ওজন কমাতে গ্রিন টি খাওয়ার নিয়ম জেনে নিন
আসসালামু আলাইকুম, আপনারা হয়তো আগে
ওজন কমাতে
গ্রিন টি খাওয়ার নিয়ম এবং গ্রিন টি এর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে অনেক সঠিক
তথ্য খোঁজাখুঁজি করেছেন বিস্তারিতভাবে কিন্তু পাননি। যারা পান নিয়ে তারা আমারে
পোষ্টের মাধ্যমে সঠিক তথ্য জেনে নিন। এ সকল তথ্য জানার জন্য আপনাদের শেষ পর্যন্ত
পড়ার অনুরোধ রইল।
আমার এই পোস্টের মাধ্যমে আপনারা গ্রিন টি সম্পর্কিত অনেক তথ্য বিস্তারিতভাবে
জানতে পারবেন যেটা আমি আপনাদের জন্য বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছি। ওজন কমাতে গ্রিন
টি খাওয়ার নিয়ম ছাড়াও আসল গ্রিন টি চেনার উপায়, গ্রিন টি এর উপকারিতা ও
অপকারিতা, সকালে খালি পেটে গ্রিন টি খাওয়ার অপকারিতা সহ গ্রিন টি তৈরির নিয়ম
ইত্যাদি বিষয়ে। গ্রিন টি আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকার করে এবং ওজন কমাতে
সাহায্য করে এজন্য আমাদের সঠিক নিয়মে খেতে হবে। এ সকল বিষয়ে জানতে শেষ পর্যন্ত
পড়ুন।
ভূমিকা
গ্রিন টি এখন সারা বিশ্বে খুব জনপ্রিয় একটা পানীয় কারণ এই পানীয় আমাদের
স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকার করে। শুধু যে স্বাস্থ্যের উপকার করে তাই নয় এটা
আমাদের রূপচর্চা এবং ওজন কমাতে সাহায্য করে। ওজন কমানোর জন্য গ্রিন টি পান করতে
হবে ভারী খাবার খাওয়ার দুই ঘন্টা আগে অথবা পরে। এটা খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরের
বিপাক হার বাড়ায় এবং খাবার তাড়াতাড়ি হজম হয় এর ফলে আমাদের ওজন তাড়াতাড়ি
কমে। আবার গ্রিন টি পান করার ফলে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে,
হজম শক্তি বাড়ে, ক্যান্সার প্রতিরোধ, টাইপ ২ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ এছাড়াও উচ্চ
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। সকালে খালি পেটে গ্রিন টি খাওয়ার ফলে আমাদের
স্বাস্থ্যের অনেক ক্ষতি হতে পারে। আমাদের পেটের ব্যথা, পাকস্থলীতে এসিডের মাত্রা
এবং রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে ইত্যাদি আরও অনেক অপকারিতা আছে। এটা আমাদের চোখের
জন্যেও অনেক ক্ষতি করে। আসল গ্রিন টি আমরা চিনতে পারি এর পাতার আকার হয় বড় এবং
এর গন্ধ হয় হালকা কচি ঘাসের মত এবং সতেজ।
আসল গ্রিন টি চেনার উপায়
আমরা এখন প্রায় সকলে গ্রিন টি পান করে থাকি। কারণ এই গ্রিন টি আমাদের শরীরে
জারিত হয় না এবং এই চা অন্য সব চায়ের তুলনায় অনেক বেশি স্বাস্থ্যকর। এই চা পান
করার ফলে আমাদের শরীরে কোন রকমের খারাপ কোলেস্টেরল ও ট্রাইগ্লিসারাইড জমে না।
আবার এইচা আমাদের শরীরে মেটাবলিজমের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে এবং আমাদের শরীর
থেকে তাড়াতাড়ি ফ্যাট ঝরতে সহায়তা করে থাকে। কিন্তু বর্তমানে এখন বাজারে অনেক
রকমের ভেজাল মিশ্রিত গ্রিন টি পাওয়া যায়
এগুলো আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এ সকল ভেজাল গ্রিন টি কেনা থেকে আমাদের
বিরত থাকতে হবে এবং আসল গ্রিন টি চিনে সেটা কিনতে হবে। কিন্তু আমরা অনেকেই আছে
যারা সহজেই আসল গ্রিন টি চিনতে পারিনা যার ফলে ভেজাল গ্রিন টি কিনে ফেলি অনেক
সময়। আসল গ্রিন টি চেনার অনেকগুলো উপায় আছে এগুলো যদি আপনারা জানেন তাহলে সহজেই
কিনতে পারবেন আসল গ্রিন টি। আসল গ্রিন টি তে আছে বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য যেগুলো জানা
থাকলে আপনারা
সহজেই আসল গ্রিন টি চিনে তারপরে সেটা কিনতে পারবেন। তাহলে আপনারা জেনে নিন আসল
গ্রিন টি চেনার উপায়
- গ্রিন টি কেনার সময় আপনারা টি ব্যাগ এড়িয়ে চলবেন।
- এর পাতার আকার বড় হয়।
- গ্রিন টি চাষ করা হয়ে থাকে মার্চ এপ্রিল মাসে এজন্য এর পুষ্টি গুন ও এ সময় বেশি পাওয়া যায়।
- আসল গ্রিন টি আপনারা ছয় মাসের বেশি রাখতে পারবেন না।
- চা মিশিয়ে আপনারা কখনোই গ্রিন টি খাবেন না।
- গ্রিন টি কেনার সময় তার প্যাকেটে ইজিসিজি আছে কিনা তা দেখে কিনবেন।
- গ্রিন টির গন্ধ হয় হালকা, কচি ঘাসের মতন এবং সতেজ।
- গ্রিন টি আপনারা রাখবেন কাঁচ অথবা পোর্সেলিনের বদ্ধ পাত্রে করে।
- আসল গ্রিন টি এর পাতা গরম পানিতে প্রথমে জলপাই সবুজ রং ধারণ করে।
- কিছু সময় পরে এর রং পরিবর্তন হয়ে যায় এবং হালকা সবুজ রঙের হয়। যেরকম কাঁচা পাতার রং হয়।
- গ্রিন টি নকল বা ভেজাল হলে সেটা পানিতে ফোটানোর পরে কালচে অথবা বাদামি রঙের হয়ে যায় আবার পরে এর রঙের কোন পরিবর্তন হয় না।
- এই গ্রিন টি খাওয়ার বিষয়ে আপনাদের কিছু জিনিস লক্ষ্য রাখতে হবে সেগুলো হল গ্রিন টি তে আপনারা কখনোই দুধ মিশিয়ে খাবেন না এতে দুধ মিশিয়ে খাওয়া ঠিক নয়। ওয়ার্ক আউট এর আগে অথবা পরে গ্রিন টি খাওয়া যাবে।
গ্রিন টি তৈরির নিয়ম
আমাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য গ্রিন টির অনেক ভূমিকা আছে কারণ এতে আছে
ফ্লাভোনোয়েড উপাদান যেমন ক্যাফেইন, থিয়ানিন এবং ফেনল জাতীয় যৌগ ইত্যাদি এছাড়াও
দ্রবণীয় উপাদান হিসেবে আছে এমাইনো এসিড, ভিটামিন বি১ এবং বি২ আছে ভিটামিন সি এবং
ন্যাচারাল সুগার। গ্রিন টি আমাদের শরীরে জারিত হয় না এবং এই যা অন্য সব চায়ের
তুলনায় আমাদের জন্য স্বাস্থ্যকর। গ্রিন টি আমাদের শরীরে খারাপ কোলেস্টেরল এবং
ট্রাইগ্লিসারাইড জমতে দেওয়ার কাজ করে না। এছাড়াও আরো অনেক উপকারিতা আছে এর।
জন্য আমাদের গ্রিন টি তৈরি করার নিয়ম জানতে হবে এবং সেই অনুযায়ী গ্রিন টি তৈরি
করে তা পান করতে হবে তাহলে আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য সেটা উপকার হবে। গ্রিন টি
বানানোর জন্য আমাদের লাগবে গ্রিন টিপাতা বা গ্রিন টি ব্যাগ আর এক চামচ পরিমাণে
মধু আর লাগবে পাতি লেবু ১/২ ও বিট লবণ। প্রথমে আপনারা একটি সসপ্যানে পানি নিয়ে
সেই পানি ভালোভাবে ফুটিয়ে নিন। তারপরে সেই পাত্র নামিয়ে তাতে গ্রিন টি ব্যাগ
অথবা গ্রিন টিপাতা দিয়ে পাঁচ থেকে দশ মিনিটভালোভাবে চাপা দিয়ে রেখে দিন। এরপরে
আপনারা একটি কাপে মধু, বিট লবণ এবং
লেবুর রস পরিমাণ মতো পরিমাণে দিয়ে তাতে চা ছেঁকে নিয়ে নিন এরপর একটি চামচের
মাধ্যমে এই চাটা ভালোভাবে নাড়িয়ে নিন এবং এতে আপনারা মধু ভালোভাবে গুলিয়ে
নিবেন। চামচের মাধ্যমে নাড়ার পরে মধু ভালোভাবে গুলে যাবে। আপনাদের গ্রিন টি
খাওয়ার সময় কিছু বিষয় এ নজর দিতে হবে। গ্রিন টি আপনারা কখনো খালি পেটে খাবেন
না। আপনারা এতে দুধ ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকবেন। গ্রিন টি খাওয়ার সময় আপনারা
ঠান্ডা গ্রিন টি এড়িয়ে চলবেন। গ্রিন টি পানের সঠিক সময় হচ্ছে বিকেলবেলা
অথবা সন্ধ্যা বেলা।
গ্রিন টির দাম কত
বর্তমানে এখন বাজারে ছোট বড় প্যাকেটের গ্রিন টি ব্যাগ পাওয়া যায় এবং ছোট বড়
প্যাকেটের দাম আলাদা আলাদা। ব্লেন্ডারস চয়েস প্রিমিয়াম গ্রিন টি ব্র্যান্ড এর
লুজ টি ব্যাগ ১০০ গ্রাম পরিমান প্যাকেটের সর্বোচ্চ খুচরা দাম হচ্ছে ১৭৫ টাকা।
আবার ব্লেন্ডারস চয়েস প্রিমিয়াম গ্রিন টি ব্যাগ ইন ব্যাগ টি ব্যাগস এর ২৫ টি টি
ব্যাগের দাম হচ্ছে ১১০ টাকা আর এই প্যাকেটের সাইজ হবে ৩৫ গ্রাম। আবার ৫০ টির
গ্রিন টি ব্যাগস এর প্যাকেটের সাইজ হচ্ছে ৭০ গ্রাম এই প্যাকেটের দাম হচ্ছে ২০০
টাকা।
গ্রিন টি খাওয়া উচিত নয় কাদের
গ্রিন টি পান করা আমাদের সকলের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারি কারণ এতে আছে
ভিটামিন সি ভিটামিন ডি ও ক্যালসিয়াম এর মত অনেক পুষ্টি উপাদান। অনেক পুষ্টিগুণ
এবং স্বাস্থ্য গুনে ভরপুর হওয়া সত্ত্বেও গ্রিন টি পান করা আমাদের সকলের
স্বাস্থ্যের জন্য উপকারিতা বয়ে নিয়ে আসে না কিছু মানুষের স্বাস্থ্যে এটা ক্ষতির
কারণ হতে পারে। এজন্য কিছু মানুষের গ্রিন টি খাওয়া উচিত নয় তবে আসন জানা যাক
গ্রিন টি খাওয়া উচিত নয় কাদের জন্য
চোখে ছানি পড়া রোগীরঃ গ্রিন টি যাদের চোখে ছানি পড়ার সমস্যা আছে তাদের
খাওয়া উচিত নয়। গ্রিন টি আপনাদের চোখের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। ছানি পড়া
রোগের গ্রিন টি পান করার ফলে তাদের চোখের ওপর চাপ পড়ে এতে করে তাদের চোখের ক্ষতি
হতে পারে।
হজম শক্তি দুর্বল থাকলেঃ যাদের খাবার হজম করার শক্তি দুর্বল তাদের গ্রিন
টি পান করা উচিত নয় এতে তাদের ক্ষতি হতে পারে। গ্রিন টি তে থাকা ট্যানিন
উপাদানটি আমাদের পাকস্থলীতে এসিড বাড়াতে সাহায্য করে যার ফলে দুর্বল হজম শক্তি
সম্পন্ন ব্যক্তিদের পেট ফাঁপার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
গর্ভাবস্থায়ঃ প্রত্যেক গর্ভবতী মহিলাকে গর্ভাবস্থায় খাবার খাওয়ার
বিষয়ে অনেক সচেতন থাকতে হয়। এ সময় এজন্য আপনাদের গ্রিন টি পান করা উচিত নয়।
কারণ গ্রিন টিতে থাকা ক্যাটেচিন নামের যৌগ তাদের গর্ভাবস্থায় উদ্বেগ বাড়াতে
সাহায্য করে এবং সন্তানের জন্য এটা ক্ষতি হতে পারে। এজন্য গর্ভবতী মহিলাদের
গর্ভাবস্থায় গ্রিন টি পান করা একদমই উচিত নয়।
রক্তস্বল্পতার রোগীদেরঃ যাদের রক্তশূন্যতার সমস্যা আছে তাদের গ্রিন টি পান
করা উচিত নয় এতে করে তাদের ক্ষতি হতে পারে। গ্রিন টি পান করার কারণে তাদের শরীর
আয়রনকে সঠিকভাবে শোষণ করতে পারবেনা এতে ক্ষতি হতে পারে তাদের।
সকালে খালি পেটে গ্রিন টি খাওয়ার অপকারিতা
গ্রিন টি পান করার উপকারিতা কথা আমরা অনেকেই জানি। এটা পান করার ফলে আমাদের
সুস্বাস্থ্য ধরে রাখা সম্ভব হয় এজন্য বিশেষজ্ঞরা আমাদের প্রতিদিন এক কাপ গ্রিন
টি পান করার কথা বলেন। আবার অনেকের অভ্যাস আছে যারা সকালে খালি পেটে গ্রিন টি পান
করার তারা মনে করেন এতে করে উপকারিতা আরো বেশি পাওয়া যাবে কিন্তু এটা করা ঠিক
নয়। আমাদের ওজন কমাতে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আবার রক্তে শর্করার মাত্রা ঠিক
রাখতে
এছাড়াও ত্বক এবং চুলের জন্য অনেক উপকারী গ্রিন টি। আমরা যদি সকালে খালি পেটে
গ্রিন টি পান করি তাহলে সেটা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারিতা নয় বরং অপকারিতা
নিয়ে আসবে। এতে অনেক পুষ্টিকর উপাদান ও ভিটামিন থাকা সত্বেও। আপনারা হয়তো
অনেকেই জানেন না সকালে খালি পেটে গ্রিন টি খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে। যারা জানেন
না তারা জেনে নিন সকালে খালি পেটে গ্রিন টি খাওয়ার অপকারিতা
পেটের ব্যথার জন্যঃ আপনারা যখন সকালে খালি পেটে গ্রিন টি পান করবেন তখন
আপনাদের পাকস্থলীতে এসিডিটির মাত্রা বেড়ে যাবে কারণ এতে থাকে ট্যানিন যার জন্য
এরকম হয়। এর জন্য আপনাদের পেটে ব্যথা এবং কোষ্ঠকাঠিন্য বেড়ে যাবে। আবার পেটে
বেশি এসিডের কারণে আপনাদের বমি ভাব অথবা বমির সমস্যা দেখা দিতে পারে।
রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারেঃ খালি পেটে গ্রিন টি পান করার ফলে আপনাদের শরীরে
রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে। কারণ এই চাতে থাকে ক্যাফেইন আমাদের অ্যাড্রিনাল
গ্রন্থিকে উদ্দীপিত করে থাকে। যেটা অ্যাড্রেনালিন ও কর্টিসল এর মত স্ট্রেস হরমোন
গুলোকে রিলিজ করে যার কারণে আমাদের হৃদস্পন্দন এবং রক্তচাপ বেড়ে যায়। আবার
হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীদের জন্য এইটা ক্ষতিকর।
আয়রন শোষণের ক্ষমতা কমিয়ে দেয়ঃ আমাদের শরীরে পর্যাপ্ত আয়রন পৌঁছানো
দরকার সুস্থ থাকার জন্যে। কিন্তু যদি আপনারা সকালে খালি পেটে গ্রিন টি পান করেন
তাহলে আপনাদের শরীরে তা আয়রন শোষণের ক্ষমতা কমিয়ে দিবে। এজন্য আপনাদের শরীরে
অনেক রকমের সমস্যা দেখা দিবে আবার যারা রক্তশূন্য তাই ভুগছেন তারা গ্রিন টি পান
করা থেকে বিরত থাকবেন।
আলসার বাড়িয়ে দেয়ঃ আপনাদের মধ্যে যাদের পেপটিক আলসার অথবা এসিড
রিফ্লাক্সের মত সমস্যা আছে তারা সকালে খালি পেটে গ্রিন টি পান করবেন না এতে করে
তাদের এ সমস্যা আরো বেড়ে যাবে।
রক্ত পাতলা হওয়ার আশঙ্কা বাড়েঃ সকালে খালি পেটে গ্রিন টি পান করার ফলে
তা আপনাদের রক্তকে সরাসরি প্রভাবিত করেতে থাকে যার ফলে আপনাদের রক্ত জমাট বাঁধায়
কাজ করে থাকে যার ফলে প্রোটিন কমতে থাকে। এর ফলে আপনাদের রক্ত পাতলা হওয়ার
আশঙ্কা বেড়ে যায়।
ওজন কমাতে গ্রিন টি খাওয়ার নিয়ম
আমাদের শরীরের পক্ষে যেমন গ্রিন টি বেশ উপকার করে তেমনি এটা আমাদের ওজন কমাতে
অনেক ভূমিকা পালন করে থাকে। এজন্য আমাদের সঠিক নিয়মে গ্রিন টি পান করতে হবে
তাহলে আমাদের ওজন কমবে। গ্রিন টি পান করার ফলে আমাদের ক্যান্সার, স্ট্রোক,
ডায়াবেটিসের ঝুঁকি এবং আলঝেইমার্স ইত্যাদি সমস্যা ছাড়াও আরো অনেক অসুখের হাত
থেকে আমরা রক্ষা পেতে পারি। স্বাস্থ্যের উপকারিতা ছাড়াও এটা আমাদের ত্বকের জন্য
অনেক উপকারিতা আছে এটা আমাদের বয়সের ছাপ ঠেকাতে সাহায্য করে।
আরো পড়ুনঃআম খেলে কি ওজন বাড়ে এ বিষয়ে জানুন
এর উপকারিতা বেশি পাওয়ার জন্য আপনারা যেকোনো রকমের ভারী খাবার খাওয়ার কমপক্ষে
দুই ঘন্টা আগে অথবা পরে গ্রিন টি খেতে পারেন। কারণ এই চায়ে আছে ক্যাফিন
এবংক্যাটেচিন নামের যৌগ এই যৌগগুলি আমাদের বিপাক হার বাড়াতে সহায়তা করে। যার
ফলে আমাদের ওজন কমানো সম্ভব হয়। আর যদি আপনারা ওজন কমানোর জন্য গ্রিন টি খান
তাহলে আপনাদের অবশ্যই তা খাবারের মাঝে খেতে হবে কিন্তু খালি পেটে খাওয়ার ফলে
তেমন উপকার পাওয়া যাবে না। অনেকেই মনে করে থাকেন যে বেশি
পরিমাণে গ্রিন টি খেলে আমাদের ওজন তাড়াতাড়ি কমে যাবে কিন্তু এটা ঠিক নয়।
প্রতিদিন দুই থেকে পাঁচ কাপের মধ্যে খাওয়া যাবে এর বেশি খাওয়া উচিত নয়। খাবার
খাওয়ার সাথে সাথে গ্রিন টি খাওয়া উচিত নয় কারণ খাবার হজম হতে সময় লাগে আর এ
সময় যদি গ্রিন টি খাওয়া হয় তাহলে তার ক্ষতি করতে পারে। গ্রিন দিয়ে খাওয়ার
সময় একবারে গরম পানি দিয়ে নয় হালকা গরম পানির গ্রিন টি আমাদের পান করার চেষ্টা
করতে হবে। বেশি গরম পানি হলে গ্রিন টির স্বাদ করতে থাকে এজন্য আমাদের পেট ও গলায়
ব্যথা হতে পারে।
অনেকে এই গ্রিন টির সাথে মধু মিশিয়ে খান। গরম পানিতে যখন গ্রিন টি এবং মধু
মিশিয়ে খাওয়া হয় তখন এর পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়ে যায়। পানি হালকা গরম থাকা
অবস্থায় তার সাথে মধু এবং দারুচিনি মিশিয়ে আপনারা খেতে পারেন। বেশি পরিমানে
গ্রীন টি খাওয়ার ফলে মাথাব্যথা, ক্লান্তি ভাব ও বমি বমি ভাব হতে পারে কারণ এতে
থাকে বেশি পরিমাণে ক্যাফেইন। ওজন কমানোর জন্য আপনাদের সকালে নাস্তা করার পরে অথবা
ব্যায়াম করার আধাঘন্টা আগে আবার খাবার খাবার দুই ঘন্টা আগে বা পরে গ্রিন টি পান
করতে পারেন।
গ্রিন টি পান করার সঠিক সময়
আপনারা কি জানেন যে আপনাদের কখন গ্রিন টি খাওয়া উচিত। এ বিষয়ে হয়তো অনেকেই
জানেন না। গ্রিন টি পান করার ফলে যেমন আমাদের স্বাস্থ্যের অনেক উপকারিতা হয়
তেমনি এটা আমাদের ওজন কমানোর ক্ষেত্রে অনেক উপকারে আসে। আপনারা স্বাস্থ্যের কথা
ভেবে হয়তো গ্রিন টি খাচ্ছেন কিন্তু কোন সময় খাচ্ছেন যার ফলে আপনারা উপকারিতা
পাচ্ছেন না। কিন্তু আপনারা যদি গ্রিন টি পান করার সঠিক সময় জানেন তাহলে এটা
খাওয়ার ফলে অনেক উপকারিতা পাবেন। নিচে গ্রিন টি পান করার সঠিক সময় এর কথা বলা
হলো
খাবার খাওয়ার এক ঘন্টা পরে বা আগেঃ আপনারা অনেকেই আছেন যারা খাবার
খাওয়ার পরেই সাথে সাথে চা পান করেন কিন্তু খাবার খাওয়ার পরপরই গ্রিন টি পান করা
উচিত নয়। আপনারা খাবার খাওয়ার কমপক্ষে ৪৫ মিনিট অথবা এক ঘন্টা পরে বা আগে গ্রিন
টি পান করতে পারেন। গ্রিন টির উপকার বেশি পাওয়ার হলে আপনারা এই গ্রিন টি কোন
ভারী খাবার খাওয়ার কমপক্ষে ২ ঘন্টা আগে অথবা পরে পান করতে পারেন। এতে থাকা
ক্যাফিন এবং ক্যাটেচিন আপনাদের কৃপা ক্ষার বাড়াবে এবং ওজন কমাবে।
ব্যায়াম করার আগেঃ আপনারা
ব্যায়াম
করার আধ ঘন্টা আগে দিনটি পান করতে পারেন। এভাবে পান করার ফলে আপনার কর্ম ক্ষমতা
বৃদ্ধি পাবে এবং সেইসাথে আপনার ওজন ও মেদ কমাতেও এটা সাহায্য করবে।
সকালে নাস্তা করার পরেঃ আমরা অনেকেই আছি যারা সকালে নাস্তা করে থাকি যাতে
করে সারাদিন শরীর ভালো থাকে কিন্তু সকালে খালি পেটে আমাদের চা পান করা উচিত নয়।
কারণ এতে আপনাদের ডিহাইড্রেশন এর সমস্যা হতে পারে। আবার সকালে খালি পেটে গ্রিন টি
পান করার ফলে আপনাদের গ্যাস্ট্রিকের অথবা আলসারের সমস্যা হতে পারে। এজন্য আপনারা
সকালে নাস্তা কোন পুষ্টিকর খাবার দিয়ে শুরু করতে পারেন এবং নাস্তা করার পরে
আপনারা গ্রিন টি পান করতে পারেন।
রাত্রে ঘুমোতে যাওয়ার আগেঃ আপনারা যদি আপনাদের শরীরের ওজন কমাতে চান
তাহলে গ্রিন টি পান করতে পারেন রাত্রে ঘুমোতে যাওয়ার কমপক্ষে দুই ঘন্টা আগে। ২
ঘন্টা আগে যদি গ্রিন টি পান করেন এতে করে আপনার ওজন তাড়াতাড়ি কমানোর কাজ করবে
কারণ রাত্রে আপনারা তো আর কোন খাবার খাবেন না এজন্য এটা সব চাইতে বেশি ভালো কাজ
দেবে।
এবার আমি আপনাদের বলব যে আপনারা কোন সময় গ্রিন টি পান করা থেকে বিরত থাকবেন
অর্থাৎ কোন সময় গ্রিন টি পান করা যাবে না
- সকালে খালি পেটে কখনোই গ্রিন টি পান করা উচিত নয়।
- দুপুরের খাবার এবং রাতের খাবার খাওয়ার সময় গ্রিন টি পান করা উচিত নয়।
- এক দিনে আপনারা দুই থেকে তিন কাপের বেশি পরিমাণে গ্রিন টি পান করবেন না।
- গ্রিন টি পান করার সময় আপনারা এর সাথে দুধ বা গুড়া দুধ এবং চিনি মিশিয়ে খাবেন না।
- আপনাদের মধ্যে কারো যদি ঘুমের সমস্যা থাকে তাহলে এবং গভীর রাতে আপনারা গ্রিন টি পান করা থেকে বিরত থাকবেন।
আদা দিয়ে গ্রিন টি খাওয়ার উপকারিতা
আমরা অনেকে আদা দিয়ে গ্রিন টি পান করে থাকি এতে অনেক উপকারিতা পাওয়া যায়।
গ্রিন টি যেমন আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকার করে। এজন্য এটি যেভাবে বানানো
হোক না কেন বা খাওয়া-দাওয়া হোক না কেন তা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য উপকার নিয়ে
আসবে। কারণ এতে আছে অনেক পুষ্টিগুণ এবং ভিটামিন আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যেগুলো
আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। আদা
দিয়ে গ্রিন টি খাওয়ার উপকারিতা নিচে বলা হলো
- বেশি পরিমাণে কাশি হলে আপনারা আদা দিয়ে গ্রিন টি পান করলে কাশি কমে যাবে।
- গলা ব্যথা এবং গলায় খুসখুস করে এজন্য আপনারা আদা দিয়ে গ্রিন টি খেতে পারেন তাহলে আরাম পাবেন।
- আদা দিয়ে গ্রিন টি খাওয়ার ফলে আপনাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।
- আদা দিয়ে দিনটি খাওয়ার ফলে আপনাদের শরীরের ক্লান্তি দূর হবে।
- শ্বাসকষ্টের সমস্যার জন্য আপনারা আদা দিয়ে গ্রিন টি খেতে পারেন এতে করে শ্বাসকষ্ট কমে যাবে।
- যাদের সর্দি লাগে তারা এ সমস্যা থেকে উপকার পাওয়ার জন্য আদা দিয়ে গ্রিন টি পান করতে পারেন এতে করে সর্দি কমে যাবে।
- ক্যান্সার রোগীদের জন্য আদা দিয়ে গ্রিন টি পান করলে অনেক আরাম পাওয়া যায়।
- আদা দিয়ে গ্রিন টি পান করার ফলে আমাদের স্ট্রেস কমে।
গ্রিন টি এর উপকারিতা ও অপকারিতা
আমাদের শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমানোর জন্য যেমন গ্রিন টি সাহায্য করে তেমনি আমাদের
শরীরকে সুস্থ রাখার জন্য গ্রিন টির অনেক ভূমিকা আছে। এই গ্রিন টি বিশ্বব্যাপী
একটি জনপ্রিয় পানীয়। গ্রিন টি আমাদের শরীরে মেটাবলিজম বানাতে সাহায্য করে আবার
এটা আমাদের শরীরে মেদ কোষ এর বেশি পরিমাণে শর্করা ঢুকতে দেয় না। এতে থাকা
বিভিন্ন উপাদান আমাদের শরীরের বিপাকীয় হার বাড়াতে সাহায্য করে যার ফলে ওজন কমে
তাড়াতাড়ি। এজন্য আমাদের খাবার খাওয়ার
অন্তত ২ ঘণ্টা আগে অথবা পরে আবার ব্যায়াম করার ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট আগে অথবা পরে
গ্রিন টি পান করা উচিত। এজন্য আমাদের প্রতিদিন দুই থেকে তিন কাপ গ্রিন টি পান করা
উচিত এর বেশি পরিমাণে পান করা উচিত নয় তাহলে আমাদের স্বাস্থ্যের ক্ষতি হতে পারে।
এছাড়াও আরো অনেক উপকারিতা আছে গ্রিন টির তাহলে আসুন জানা যাক গ্রিন টি এর
উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে। গ্রিন টি এর উপকারিতা
- গ্রিন টিতে আছে অনেক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং আরো আছে ফ্ল্যাভোনয়েড যা আমাদের শরীরকে উৎফুল্ল এবং সতেজ করে রাখতে সহায়তা করে।
- গ্রিন টি আমাদের হজম প্রক্রিয়াকে ভালো করতে সাহায্য করে এবং এর ফলে আমাদের খাবার দ্রুত হজম হয়ে যায়।
- এতে আছে এন্টি অক্সিডেন্ট যা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার বাড়াতে সাহায্য করে।
- গ্রিন টি তে আছে ক্যাটাচিন নামের উপাদান এই উপাদানটি আমাদের পেটের মেদ কমাতে সাহায্য করে।
- গ্রিন টি তে আছে থিয়ানিন নামের অ্যামাইনো এসিড যা আমাদেরকে অবসাদ এবং ডিপ্রেশন কমাতে সাহায্য করে।
- আমাদের মস্তিষ্কের জন্য অনেক স্বাস্থ্যকর এই গ্রিন টি। এটা আমাদের স্মৃতিশক্তি এর উন্নতি ঘটিয়ে থাকে এবং তথ্য সংরক্ষণের কাজে সাহায্য করে।
- গ্রিন টি পান করার ফলে আমাদের শরীরের ধমনী পরিষ্কার থাকে। আবার এটি আমাদের হার্টের ব্লক এর ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
- গ্রিন টি আমাদেরকে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
- উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা নিয়ন্ত্রণের কাজে সহায়তা করে এবং উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমায় গ্রিন টি।
- আমরা যদি নিয়মিত গ্রিন টি পান করি তাহলে আমাদের দাঁতের ক্ষয়ের ঝুঁকি কমবে।
- ক্যান্সার প্রতিরোধে, হাড়ের সুস্থতায়, ব্লাড সুগার কমাতে আবার টাইপ দুই ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সাহায্য করে গ্রিন টি।
- মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়, ক্ষত নিরাময়ের কাজে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
এবার আমরা জানবো গ্রিন টি এর অপকারিতা সম্পর্কে। অথবা বেশি পরিমাণে গ্রিন টি
খাওয়ার ফলে কি হতে পারে এ বিষয়ে। আমাদের যে কোন জিনিসই পরিমাণের চাইতে বেশি
খাওয়া উচিত নয় এতে আমাদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়তে পারে। গ্রিন টি এর অপকারিতা
- বেশি পরিমানে গ্রীন টি পান করার ফলে অনিদ্রা, মাথাব্যথা করা, উদ্বেগ, বমি বমি ভাব, বিরক্তি এবং পেট খারাপ এর সমস্যা হতে পারে।
- অতিরিক্ত পরিমাণে গ্রিন টি পান করার ফলে পানি শূন্যতা এবং ঘন ঘন মূত্র ত্যাগ করা আবার অস্থিরতা ইত্যাদি সমস্যা হতে পারে।
- অতিরিক্ত পরিমাণে এটা পান করার ফলে হৃদস্পন্দন বেড়ে যেতে পারে।
- অতিরিক্ত পরিমাণে গ্রিন টি পান করার ফলে লিভারের ক্ষতি হতে পারে।
- উদ্দীপক ঔষধের সাথে গ্রীন টি পান করা হলে তা সেই ব্যক্তির রক্তচাপ এবং হৃদস্পন্দন বাড়িয়ে দিতে পারে।
- গ্রিন টিতে আছে ক্যাফেইন আর এই অতিরিক্ত ক্যাফেইন শিশুদের প্রভাবিত করতে পারে।
- সকালে খালি পেটে গ্রিন টি পান করার ফলে পেট ব্যথা, বমি বমি ভাব এবং কোষ্ঠকাঠিন্য এর সমস্যা হতে পারে।
- গ্রিন টিতে থাকে ট্যানিন এটা আমাদের পেটে এসিডের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে সাহায্য করে এজন্য অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে আমাদের পেটে এসিডের মাত্রা বেড়ে যাবে।
লেখকের মন্তব্য
ম্যাক্সিমো ইনফো এখানে এই পোষ্টের মাধ্যমে গ্রিন টি সম্পর্কিত অনেক তথ্য দিয়েছে
যেমন ওজন কমাতে গ্রিন টি খাওয়ার নিয়ম, গ্রিন টি এর উপকারিতা ও অপকারিতা, গ্রিন
টি পান করা কাদের উচিত এবং তাদের উচিত নয় এবং সকালে খালি পেটে গ্রিন টি খাওয়ার
অপকারিতা ইত্যাদি বিষয়ে। আপনারা যদি গ্রিন টি পান করার অভ্যাস শুরু করেন তাহলে
আমার এই পোস্টটি পড়ে সকল তথ্য জানতে পারবেন। এজন্য আপনাদের যদি এই পোস্টটি পড়ে
ভালো লাগে তাহলে অবশ্যই আপনারা এই পোস্টটি শেয়ার করে দিবেন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url