কাঁচা হলুদ খেলে কি ফর্সা হওয়া যায় জানুন
আসসালামু আলাইকুম, আপনারা হয়তো আগে
কাঁচা হলুদ
খেলে কি ফর্সা হওয়া যায় এবং কাঁচা হলুদ খেলে কি ক্ষতি হয় অর্থাৎ হলুদ
সম্পর্কিত অনেক তথ্য সঠিকভাবে জানার চেষ্টা করেছেন হয়তো জানতে পারেননি বা সঠিক
তথ্য খুঁজে পাননি। কিন্তু আমার এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনারা এ সকল বিষয়ে জানতে
পারবেন তাই শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
আজকে আমি আপনাদের জন্য কাঁচা হলুদ খেলে কি ফর্সা হওয়া যায় এবং কাঁচা হলুদ খেলে
কি ক্ষতি হয় ছাড়াও কাঁচা হলুদের উপকারিতা মুখে মাখার, শুকনো হলুদের উপকারিতা,
হলুদের উপকারিতা এবং খাওয়ার নিয়ম ইত্যাদি অনেক কয়েকটি বিষয়ে সঠিক তথ্য
বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছি যেগুলো পড়ে আপনারা অনেক উপকৃত হবেন এবং সঠিক তথ্য
জানতে পারবেন। এজন্য আপনাদের সকলকে অনুরোধ করছি এই পোস্টটি পড়ার তাহলে আপনাদের
অনেক কাজে আসবে।
ভূমিকা
হলুদ হচ্ছে আমাদের সকলের কাছেই একটা পরিচিত মসলা এটা রান্নাঘরে থাকে রান্নার
স্বাদ বাড়ানোর এবং তরকারির সৌন্দর্য বাড়ানোর জন্য। এর অনেক উপকারিতা আছে কারণ
এতে আছে এন্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন সি, খনিজ লবণ, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম,
ভিটামিন বি ৬ ইত্যাদি নানা উপাদান। হলুদের উপকারিতা পাওয়ার জন্য আমাদের নিয়মিত
পরিমাণ মতো হলুদ খেতে হবে। কাঁচা হলুদ খেলে ফর্সা হওয়া যায় এটা আমাদের মুখের
চোখের নিচের কালো দাগ দূর করে, ত্বকের
উজ্জ্বলতা বাড়ায়। হলুদে আছে কারকিউমিন আর এতে আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং
এন্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য আর এই বৈশিষ্ট্যগুলো আমাদের ফর্সা হতে সাহায্য করে।
এছাড়াও কাঁচা হলুদ বেশি পরিমাণে খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরে ক্ষতি হতে পারে। বমি
বমি ভাব এবং ডায়রিয়া হতে পারে। কিডনিতে পাথর এবং স্টোন হতে পারে, পেটের গোলমাল
হতে পারে, ত্বক ফেটে যেতে পারে এবং বাচ্চাদেরও বেশি পরিমাণে হলুদ খাওয়ার ফলে
শ্বাসকষ্টের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
কাঁচা হলুদ এর উপকারিতা মুখে
কাঁচা হলুদের অনেক উপকারিতা আছে এটা যেমন খাওয়ার ফলে অনেক উপকারিতা পাওয়া যায়
তেমনি এটা আমাদের মুখে ত্বকে মাখালেও এর অনেক উপকারিতা পাওয়া যায়। এর মুখে
কাঁচা হলুদ মাখালে আপনার মুখে থাকা ব্রণ থেকে রক্ষা পাবেন এবং তৈলাক্ত ভাব দূর
হবে ও দাগ দূর হবে। এজন্য আপনাকে সপ্তাহে অন্তত দুই থেকে তিন দিন কাঁচা হলুদ মুখে
মাখতে হবে এর সাথে আপনারা পাতি লেবুর রস এবং শসার রস মিশিয়েও ব্যবহার করতে পারেন
এতে অনেক উপকারিতা পাওয়া যাবে। কাঁচা হলুদের উপকারিতা মুখে মাখার ফলে
- কাঁচা হলুদ বাটা যদি আপনারা পরিমাণ মতো পানি এবং ময়দা অল্প পরিমাণে নিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে আপনাদের ত্বকে লাগান তাহলে আপনাদের ত্বকের অতিরিক্ত তেল ভাব দূর হয়ে যাবে।
- আপনারা যদি কাঁচা হলুদ বাটার সাথে অল্প পরিমাণে গাজরের রস এবং জলপাইয়ের তেল মিশিয়ে আপনাদের মুখে ত্বকে লাগান তাহলে আপনাদের ব্রণ দূর হয়ে যাবে।
- কাঁচা হলুদের সাথে আপনারা লেবুর রস মিশিয়ে ত্বকে লাগানোর ফলে আপনাদের ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাবে।
- আবার চন্দন গুড়া এবং কাঁচা হলুদ বাটা একসাথে মিশিয়ে মুখে লাগালে আপনাদের মুখের ত্বক প্রাণবন্ত হবে।
- কাঁচা হলুদের সাথে আপনারা যদি মধু মিশিয়ে মুখে লাগান তাহলে আপনাদের মুখের আদ্রতা সঠিক থাকবে।
- নারিকেল তেলের সাথে যদি আপনারা কাঁচা হলুদ মিশিয়ে ত্বকে লাগান তাহলে এটা আপনাদের ময়শ্চারাইজারের কাজ করবে।
- কাঁচা হলুদের সাথে যদি আপনারা শসার রস, লেবুর রস এবং মুলতানি মাটি মিশিয়ে মুখে লাগান তাহলে আপনাদের মুখের এবং ত্বকের রোদে পোড়া দাগ দূর হয়ে যাবে।
- কাঁচা হলুদের সঙ্গে যদি এলোভেরা এর জেল এবং মধু মিশিয়ে ত্বকে ব্যবহার করা হয় তাহলে ত্বকের প্রদাহ দূর করা সম্ভব হবে।
- আবার কাঁচা হলুদের সাথে আপনারা যদি পরিমাণ মতো কাচা দুধ ভালোভাবে মিশিয়ে আপনাদের ত্বকে ব্যবহার করেন তাহলে আপনাদের ত্বকের মুখের উজ্জ্বলতা ঠিক থাকবে।
শুকনো হলুদের উপকারিতা
শুকনো হলুদের অনেক ভেষজ উপকারিতা আছে। এজন্য আপনারা নিয়মিত এই ভেষজ খেতে পারেন
আর এটা খাওয়ার ফলে আপনারা বিভিন্ন রোগের হাত থেকে রক্ষা পাবেন এবং সুস্থ সুন্দর
এবং সবল ভাবে জীবন যাপন করতে পারবেন। কাঁচা হলুদের যেমন অনেক উপকারিতা আছে তেমনি
শুকনো হলুদেরও আছে। শুকনো হলুদে আছে কারকিউমিন। আমরা অনেকেই শুকনো হলুদের
উপকারিতা সম্পর্কে জানি না যারা জানে না তারা আমারে পোষ্টের মাধ্যমে জেনে নিন।
- শুকনো হলুদে আছে কারকিউমিন নামের একটি উপাদান যেটা আমাদের শরীরের প্রদাহের প্রকোপ থেকে রক্ষা করতে পারে।
- এই উপাদানের জন্য আমাদের ইমিউনিটি বাড়ে।
- ক্যান্সারের ফাঁদ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
- বদহজম এবং ডায়াবেটিসের মতো অনেক সমস্যাকে বসে আনা যায়।
হলুদের উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম
হলুদ আমাদের সকলের রান্নাঘরেই থাকে এটা হচ্ছে একটি মসলা জাতীয় খাবার এটি আমাদের
রান্নার স্বাদ বাড়াতে ব্যবহার করা হয়।এছাড়াও হলুদ আমরা মুখে গায়ে ব্যবহার
করতে পারি ত্বক ফর্সা করার জন্য বিভিন্ন রকমের সংক্রমণ রোগ থেকে রক্ষা পাওয়ার
জন্য ব্রণ থেকে এবং বিভিন্ন রকমের দাগ ছোপ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য। হলুদ খাওয়ার
ফলে আমাদের অনেক উপকারিতা হবে স্বাস্থ্যের জন্য কারণ হলুদে আছে অ্যান্টি
ব্যাকটেরিয়াল এন্টিঅক্সিডেন্ট গুণ আরো আছে ভিটামিন সি ভিটামিন বি ৬ ইত্যাদি।
হলুদের উপকারিতা হলো
- কাঁচা হলুদ প্রাকৃতিক এন্টিসেপটিট। হলুদ বাটা কাঁটা এবং পোড়া জায়গায় লাগালে তাড়াতাড়ি ব্যথা এবং দাগের উপশম পাওয়া যায়।
- হলুদ ফুলকপির সাথে মিলিত হয়ে আমাদের ক্যান্সার রোগ প্রতিরোধ করতে পারে এবং প্রোটেস্ট ক্যান্সার বৃদ্ধি বন্ধ করে থাকে।
- আমাদের স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধ করে এবং অন্ত্রের ক্যান্সার নিরাময় করে।
- মেলানোমা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
- ছোট বাচ্চাদের লিউকেমিয়া এর ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
- হলুদ আপনাদের কেমো ড্রাগের প্রভাব হ্রাস করতে সাহায্য করে।
- হলুদ আমাদের প্রদাহ বিরোধী বৈশিষ্ট্য বাত ও ফোলানো বাত এর চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়।
- একটি গবেষণা থেকে জানা যায় যে হলুদ আমাদের অগ্নাশয়ের ক্যান্সার উপর সময়ে কাজ করে।
- হলুদ আমাদের টিউমার হওয়া বন্ধ করতে সাহায্য করে এবং নতুন রক্ত তৈরি হওয়া বৃদ্ধি করে।
- এটি আমাদের চর্বি বিপাকে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে থাকে।
- চর্ম রোগের জন্য হলুদ অনেক উপকারী। এর সাথে কাঁচা দুধ মিশিয়ে শরীরে মাখা হলে এলার্জি, একজিমা এবং চুলকানি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
- সর্দি কাশির জন্য খুব ভালো হলুদ কাশির জন্য হলুদের রস এবং এর সাথে মধু মিশিয়ে খেলে আরাম পাওয়া যায় গলা ব্যথা ও কমে।
- হলুদ আমাদের মানসিক অবসাদ রোধ করতে অনেক কাজে আসে। এর প্রয়োগ করার ফলে ভ্যাস্কুলার থ্রম্বোসিস এ আক্রান্ত রোগীর রক্তের ঘনত্ব এর পরিমান নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়।
- হলুদে আছে ভিটামিন খনিজ লবণ ক্যালসিয়াম প্রোটিন ইত্যাদি উপাদান এজন্য হলুদ খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যায়। এছাড়া বাচ্চাদের ব্লাড ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে কাঁচা হলুদের রস সেবন করার ফলে।
- কাঁচা হলুদ গায়ে মাখার ফলে ত্বক ফর্সা হয় এবং লাবণ্য ময় এবং উজ্জ্বল হয়। প্রত্যেকদিন রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে কাঁচা হলুদের সাথে দুধ মিশিয়ে খেলে ত্বকের রং ফর্সা হয়।
- হলুদে আছে পলিফেনল যেটা আমাদের চোখের অসুখ ক্রনিক অ্যান্টিরিয়ার ইউভেইটিস সারানোর জন্য কাজ করে এবং চোখের জ্বালা এবং প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
- মুখে জ্বালাপোড়া করলে আপনারা গরম পানির সাথে হলুদের পাউডার মিশিয়ে তারপর সেটা কুলকুচি করতে পারেন এতে অনেক আরাম পাওয়া যায়।
- আয়ুর্বেদ চিকিৎসার মতে হলুদ খাওয়ার ফলে আমাদের রক্ত শুদ্ধ হয়।
- পেটের বায়ু এবং ডায়রিয়া অর্থাৎ অনেক পুরনো ডায়রিয়া হলুদের গুঁড়া বা রস খাওয়ার ফলে আরাম পাওয়া যায়।
- পেটের বিভিন্ন রকমের সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আপনারা দুধের সাথে হলুদের গোড়া মিশিয়ে খেতে পারেন।
- কৃমি রোগের জন্য আপনারা কাঁচা হলুদের রস এর সাথে অল্প লবণ মিশে খালি পেটে খেতে পারেন।
- হলুদ গুঁড়া এবং তার সাথে দ্বিগুণ পরিমাণে দই মিশিয়ে খেলে পিলে ও এবং যকৃতের দোষ ও জন্ডিস সাড়ে এবং লিভারের অসুখ থেকে আরাম পাওয়া যায়।
- হলুদ গুড়ার সাথে মধু মিশিয়ে খেলে কোষ্ঠকাঠিন্যতায় এবং হজমে দুর্বলতা সারে।
- আপনাদের নাকের ক্ষত এর জন্য আপনারা হলুদ গুড়ো মহা ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন এতে অনেক কাজ আসবে।
- হাঁপানি রোগের জন্য আপনারা হলুদ গুঁড়ো এবং এর সাথে আখের গুড় এবং খাঁটি সরিষার তেল মিশিয়ে খেলে অনেক আরাম পাবেন।
- ব্রণ এবং বলিরেখা ও চোখের নিচের কালো দাগ দূর করার জন্য আপনারা হলুদ ব্যবহার করতে পারেন।
- রক্তশূন্যতা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আপনারা কাঁচা হলুদের রস এবং এর সাথে মধু মিশিয়ে খেতে পারেন।
এতক্ষণ তো আমারও পরের আলোচনা থেকে হলুদের উপকারিতা সম্পর্কে জানতে পারলাম এখন
আমরা জানব হলুদ খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে। সকালে এবং রাত্রে দুই বেলাতেই আপনারা ২৫০
মিলিগ্রাম করে হলুদ খেতে পারবেন। সকালে খালি পেটে হলুদ খাওয়ার পরে আপনারা আধ
ঘন্টার মধ্যে কিছুই খাবেন না। রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে আপনারা হলুদ এবং দুধ
একসাথে করে মিশিয়ে খেতে পারেন এতে অনেক উপকার পাওয়া যাবে। আরেকটি বিষয়ে খেয়াল
রাখতে হবে আপনাদের
পরিমাণে ২৫০ মিলিগ্রাম এর বেশি হলুদ খাবেন না এতে করে আপনাদের স্বাস্থ্যের ক্ষতি
হতে পারে। আপনারা যদি সকালে খালি পেটে হলুদ খান তাহলে আপনাদের রক্ত পরিষ্কার হবে
এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে।
কাঁচা হলুদ খেলে কি ক্ষতি হয়
কাঁচা হলুদ আমাদের জীবনের সাথে জড়িয়ে আছে কারণ এর উপকারিতা পাওয়া যায়। তবে
এটা আমাদের নিয়ম করে পরিমাণ মতো খেতে হবে তাহলে আমরা এর উপকারিতা পাব। যদি বেশি
পরিমাণে হলুদ খেয়ে থাকে তাহলে এটা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতির কারণ হতে
পারে। কাঁচা হলুদ খাওয়ার ফলে যেমন আমাদের সর্দি-কাশি দূর হয়, রক্ত শুদ্ধ হয়,
কিডনি রোগ প্রতিরোধ করা যায় ও হার্ট ভালো থাকে ইত্যাদি আরও নানা উপকারিতা আছে। এ
জন্য আমাদের কাঁচা হলুদ খেতে হবে নিয়ম করে। কাঁচা হলুদ খেলে কি কি ক্ষতি হয়
সেগুলো হলো
- কাঁচা হলুদ বেশি পরিমাণে খাওয়ার ফলে কিডনিতে স্টোন এবং পাথর হতে পারে।
- বেশি পরিমাণে কাঁচা হলুদ খাওয়ার ফলে পেটের গোলমাল অথবা ক্রনিক ডায়রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- বাচ্চাদের যদি বেশি পরিমাণে কাঁচা হলুদ খাওয়ানো হয় তাহলে শ্বাসকষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- বেশি পরিমাণে হলুদ খাওয়ার ফলে আপনাদের পেটে জ্বালা এবং ফোলা ভাব হতে পারে বাচ্চাদেরও এরকম সমস্যা হতে পারে।
- হলুদে আছে কারকুমিন এটা আমাদের হজমে সমস্যা তৈরি করে থাকে এজন্য বেশি পরিমাণে হলুদ খাওয়ার ফলে ডায়রিয়া এবং বমি ভাব হতে পারে।
- বেশি পরিমাণে হলুদ সেবন করার ফলে আপনার ত্বক ফেটে যেতে পারে।
- বেশি পরিমাণে হলুদ খাওয়ার ফলে আপনার শরীরে আয়রন শোষণ এ বাধা হতে পারে। এজন্য আপনার শরীরে যদি আয়রনের ঘাটতি থাকে তাহলে আপনাকে পরিমাণ মতো হলুদ খেতে হবে।
গুড়া হলুদের উপকারিতা
হলুদের গুঁড়ো ছাড়া যেন আমাদের তরকারি সম্পূর্ণ হয় না হলুদের গুড়া ব্যবহার করা
হয় রান্নায় তরকারির সৌন্দর্য বৃদ্ধি করার জন্য। শুধু রান্নার কাজে নয় হলুদের
গুড়া ব্যবহার করা হয় বিভিন্ন কাজে যেমন ত্বক ফর্সা করার জন্য, রোগ প্রতিরোধ
ক্ষমতা বাড়াতে এবং হজমের সমস্যা দূর করতে ইত্যাদি নানা কাজে। আমরা এখন জানবো
গুড়া হলুদের উপকারিতা সম্পর্কে
- এটা আমাদের রক্তে কোলেস্টেরল এর পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
- এতে আছে কারকিউমিন এটা আমাদের প্রদাহ নাশক হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
- হলুদের গুড়া খাওয়ার ফলে আর্থাইটিসের ব্যথা নিরাময় করা সম্ভব হয়।
- হলুদে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে।
- পিরিয়ডের ব্যথা কমাতে এবং নিয়মিত পিরিয়ড নিশ্চিত করতে সাহায্য করে।
- হজমের বিভিন্ন সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।
- ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ থেকে এবং ক্ষত নিরাময়ে বেশ উপকারে আসে হলুদ।
কাঁচা হলুদ খেলে কি ফর্সা হওয়া যায়
কাঁচা হলুদ খেলে আমাদের ত্বকের রং ফর্সা হয় এ ধারণা আমাদের অনেকের মধ্যে আছে।
এজন্য অনেকেই কাঁচা হলুদ বা গুড়া হলুদ খেয়ে থাকেন। এ বিষয়ে গার্হস্থ্য
অর্থনীতি কলেজের খাদ্য এবং পুষ্টিবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তাবাসসুম আজিজ
বলেন, হলুদের সাথে ত্বক ফর্সা হওয়ার একটি বিষয় আছে। হলুদে থাকে একটি বিশেষ
উপাদান সেটি হচ্ছে কারকিউমিন আর এটি হলুদেই পাওয়া যায় কেবলমাত্র। এটি আমাদের
ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করতে সাহায্য করে থাকে।
তিনি আরো বলেন, কারকিউমিন এর মধ্যে আরো আছে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং
এন্টিবায়োটিক বৈশিষ্ট্য এই গুন বা বৈশিষ্ট্য গুলো আমাদেরকে ত্বক উজ্জ্বল করতে
সাহায্য করে থাকে, রং ফর্সা করতে সাহায্য করে, বার্ধক্যের ছাপ প্রতিরোধ করতে পারে
এবং ব্রণ প্রতিরোধ করে থাকে। কারকিউমিন আমাদের ত্বক কে পাতলা করার কাজ করে,
ব্যাকটেরিয়া দূর করে থাকে, ব্ল্যাক হেড এবং হোয়াইটহেড দূর করার কাজ করে এবং
আমাদের ত্বকে ভেতর থেকে উজ্জ্বলতা দেয়। হলুদ আমরা যদি
ত্বকের বাহিরে মাখি তাহলে যেমন উপকার পাওয়া যায় তেমনি এটা খাওয়ার ফলেও উপকার
পাওয়া যায় একই রকম। হলুদ খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরের ভেতর থেকে বিষাক্ত পদার্থ
দূর করা সম্ভব হয় এবং হলুদ খাওয়ার ফলে আমাদের ত্বক ফর্সা হয়। এর জন্য আমরা
কাঁচা হলুদ কিভাবে খাবেন তার নিচে বর্ণনা করা হলো
- প্রথমে এক ইঞ্চি মাপের কাঁচা হলুদ দুধের মধ্যে নিতে হবে এবং ১৫ মিনিট ফোটাতে হবে। তারপরে আপনি হলুদ তুলে ফেলতে পারেন এবং দুধ পান করতে পারেন এর জন্য আপনারা যদি ননিহীন দুধ ব্যবহার করেন তাহলে ভালো হবে।
- দুই কাপ পরিমাণ দুধে আধা চা চামচ পরিমাণে হলুদ গুঁড়া মেশাতে হবে এরপরে গরম করে নিতে হবে তারপরে আপনারা ঠান্ডা করে পান করতে পারেন।
- দুধ আপনারা ঠান্ডা হওয়ার পর খেতে পারেন তা না হলে আপনাদের হজমের সমস্যা দেখা দিতে পারে। হজমের যদি কোন সমস্যা না হয় তাহলে আপনারা সবসময় খেতে পারেন আর যদি হজমে সমস্যা হয় তাহলে তারা খাওয়ার বিষয়ে কিছু সাবধানতা অবলম্বন করতে পারেন।
কাঁচা হলুদের চা পানের উপকারিতা
হলুদ আমাদের সকলের কাছেই খুব পরিচিত এটা আমরা রান্নার কাজে ব্যবহার করে থাকি।
রান্না করা ছাড়াও আমরা হলুদ আমাদের ত্বকে মুখে ব্যবহার করতে পারি কারণ এর অনেক
উপকারিতা আছে। আমরা হলুদ দুই রকম ভাবে ব্যবহার করতে পারি একটা কাঁচা আরেকটা
পাকা অবস্থায়। কাঁচা হলুদ আমরা মুখে গায়ে মাখা ছাড়াও আমরা কাঁচা হলুদের চা বানিয়ে
খেতে পারি কিন্তু আমরা কেন কাঁচা হলুদের চা পান করব এ বিষয়ে আমরা অনেকেই জানিনা
আজকে তারা জানতে পারবেন।
কাঁচা হলুদে আছে ভিটামিন বি-৬, আছে পটাশিয়াম, ফাইবার, ভিটামিন সি এবং
ম্যাগনেসিয়াম ইত্যাদি। কাঁচা হলুদে থাকে কারকিউমিন যেটা আমাদের বিভিন্ন রোগ থেকে
বাঁচায় এ ছাড়া হলুদ আমাদের রক্ত শুদ্ধ করে। কাঁচা হলুদের মূল দিয়ে আপনারা
পুষ্টিকর এবং সুস্বাদু চা তৈরি করে সেটা পান করতে পারেন জন্স হপকিনস মেডিসিনের
একজন অনকোলজি বিশেষজ্ঞ ক্লিনিক্যাল ও পুষ্টিবিদ মেরি ইভ ব্রাউন কাঁচা হলুদের চা
প্রস্তুত প্রণালী এভাবে বলেছেন, প্রথমে দুই টেবিল চামচ পরিমাণে কাঁচা
হলুদের
কাঁটা মূল বা হলুদ গুঁড়া নিতে হবে। এক থেকে দুই কাপ পরিমাণ পানিতে তা ফুটিয়ে
নিতে হবে। কম আঁচেপাঁচ মিনিট সময় নিয়ে সেদ্ধ করে নিতে হবে তারপরে সেটাকে ছাকনি
দিয়ে ছেঁকে নিতে হবে। এর স্বাদ পরিবর্তন করার জন্য আপনারা লেবু ও মধু যোগ করতে
পারেন এভাবে আপনারা কাঁচা হলুদের চা তৈরি করতে পারেন এবং এইটা আপনারা গরম এবং
ঠান্ডা দুই ভাবেই খেতে পারবেন। কাঁচা হলুদ খাওয়ার ফলে আপনাদের বাত ব্যথা এবং
জয়েন্ট এর বিভিন্ন রকমের ব্যথা এলার্জি সংক্রমণের
প্রদাহ ভালো করতে পারবেন। ক্যান্সার এবং হৃদরোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে আপনাদের
দেহের কোষ গুলিকে ক্ষতিকর রশ্মি থেকে রক্ষা করা সম্ভব হবে বিভিন্ন রকমের
ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ থেকে আপনারা আপনাদের খাদ্য নালী কে সুরক্ষিত করতে পারবেন।
কাঁচা হলুদের চা পানের উপকারিতা নিচে বর্ণনা করা হলো
দৃষ্টি শক্তি ভালো হয়ঃ হলুদ আপনাদের দৃষ্টি শক্তি ভালো রাখতে ও বৃদ্ধিতে
সহায়তা করবে। ও হলুদের চা পান করার ফলে আপনারা এমন একটি উপাদান পাবেন যা আপনাদের
চোখের রেটিনা কে রক্ষা করবে এর ফলে আপনাদের দৃষ্টি শক্তি হারানোর সম্ভাবনা কম হবে
এবং আপনাদের দৃষ্টি শক্তি ভালো থাকবে।
ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়ঃ নিয়মিত আপনি যদি হলুদের চা পান করেন তাহলে
আপনার ত্বক অনেকদিন ধরে উজ্জ্বলতা ধরে রাখতে সাহায্য করবে।
ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতেঃ হলুদের ভেতরে আছে অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি
প্রপার্টিজ এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট এগুলো আপনাদের শরীরে ক্যান্সার কোষ জন্মাতে দেবে
না এর ফলে আপনাদের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমবে। ও হলুদের চা পান করার ফলে আপনাদের
ক্যান্সারের ঝুঁকি কমবে তাই নিয়মিত হলুদ চা পান করতে পারেন।
হজম ক্ষমতা বাড়ায়ঃ আপনারা নিয়মিত হলুদের চা পান করলে আপনাদের হজম
ক্ষমতা বাড়বে। এছাড়াও স্মৃতিশক্তির বিকাশ ঘটবে, ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকবে, মাথার
খুশকি দূর হবে এবং আর্থাইটিসের ব্যথা কমবে।
রক্তে কোলেস্টেরল এর মাত্রা কমাতেঃ হলুদে থাকা কারকিউমিন আপনাদের রক্তে
কোলেস্টেরলের মাত্রা কে কমাতে সাহায্য করে যার ফলে আপনার হার্ট অ্যাটাক এবং
স্ট্রোকের ঝুঁকি কমবে।
লেখকের মন্তব্য
ম্যাক্সিমো ইনফো এখানে আপনাদের জন্য কাঁচা হলুদ খেলে কি ফর্সা হওয়া যায় এবং
কাঁচা হলুদ খেলে কি ক্ষতি হয় অর্থাৎ হলুদ সম্পর্কিত অনেক তথ্য দিয়েছে। আপনারা
যদি হলুদ খাওয়ার অভ্যাস শুরু করেন তাহলে এই পোস্টটি পড়ার মাধ্যমে অনেক বিষয়ে
জানতে পারবেন এবং সতর্ক হতে পারবেন। তাই এই পোস্টটি পড়ার পরে আপনারা হলুদ খাওয়া
শুরু করবেন এবং আপনাদের কাছে যদি এই পোস্টটি পড়ে ভালো লাগে তাহলে এই পোস্টটি
অবশ্যই আপনাদের পরিচিতদের মাঝে শেয়ার করে দিবেন যাতে তারা পড়ার সুযোগ পায়।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url