বায়ুর উচ্চচাপ ও নিম্নচাপ সৃষ্টির কারণ কী তা জানুন
আসসালামু আলাইকুম, আজকের পোষ্টের মাধ্যমে আমি বায়ুর উচ্চচাপ ও নিম্নচাপ সৃষ্টির
কারণ কী এবং বায়ুর উচ্চচাপ ও নিম্নচাপ কাকে বলে এছাড়াও আরো অনেক কয়েকটি বিষয়
সম্পর্কে আলোচনা করব। আশা করি এর সকল বিষয়ে তথ্য গুলো পড়ে আপনারা উপকৃত হবেন
এবং ভালো লাগবে। তাই আপনাদের সবাইকে অনুরোধ করবো এই পোস্টটি শেষ পর্যন্ত পড়বেন।
স্থলভাগ এবং জল ভাগের তাপমাত্রার বিপরীত অবস্থার জন্য বায়ুর উচ্চচাপ ও
নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়। বায়ু উচ্চচাপের অঞ্চলের দিকে থেকে নিম্নচাপের অঞ্চলের
দিকে প্রবাহিত হয়। নিম্নচাপ সৃষ্টি হয় যখন লঘু চাপ শক্তিশালী হয়ে বাতাসের
গতিবেগ ৩১ থেকে ৪০ কিলোমিটার হয়। এখানে আমি লঘু চাপ ও নিম্নচাপ এর মধ্যে
পার্থক্য এবং বর্ষাকালে বাংলাদেশে অধিক বৃষ্টিপাতের কারণ কি নিম্নচাপ কিভাবে
সৃষ্টি হয় এ সকল বিষয়ের তথ্য দিয়েছে। এ সকল বিষয়ে জানার জন্য আপনারা এই
পোস্টটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
ভূমিকা
বায়ুর উচ্চ চাপ ও নিম্নচাপ সৃষ্টি হয় জল ভাগের এবং স্থলভাগের তাপমাত্রার বিপরীত
অবস্থার জন্য। যখন স্থলভাগ
গরম থাকে তখন জলভাগ ঠান্ডা থাকে। দিনের বেলা যখন স্থলভাগ উষ্ণ থাকে জলভাগের
থেকে তখন বাতাসের উষ্ণতা বৃদ্ধি করে এবং বাতাস তখন হালকা হয়ে ওপরের দিকে উঠে
যায় এবং এর সেই স্থানে ফাঁকা জায়গার সৃষ্টি হয় এবং নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়।
বায়ু সবসময় উচ্চ চাপের অঞ্চলের দিক থেকে নিম্ন চাপের অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত
হয়। সমুদ্রের কেন্দ্রে অবস্থিত বাতাসের গতিবেগ
যখন ঘন্টায় ১৭ থেকে ১৮ কিলোমিটার হয় তখন লঘু চাপের সৃষ্টি হয় এবং এই লঘুচাপ
যখন শক্তিশালী আকার ধারণ করে এবং বাতাসে এর গতিবেগ ঘন্টায় ৩১ থেকে ৪০ কিলোমিটার
হয় তখন সেটা নিম্ন চাপের আকার ধারণ করে। এই নিম্ন চাপের কারণে ঘূর্ণিঝড় ,বন্যা
ও জলোচ্ছ্বাসের এবং নানা রকম প্রাকৃতিক দুর্যোগের সৃষ্টি হয়।
বায়ুর উচ্চচাপ ও নিম্নচাপ সৃষ্টির কারণ কী
দিনের বেলা স্থলভাগ জল ভাগের চেয়ে গরম থাকে। গরম থাকা স্থলভাগ বাতাসের উষ্ণতা
বৃদ্ধি করে থাকে।তার ওপরে থাকা বাতাস যখন গরম হয়ে হালকা হয় তখন তা উপরের দিকে
উঠে যায় এবং এর ফলে ওই স্থানে ফাঁকা একটা জায়গার সৃষ্টি হয় এবং সৃষ্টি হয়
নিম্নচাপের। অন্যদিকে সমুদ্রের উপরের থাকা বায়ু ঠান্ডা এবং ভারী হয়ে নিচের দিকে
নেমে আসে সমুদ্রের উপরে থাকা বায়ু স্থলভাগের চেয়ে ঠান্ডা হওয়ার জন্য। এর জন্য
সমুদ্রের উপরে বায়ুর চাপ বেড়ে যেতে থাকে এবং নিম্নচাপ
অঞ্চলের যে গরম বায়ু থাকে তা হালকা হয়ে উপরের দিকে উঠে যায়। এর ফলে যে ফাঁকা
স্থানের সৃষ্টি হয় তা পূরণের জন্য উচ্চচাপ অঞ্চলের ঠান্ডা বায়ু তখন নিম্নচাপ
অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হতে থাকে। রাতের বেলা সমুদ্রের তুলনায় স্থলভাগ ঠান্ডা
থাকে এবং এর কারণে তখন সমুদ্রে নিম্ন চাপের সৃষ্টি হয় এবং স্থল ভাগে বায়ুর উচ্চ
চাপের সৃষ্টি হয়। বাংলাদেশের শীতকালে উত্তর-পূর্ব মৌসুমী বায়ু প্রবাহিত হয় এবং
বর্ষাকালে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু প্রবাহিত হয়। জুন থেকে আগস্ট মাস
বাংলাদেশের
স্থল ভাগ উষ্ণ থাকে বঙ্গোপসাগরের চেয়ে এবং ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাসে
বাংলাদেশের স্থলভাগ শীতল থাকে বঙ্গোপসাগরের থেকে। জলভাগের এবং স্থলভাগের
তাপমাত্রার এই বিপরীত অবস্থাই বায়ুর উচ্চচাপ ও নিম্নচাপ সৃষ্টি করে থাকে এবং এর
ফলে মৌসুমী বায়ু প্রবাহের সৃষ্টি হয়ে থাকে।
বায়ুর উচ্চচাপ ও নিম্নচাপ কাকে বলে?
বায়ুর চাপ কে দুই ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে একটা হচ্ছে উচ্চচাপ এবং অপরটা হচ্ছে
নিম্নচাপ। বায়ুর উচ্চ চাপ এবং নিম্নচাপ বলতে বায়ুর কোন নির্দিষ্ট পরিমাণ চাপ কে
বোঝায় না। বায়ুর নিম্নচাপ এবং বায়ুর উচ্চ চাপ ব্যারোমিটার যন্ত্র দিয়ে পরিমাপ
করা হয় উচ্চচাপ বা নিম্নচাপের এই ধারণাটি তুলনামূলক ভাবে গণনা করা হয়।
ব্যারোমিটার যন্ত্রে বায়ুর চাপ যখন প্রায় এক হাজার তেরো মিলি বারবার এর থেকে
বেশি হয় তখন বায়ুমন্ডলের এই অবস্থাকে উচ্চচাপ বলে।
আবার অপরদিকে ব্যারোমিটার যন্ত্রে যখন বায়ুচাপ ৯৮৬ মিলি বার বা এর থেকে কম
পরিমাণে থাকে তখন বায়ুমণ্ডলের সেই অবস্থাকে নিম্নচাপ বলে। তাপমাত্রা যখন বেশি
হয় তখন বায়ু হালকা হয়ে তখন উপরের দিকে উঠে যায় এর ফলে বায়ুর চাপ কম হয় আর
এরকম অবস্থাকেই নিম্নচাপ বলে। বায়ু সবসময় নিম্নচাপ অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হয়
উচ্চচাপ অঞ্চলের দিক থেকে।
বায়ুর উচ্চচাপ কিভাবে সৃষ্টি হয়
বায়ুর উচ্চ চাপ ঠান্ডা এলাকায় দেখা যায় এবং বায়ো সব সময় উচ্চচাপ অঞ্চলের দিক
থেকে নিম্নচাপ অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হয়ে থাকে। দিনের বেলায় স্থলভাগ উষ্ণ থাকে
এ সময় স্থলভাগের ওপরে থাকা বাতাসের উষ্ণতা বৃদ্ধি হয় এর ফলে বায়ু হালকা হয়ে
উপরের দিকে উঠে যেতে থাকে এবং সেখানে একটি থাকা স্থানের সৃষ্টি হয়ে নিম্নচাপের
সৃষ্টি হয়। রাতের বেলা স্থলভাগ ঠান্ডা থাকে সমুদ্রের তুলনায় তখন স্থল ভাগে
বায়ুর উচ্চতাপের সৃষ্টি হয় এবং সমুদ্রে সৃষ্টি হয় নিম্ন চাপের।
বাংলাদেশে বর্ষাকালে অর্থাৎ জুন মাস থেকে আগস্ট মাসে স্থলভাগ উষ্ণ থাকে
বঙ্গোপসাগরের চেয়ে আর শীতকালে অর্থাৎ ডিসেম্বর মাস থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত
স্থলভাগ শীতল থাকে বঙ্গোপসাগরের থেকে। স্থলভাগ ও জল ভাগের এই যে তাপমাত্রার
বিপরীত অবস্থায় হচ্ছে বায়ুর উচ্চচাপ ও নিম্নচাপ সৃষ্টির কারণ। এভাবেই উচ্চচাপের
সৃষ্টি হয়।
লঘুচাপ ও নিম্নচাপের মধ্যে পার্থক্য
সমুদ্রের ওপরের বায়ু যখন স্থলভাগ থেকে ঠান্ডা হওয়ার কারণে ভারী হয়ে নিজের দিকে
নেমে আসে তখন সমুদ্রের ওপর বায়ুর চাপ বেড়ে যায় তখন নিম্নচাপ অঞ্চলের গরম বায়ু
হালকা হয়ে ওপরে উঠে যায় এবং সেখানে একটি ফাঁকা স্থান এর সৃষ্টি হয় আর এই ফাঁকা
স্থান পূরণ করার জন্য উচ্চচাপ অঞ্চলের শীতল বায়ু তখন নিম্নচাপ অঞ্চলের দিকে
প্রবাহিত হয়ে থাকে। রাতের বেলা স্থলভাগ ঠান্ডা থাকে সমুদ্রের তুলনায়। আর তখনই
সমুদ্রের নিম্নচাপের এবং স্থল ভাগে বায়ুর উচ্চ চাপের সৃষ্টি হয়।
যখন সমুদ্রে এরকম হয় তখন সমুদ্রের কেন্দ্রের চারপাশের বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ১৭
থেকে ১৮ কিলোমিটার হয় এরকম অবস্থাকে লঘুচাপ বলে। অন্যদিকে লঘুচাপের শক্তি যখন
বেড়ে গিয়ে বাতাসের গতিবেগ ঘন্টায় ৩১ থেকে ৪০ কিলোমিটার পর্যন্ত হয় তখন সে
অবস্থাকে নিম্নচাপ বলে অর্থাৎ লোগো চাপের অবস্থাটি যখন বেড়ে গিয়ে শক্তিশালী
হয়ে ওঠে তখনই নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়।
বাংলাদেশে কেন বর্ষাকালে অধিক বৃষ্টিপাত হয়
আদ্রতা বলতে বোঝায় বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বাতাসে যদি জলীয় বাষ্পের পরিমাণ
কম থাকে তাহলে আদ্রতা ও কম হয়। বাংলাদেশে বর্ষাকালে অন্যান্য মাসের তুলনায় বেশি
পরিমাণে বৃষ্টি হয় এ সময় মাসিক গড় আর্দ্রতার পরিমাণ বেশি থাকে ও মাসিক ঝড়
বৃষ্টিপাত বেশি হয়। বর্ষাকালে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু অনেক পরিমাণে জলীয়
বাষ্প নিয়ে আসে বঙ্গোপসাগর থেকে এবং এই জলীয় বাষ্প এর কারণে ঠান্ডা বৃষ্টিপাত
হয় বা ঘটায়। এর কারণে গ্রীষ্মকালে ও বর্ষাকালে
বায়ু আর্দ্র থাকার কারণে বেশি পরিমাণে বৃষ্টি হয়। বর্ষাকালে বাতাস জল ভাগের ওপর
দিয়ে প্রবাহিত হয় এজন্যই এ সময় বাতাসে অনেক পরিমাণে জলীয় বাষ্প থাকে আর
প্রচুর বৃষ্টিপাত হয় মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে। এ সকল কারণে বাংলাদেশে বর্ষাকালে
অধিক পরিমাণে বৃষ্টিপাত হয়।
বায়ুর নিম্নচাপ কেন হয় এবং নিম্নচাপের ফলে কি কি অসুবিধা হয়
তাপমাত্রা যখন বেশি হয় তখন সেখানকার বায়ু হালকা হয়ে উপরে উঠে যায় এর ফলে তখন
বায়ুর চাপ কম হয় আর বায়ুর এরকম অবস্থাকে নিম্নচাপ বলে। দিনের বেলা জলভাগের
থেকে স্থলভাগ গরম থাকে স্থলভাগের গরম বায়ু তার বাতাসের উষ্ণতা বৃদ্ধি করে থাকে
এর ফলে উষ্ণ বায়ু তখন হালকা হয়ে ওপরে উঠে যায় এবং ওই স্থানে থাকা জায়গা
সৃষ্টি হয় এবং নিম্ন চাপের সৃষ্টি হয়। আবার রাতে সমুদ্রের তুলনায় শীতল থাকে
স্থলভাগ এর কারণে তখন সমুদ্রের নিম্নচাপের সৃষ্টি হয় এবং স্থলভাগের সৃষ্টি হয়
বায়ুর উচ্চচাপ এর। বাংলাদেশে বর্ষাকালে অধিক পরিমাণে বৃষ্টি হয় বর্ষাকালে
বাংলাদেশের স্থল ভাগ উষ্ণ থাকে বঙ্গোপসাগরের চেয়ে এবং শীতকালে স্থলভাগ শীতল থাকে
বঙ্গোপসাগরে থেকে। জল ভাগ এবং স্থল ভাগের এই তাপমাত্রার যে বিপরীত অবস্থার সৃষ্টি
হয় এটাই বায়ুর উচ্চচাপ ও নিম্নচাপের সৃষ্টির কারণ। এই যে তাপমাত্রার পার্থক্যের
কারণে বায়ু হালকা হয়ে যায় এবং নিম্নচাপের সৃষ্টি করে। নিম্নচাপের ফলে একটি ছোট
জনপদের উষ্ণ মাটি হতে গরম বায়ুর উর্ধ্ব গমন এর সৃষ্টি করে থাকে
যার ফলে একটি ছোট ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয়ে থাকে। নিম্নচাপের কারণে আরো অনেক বড় ধরনের
সমস্যা হয়ে থাকে ঘূর্ণিঝড় ,বরফ ঝড়, তুষার ঝড়, সামুদ্রিক ঝড়, বজ্র ঝড় ,শিলা
বৃষ্টি, সমুদ্রে জলোচ্ছ্বাসের সৃষ্টি হয়, বায়ু ঝড়, অগ্নিঝড় ,অসময়ে বৃষ্টি
,বন্যা ও খরা, টর্নেডো দেখা দেয়। নিম্নচাপের কারণে বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক
দুর্যোগ নেমে আসে আমাদের জীবনে। এর জন্য আমাদের জনজীবনে দুর্ভোগ দেখা দেয়।
লেখক এর মন্তব্য
ম্যাক্সিমো ইনফো এখানে বায়ুর উচ্চ চাপ ও নিম্নচাপ সৃষ্টির কারণ কী এবং কিসের
জন্য বায়ুর উচ্চচাপ নিম্নচাপের সৃষ্টি হয় নিম্নচাপ সৃষ্টির ফলে কি সমস্যা হয়
বায়ুর উচ্চচাপ নিম্নচাপ কাকে বলে ইত্যাদি কয়েকটি বিষয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা
করেছে যাতে করে আপনারা সকল তথ্য সহজেই বুঝতে পারেন এবং পরে উপকৃত হন। তাই এই
পোস্টটি পড়ে আপনাদের ভালো লাগলে আপনারা অবশ্যই আপনাদের পরিচিতদের সাথে শেয়ার
করে দিবেন এবং কমেন্টে জানাবেন ভালো থাকবেন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url