এর এলার্জি একটু বেশি হয় অন্যান্য খাবারের
এলার্জির চাইতে এর কারণ হচ্ছে এইসাকে আছে একটি প্রোটিন যা পরাগের মধ্যে থাকা
প্রোটিনের মত। আর যাদের এই পড়া থেকে এলার্জি এর সমস্যা হয় তাদের এটাতে ও সমস্যা
হতে পারে। যখন এই প্রোটিন আপনাদের নাক কান এবং ফুসফুসের আস্তরণের সংস্পর্শে আসবে
তখন এটি আপনাদের শরীরে এলার্জির প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে। এক্ষেত্রে আপনাদের নাক
বন্ধ হয়ে আসতে পারে অথবা
চোখে চুলকানি হতে পারে আবার শ্বাস নিতে কষ্ট ও হতে পারে। আবার কারো কারো কিছু
ক্ষেত্র বিশেষে অ্যানাফিল্যাক্সিস এর সমস্যা হতে পারে। এই সমস্যাটি কারো কারো
জীবনে হুমকির প্রতিক্রিয়া ঘটাতে পারে। যার কারনে গলা ফুলে যাওয়া থেকে শুরু করে
শ্বাস নিতে কষ্ট হয় এবং রক্ত চাপ কমে যাওয়া ইত্যাদি সমস্যা হতে পারে যা আপনার
জীবনের জন্য মারাত্মক। আপনাদের যদি কারো মনে হয় যে আপনার পালং শাক খাওয়ার কারণে
এলার্জির সমস্যা হচ্ছে তাহলে আপনারা অবশ্যই একজন এলার্জি বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের
পরামর্শ নিতে পারেন। কিন্তু প্রথমে আপনাকে নিশ্চিত হতে হবে যে আপনার পালং শাকে
এলার্জি আছে নাকি। যদি আপনার পালং শাকে অ্যালার্জি আছে কিনা তা জানার জন্য তারা
একটি ত্বক পরীক্ষা অথবা রক্ত পরীক্ষা করার মাধ্যমে আপনাকে জানাতে সক্ষম হবে। পালং
শাকের এলার্জি আছে এটা যতদূর জানা যায় কিন্তু সবার ক্ষেত্রে এরকম সমস্যা হয় না
কারো কারো হতে পারে আবার কারো নাও হতে পারে। আপনি যদি ভুল বসন্ত কোন কারনে পালং
শাক দেওয়া আছে এমন কিছু খাবার খান তাহলে আপনাকে সর্বদা আপনার সাথে একটি ইপিপেন
রাখা উচিত।
পালং শাকের জুসের উপকারিতা
পালং শাক আমরা রান্না করে ভাজি করে অথবা সেদ্ধ করে খেয়ে থাকি এর উপকারিতা
পাওয়ার জন্য। আবার অনেকে আমরা পালং শাকের সালাদ তৈরি করেও খেয়ে থাকি আমরা
অন্যান্য খাবারের সাথে। তবে পালং শাক রান্না করে খাওয়ার চাইতে কাঁচা অবস্থায়
খেলে বেশি পুষ্টি পাওয়া যাবে এবং এতে থাকা লুটেইন নষ্ট হবে না বা কমে যাবে না।
আমরা যদি রান্না করে খায় তাহলে এতে থাকা লুটেইন নষ্ট হয়ে যায়। আবার এর
উপকারিতা পাওয়ার জন্য আমরা অনেকেই পালং শাকের জুস খেয়ে থাকি।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার জন্য এবং ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই
করে থাকে এই পালং শাকের জুস। আবার আমাদের দেহকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে এজন্য
আমরা যদি এই পালং শাকের জুসের সাথে আরো কিছু উপাদান মিশিয়ে খায় তাহলে ফলাফল আরো
বেশি পাব। কারণ পালং শাকে আছে ভিটামিন এ, সি, কে,ডি, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন,
ফাইবার, ক্যালসিয়াম ও জিংক ইত্যাদি ভিটামিন এবং খনিজ উপাদান। এ সকল উপাদান গুলো
আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে রোগ
প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে অনেক সাহায্য করে থাকে। এছাড়াও আমরা যদি পালং শাকের
সাথে আরো কিছু উপাদান মিশিয়ে জুস বানিয়ে খায় তাহলে তা আমাদের ইমিউনিটি বাড়াতে
এবং ক্যান্সার কোষের বিরুদ্ধে লড়াই করতে আরো বেশি সাহায্য করবে এবং এর ফলে আমরা
আরো বেশি ভালো ফলাফল পাব। তবে আসেন জানা যাক পালং শাকের জুসের উপকারিতা সম্পর্কে
হজম শক্তির উন্নতি ঘটায়ঃ পালং শাকে আছে প্রচুর পরিমাণে এমাইনো এসিড যা
আমাদের শরীরে মেটাবলিজম বাড়াতে সাহায্য করে এবং হজমের উন্নতি ঘটায়। আপনাদের হজম
শক্তির উন্নতি ঘটানোর জন্য এজন্য আপনারা নিয়মিত পালং শাকের জুস খেতে পারেন।
ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে থাকেঃ পালং শাকে থাকে অনেক পরিমাণে পটাশিয়াম।
আর এই খনিজ টি আমাদের শরীরে প্রবেশ করা মাত্র তা সোডিয়াম হারিয়ে যাওয়ার
ভারসাম্য ফিরে আসতে সাহায্য করে। এর ফলে স্বাভাবিকভাবে আমাদের দেহের রক্তচাপ
নিয়ন্ত্রণে চলে আসে অথবা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার শঙ্কা কমে যায়।
পালং শাকে থাকা ফলেট আমাদের ব্লাড প্রেসার স্বাভাবিকভাবে রাখতে সাহায্য করে।
এজন্য যারা হাই ব্লাড প্রেসার এর সমস্যায় ভুগছেন তারা নিয়মিত পালং শাকের জুস
খেতে পারেন।
দৃষ্টিশক্তির উন্নতি ঘটাতেঃ পালং শাকে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ বিটা
ক্যারোটিন লুটেইন ও জ্যান্থিন যেগুলো আমাদের চোখের রেটিনার ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলে
যার মধ্য দিয়ে আমাদের চোখের দৃষ্টি শক্তি এর উন্নতি ঘটে।
ত্বকের ভেতরে প্রদাহ কমাতেঃ এই শাকের মধ্যে আছে নিয়োক্সেথিন এবং
ভায়োল্যাক্সানথিন নামের দুইটি এন্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান আছে যেগুলো আমাদের দেহের
পাশাপাশি ত্বকের ভেতরের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
পালং শাক এবং টমেটোর রসঃ পালং শাকের সাথে আমরা যদি টমেটো রস একসাথে করে
পান করি তাহলে আমাদের শারীরিক দুর্বলতা অলসতা এবং ক্লান্তি ভাব দূর হয়ে যাবে
এছাড়াও এই জুস প্রতিদিন পান করার ফলে আমাদের ত্বকের বলি রেখা দূর হবে।
মধু,কালো গোলমরিচ ও পালং শাকঃ পালং শাকের জুসের সাথে যদি আমরা মধু এবং
সামান্য পরিমাণে গোলমরিচ মিশিয়ে জুস করে পান করি তাহলে আমাদের ঠান্ডা লাগার
কারণে কাশি এর প্রবণতা তাড়াতাড়ি কমে যাবে।
পালং শাক এবং গাজরের রসঃ আবার আমরা যদি পালং শাকের সাথে গাজরের রস মিশিয়ে
একসাথে করে জুস বানিয়ে পান করে থাকে তাহলে আমাদের রক্তস্বল্পতা সমস্যা দূর হয়ে
যাবে। এছাড়া ত্বকের নানা রকম সমস্যা থেকে আমরা মুক্তি পাব এবং আমাদের শরীরের
ক্ষত তাড়াতাড়ি সেরে উঠবে।
পালং শাক এবং লেবুর রসঃ আবার আপনারা পালং শাকের জুস তৈরি করার সময় এর
সাথে লেবুর রস মিশিয়ে পান করতে পারেন এতে করে আপনাদের কিডনিতে পাথর হওয়ার
সম্ভাবনা কমে যাবে। এটা আপনারা দিনে দুবার খেতে পারেন তাহলে এর উপকারিতা আপনাদের
নজরে পড়বে।
পালং শাক এবং সিলারিঃ পালং শাকের সাথে যদি আপনারা সিলারি মিশিয়ে একসাথে
জোস বানিয়ে খেতে পারেন তাহলে আপনাদের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর হয়ে যাবে এবং
আপনাদের পেটে কৃমি এর সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন।
পালং শাক খাওয়ার উপকারিতা এবং অপকারিতা অথবা পুষ্টিগুণ
পালং শাক আমাদের দেশে একটা জনপ্রিয় ও পরিচিত শাক। এই শাক আমরা সবজি হিসেবে অথবা
শাক হিসেবে খেয়ে থাকি। এই শাক খাওয়ার ফলে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে,
হজমের উন্নতি হয় এছাড়াও ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা
রাখে এই শাক। কারণ এই পালং শাকে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও খনিজ উপাদান যেমন
ভিটামিন এ, কে, সি, ই এছাড়াও ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম, আয়রন ও
ফাইবার ইত্যাদি উপাদান। এ সকল উপাদান
গুলো আমাদের শরীরের জন্য খুব উপকার করে এবং বিভিন্ন রোগের হাত থেকে আমাদের রক্ষা
করে থাকে। এজন্য এখন আমরা জানবো পালং শাক খাওয়ার উপকারিতা এবং অপকারিতা অথবা
পুষ্টিগুণ সম্পর্কে। পালং শাক খাওয়ার উপকারিতা গুলো কি কি সেগুলো নিচে দেওয়া হল
- পালং শাকে রয়েছে উচ্চ মাত্রার ম্যাগনেসিয়াম যেটা আমাদের রক্তচাপ কমাতে সহায়তা করে থাকে।
- এই শাকে থাকা ভিটামিন এ আমাদের রক্তের শ্বেত কণিকা তৈরিতে সাহায্য করে এবং বিভিন্ন সংক্রমণ ও রোগ থেকে আমাদের রক্ষা করে থাকে।
- এতে থাকা বিভিন্ন ধরনের ফ্ল্যাভোনয়েড ক্যান্সার ও বিভিন্ন জটিল রোগ এর বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং আমাদের কে এ সকল জটিল রোগ থেকে রক্ষা করে থাকে।
- পালং শাকে আছে বিটা ক্যারোটিন যা আমাদের চোখের পানি পড়ার ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে।
- চোখের দৃষ্টি শক্তি উন্নতি করতে সাহায্য করে।
- এতে আছে ফলিক এসিড যা আমাদের হৃদযন্ত্রের সুরক্ষার জন্য অনেক উপকারে আসে।
- এতে থাকা ক্লোরোফিল এর মাত্রা বেশি থাকে এবং এতে ক্যারোটিনয়েড এর পরিমাণ বেশি থাকে যার ফলে আমাদের শরীরের বিভিন্ন ব্যথা কমাতে এবং ক্যান্সার প্রতিরোধক হিসেবে কাজ আমাদেরকে সহায়তা করে।
- পালং শাকের বীজ আমাদের কৃমি এবং মূত্রের রোগ সারাতে সাহায্য করে।
- এই শাকের কচি পাতা ফুসফুস, কন্ঠনালীর বিভিন্ন সমস্যা এবং শরীর জ্বালাপোড়া করার সমস্যা কমাতে সহায়তা করে।
- এই পাতার রস পোড়া ঘায়ে, ব্রণের সমস্যায়, ক্ষতস্থানে এবং শরীরের কোথাও ব্যথার জন্য কালচে হয়ে গেলে এর প্রলেপ দিলে আরাম পাওয়া যায়।
- পালং শাকে আছে আয়রন এজন্য এই সাপ খাওয়ার ফলে আমাদের রক্তে আয়রনের মাত্রা বেড়ে যায়।
- পালং শাকে আছে ফাইবার এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এছাড়াও আরো অনেক ভিটামিন এবং খনিজ উপাদান আছে এগুলো আমাদের শরীরে প্রবেশ করার পরে আমাদের শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমতে থাকে এবং মেদ ঝরে যায়।
- এই শাক খাওয়ার ফলে আমাদের কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে বা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়।
- এই শাকে আছে পটাশিয়াম আর এই খনিজ উপাদানটি আমাদের শরীরে লবণের হারিয়ে যাওয়ার ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে থাকে।
- রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে এই শাক।
- পালং শাকে প্রচুর পরিমাণে আঁশ জাতীয় উপাদান থাকে যা আমাদের খাবার হজম করতে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করতে ও সাহায্য করে থাকে।
- এটা আমাদের ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে ব্রণ, বলিরেখা ও বয়সের ছাপ পড়া থেকে আমাদের রক্ষা করে থাকে এবং আমাদের ত্বককে করে নরম, কোমল এবং সুন্দর।
- আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে এবং হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখতে ও সাহায্য করে থাকে।
- এই শাক আমাদের রক্ত বৃদ্ধি করে থাকে এবং রক্ত পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। জন্ডিস রোগীদের জন্য এই শাক খাওয়া অত্যন্ত উপকারী।
আমাদের সকল রকমের খাবারে নিয়মিত পরিমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত পরিমাণ এর চাইতে
বেশি খেলে এটা আমাদের স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে উপকারের চাইতে অপকার বেশি হবে। উপরের
আলোচনা থেকে আমরা পালং শাক খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জেনেছি এবার আমরা জানবো
পালং শাক খাওয়ার কিছু অপকারিতা সম্পর্কে। তবে জেনে নেওয়া যাক পালং শাক খাওয়ার
অপকারিতা গুলো কি কি
- পালং শাকে ক্যালসিয়াম থাকে আর এই ক্যালসিয়াম বেশি পরিমাণে গ্রহণ করার ফলে আমাদের হৃদ রোগ হতে পারে।
- এই শাকে আছে ফাইবার আর ফাইবার উপাদান বেশি পরিমাণে আমাদের পেটে গেলে আমাদের পেট ফাঁপা পেটে ফোলা ভাব এবং পেটে ক্র্যাম্প হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- পালং শাকে থাকা বিটা কেরোটিন ধূমপান করা ব্যক্তিদের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে এজন্য পালং শাক বেশি পরিমাণে খাওয়া উচিত নয়।
- পালং শাক হচ্ছে পটাশিয়াম সমৃদ্ধ এজন্য পালং শাক বেশি পরিমাণে খাওয়ার ফলে বমি এবং ডায়রিয়া হতে পারে।
- যাদের কিডনি সংক্রান্ত অর্থাৎ বিশেষ করে কিডনিতে পাথরের সমস্যা আছে তাদের পালং শাক খাওয়া থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে। বেশি পরিমাণে পালং শাক খেলে এ সকল ব্যক্তিদের সমস্যা আরো বেড়ে যেতে পারে।
- যাদের পালং শা খাওয়ার ফলে এলার্জির সমস্যার হয় তাদের পালন শাক খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত।
- এইসাকে থাকে প্রচুর পরিমাণে অক্সালেট এজন্য এই শাক বেশি পরিমাণে খাওয়ার ফলে কিডনিতে পাথর তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- আবার এই শাকে থাকে ভিটামিন কে যা রক্ত পাতলা করার ওষুধের সাথে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে থাকে। এজন্য যারা এমন কোন রকমের ঔষধ সেবন করেন তাহলে পালং শাক খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন।
- অনেক গবেষণা থেকে জানা যায় যে অক্সালেট সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার কারণে তা আমাদের শরীরে খনিজ শোষণে বাধা সৃষ্টি করে। আর পালং শাকে থাকে অক্সালেট যা ক্যালসিয়ামের শোষণে নিয়ে বাধা সৃষ্টি করে থাকে।
পালং শাক আমাদের সকলের কাছেই একটা পরিচিত এবং সুস্বাদু শাক। আমরা ভাজি করে ঝোল
করে অথবা সেদ্ধ করে আবার সালাদ বানিয়ে ও খেয়ে থাকি। কারণ এই শাকের অনেক পুষ্টি
উপাদান এবং খনিজ পদার্থ আছে যেটা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। এই শাক
খাওয়ার ফলে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে, কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা দূর হয়,
কিডনি রোগ প্রতিরোধ করা যায়, ক্যান্সার প্রতিরোধ করা যায়, হৃদযন্ত্র ভালো থাকে,
প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে, চোখের ছানি পড়া সমস্যা দূর করে
এবং দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে থাকে ইত্যাদি এছাড়াও নানা উপকারিতা
আছে এই শাকের। এই শা খাওয়ার ফলে আমরা নানারকমের ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে
লড়াই করতে পারি এবং সুস্থ থাকতে পারি এজন্য আমাদের খাবার তালিকায় এই শাক থাকা
উচিত। এই শাকের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো। প্রতি ১০০ গ্রাম পরিমাণে
পালং শাকে আছে
- প্রোটিন এর পরিমাণ-২.০ গ্রাম
- কার্বোহাইড্রেট এর পরিমাণ-২.৮ গ্রাম
- আয়রন আছে-১১.২ মিলিগ্রাম
- আঁশ আছে-০.৭ গ্রাম
- ফসফরাস এর পরিমাণ-২০.৩ মিলিগ্রাম
- রিবোফ্লোবিন আছে-.০৮ মিলিগ্রাম
- অক্সালিক এসিড আছে-৬৫২ মিলিগ্রাম
- ক্যালসিয়াম আছে-৭৩ মিলিগ্রাম
- পটাশিয়াম আছে-২০৮ মিলিগ্রাম
- ভিটামিন এ আছে-৯৩০০ আই ইউ
- ভিটামিন সি আছে-২৭ মিলিগ্রাম
- থায়ামিন আছে-দশমিক ০৩ মিলিগ্রাম
- নিকোটিনিক এসিড আছে-০.৫ মি. গ্রাম।
গর্ভাবস্থায় পালং শাক খাওয়ার উপকারিতা
গর্ভাবস্থায় পালং শাক খাওয়া অনেক উপকারী কারণ এই শাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন
এ, সি, ডি, কে ও ই ছাড়াও আয়রন, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, কপার,
জিংক, ফাইবার, ফোলেট এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান আছে। এজন্য আমাদের খাদ্য
তালিকায় গর্ভবতী মায়েদের পালং শাক দেওয়া উচিত। এটি যেমন পুষ্টির যোগান দিবে
এবং গর্ভবতী মায়েকে সুস্থ রাখবে এর পাশাপাশি এর গর্ভে থাকা শিশুর জন্য অনেক
উপকার করবে। গর্ভাবস্থায় পালং শাক খাওয়া যাবে কিন্তু পরিমিত পরিমাণে।
এই শাকে প্রচুর পরিমানে ফলিক অ্যাসিড থাকে যেটা গ্রহণ করার ফলে জন্মগত বিকৃতি
এড়াতে সাহায্য করে। এ সকল নানা উপকারী তার জন্য গর্ভবতী মায়েদের পরিমিত পরিমাণে
পালং শাক খাওয়া উচিত। আর যদি কোন গর্ভবতী মহিলার কিডনিতে পাথর হওয়ার সম্ভাবনা
থাকে তাহলে তাকে অল্প পরিমাণে পালং শাক খেতে হবে। এবার আমরা জানবো গর্ভাবস্থায়
পালং শাক খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে
ফলিক এসিড এবং আয়রনঃ গর্ভাবস্থায় একজন গর্ভবতী মায়ের শরীরের রক্তের
পরিমাণ ৩০% থেকে ৫০% বৃদ্ধি পায় আর তাদের শরীরে এ সময় আয়রন এবং ফলিক এসিডের
প্রয়োজনীয়তা বাড়াতে পারে। নিয়মিত পরিমিত পরিমাণে পালং শাক খেলে আয়রন এবং
ফলিক এসিডের সরবরাহ করতে সাহায্য করতে পারা যায়।
ভিটামিনঃ পালং শাক ভিটামিনের একটি ভালো উৎস। এজন্য এই শাক খাওয়ার ফলে রোগ
প্রতিরোধ ক্ষমতা আরো শক্তিশালী হবে। গর্ভবতী মায়েরা যদি এই শাক খায় তাহলে তাদের
ভিটামিন এ এর চাহিদা পূরণ হবে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আরো শক্তিশালী ও উন্নত
হবে। এছাড়াও ভিটামিন বি থাকার কারণে এই শাক গর্ভবতী মায়েরা খেলে গর্ভের শিশুর
স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশ ঘটিয়ে থাকে বা সাহায্য করে।
ক্যালসিয়ামঃ পালং শাকে ক্যালসিয়াম আছে আর গর্ভবতী মায়েরা এই শাক
খাওয়ার কারণে তাদের রক্তচাপের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হবে।
লেখকের মন্তব্য
প্রিয় পাঠক ম্যাক্সিমো ইনফো তার এই পোস্টের মাধ্যমে আপনাদের জন্য পালং শাক
সম্পর্কিত অনেক তথ্য দিয়েছে যেমন পালং শাক খাওয়ার উপকারিতা এবং অপকারিতা অথবা
পুষ্টিগুণ ছাড়া পালং শাকের জুসের উপকারিতা, গর্ভাবস্থায় পালং শাক খাওয়ার
উপকারিতা এবং পালং শাক খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে। আপনারা যদি পালং শাক খেতে পছন্দ
করেন এবং খেয়ে থাকেন তাহলে আমার এই পোস্টটি পড়ার মাধ্যমে অনেক তথ্য জানতে
পারবেন। এজন্য আপনাদের বলছি আপনাদের যদি এই পোস্টটি ভালো লাগে তাহলে অবশ্যই
শেয়ার করে দিবেন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url