সেহরি না খেয়ে নফল রোজা হবে কিনা তা জানুন

আসসালামু আলাইকুম, আজকে আমি আমার এই পোষ্টের মাধ্যমে সেহরি না খেয়ে নফল রোজা হবে কিনা এবং নফল রোজা রাখার নিয়ম সম্পর্কে অনেক তথ্য দিবো আপনাদের মাঝে আশা করি আপনারা অনেক তথ্য জানতে পারবেন যেগুলো আগে জানতে পারেননি। তাই এ সকল তথ্য পাওয়ার জন্য এই পোস্টটি শেষ পর্যন্ত পড়বেন।
সেহরি না খেয়ে নফল রোজা হবে কিনা তা জানুন
রোজা আমাদের সকল মুসলমানদের ওপর ফরজ করা হয়েছে আবার আমাদের নফল রোজা রাখার কথা বলা হয়েছে। কারণ এ সকল রোজার অনেক ফজিলত আছে হাদিসে। আমাদের নবী (সাঃ) ও রমজান মাসের ফরজ রোজা এবং বছরের অন্যান্য যেকোনো সময় নফল রোজা রাখতেন। তাই আজকে আমার এই পোষ্টের মাধ্যমে সেহেরি না খেয়ে নফল রোজা হবে কিনা এবং নফল রোজা রাখার নিয়ম ছাড়া আরো কয়েকটি বিষয়ে তথ্য দিয়েছি আপনাদের মাঝে এ সকল বিষয়ে জানতে এই পোস্টটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন।

ভূমিকা

আমাদের প্রত্যেকের মুসলমান ধর্মের অনুসারীদের ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী ব্যক্তিদের এবং প্রাপ্তবয়স্ক বিবেক বুদ্ধিসম্পন্ন নারী পুরুষের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে এবং নফল রোজা রাখার কথা বলা হয়েছে কারণ আমাদের নবীজি (সাঃ) ও নফল রোজা আদায় করতেন। রমজান মাসের ফরজ রোজা এবং নফল রোজা রাখার অনেক ফজিলতের কথা হাদিসে বর্ণনা করা হয়েছে। রোজা রাখার মাধ্যমে আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করতে পারি এবং আমাদের পাপ মোচন হয় এবং আমাদের জান্নাতে যাওয়ার পথ সুগম ও দৃঢ় হয়।


নফল রোজা রাখার জন্য কয়েকটি উত্তর দিনের কথা বর্ণনা করা হয়েছে এখানে। আবার সেহরি না খেয়ে নফল রোজা হবে কিনা এবং নফল রোজা রাখার নিয়ম আবার রোজা কাদের ওপর ফরজ করা হয়েছে আবার কাদের উপর ফরজ করা হয়নি ইত্যাদি সকল বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে এই পোস্টের মাধ্যমে। সেহেরি না খেয়ে রোজা রাখা যাবে এতে করে রোজা রাখার ক্ষেত্রে কোন ক্ষতি হবে না তবে সেহরি খাওয়া সুন্নাত এবং অনেক বরকতময়।

নিয়ত না করলে কি রোজা হবে

রোজা আমাদের সকল মুসলমান নারী-পুরুষের ওপর ফরজ করা হয়েছে। আর এই রোজা আমরা সেহেরি খাওয়ার মধ্য দিয়ে শক্তি অর্জন করে থাকি এবং রোজা রাখি। এজন্য অর্থাৎ সেহরিতে আমাদের সকলের খাবার খাওয়ার প্রতি গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে হাদিসে। সেহরি খাওয়া সুন্নত আমাদের নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন। আবার সেহরি খাওয়ার পর আমাদের সকলের রোজা রাখার নিয়ত করা ফরজ করা হয়েছে। নিয়ত না করলে আমাদের রোজা হবে না।


নিয়ত করা হচ্ছে আমাদের অন্তরের দৃঢ় একটা সংকল্প তাই এই নিয়ত মুখে উচ্চারণ করে বলা জরুরি না। কারণ আমরা যখন রমজান মাসে শেষ রাতে উঠে রোজা রাখার জন্য ঘুম থেকে উঠি এবং সেহরি খায় সেটাই রোজার নিয়ত এর অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায় এর জন্য আলাদাভাবে আর নিয়তের দরকার হয় না। তবে আমরা আলাদাভাবে নিয়ত করতে পারি কিন্তু মুখে উচ্চারণ করে বলার দরকার নেই। আমরা যদি মুখে উচ্চারণ করে নিয়ত না করি তাহলে আমাদের রোজা আদায় করা হবে।

(সূত্র : আল-বাহরুর রায়েক : ২/৪৫২; আল-জাওহারুতুন নাইয়্যিরাহ : ১/১৭৬; রাদ্দুল মুহতার : ৩/৩৩৯, ৩৪১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া : ১/১৯৫) আমাদের দেশে অর্থাৎ বাংলাদেশে রোজা রাখার জন্য একটি নিয়ত প্রসিদ্ধ আছে এটা আমরা মুখে পড়ে থাকি কিন্তু এটি হাদিস ও ফিকাহের কোন কিতাবের মধ্যে বর্ণিত হয়নি। তবে আমরা যদি কেউ পড়তে চাই তাহলে পড়তে পারব। তবে নিয়ত পড়ার চাইতে অন্তরের দৃঢ় সংকল্প করে রোজার নিয়ত করায় গুরুত্বপূর্ণ।

না খেয়ে রোজা হবে কিনা

না খেয়ে অর্থাৎ সেহরি না খেয়ে রোজা রাখা জায়েজ হবে এ বিষয়ে কোন আপত্তি নেই। তবে আমাদের সেহেরির সময় কোন প্রকার খাবার খেয়ে থাকা উচিত এবং সেটা বরকতময়। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ বলেছেন, "তোমরা সেহে্রি খাও কেননা সেহরিতে আল্লাহ তাআলা বরকত রেখেছেন"।(বুখারী, হাদিস : ১৯২৩; মুসলিম, হাদিস : ১০৯৫; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৬৯৩) রোজা রাখার জন্য শেষ রাতে সেহরি খাওয়া অত্যন্ত বরকত ময়

এবং সেহরি খাওয়া আমাদের সকলের জন্য সুন্নত। রোজা রাখার জন্য আমাদের সেহরিতে পেট ভরে খাওয়ার কোন শর্ত নেই কিন্তু আমরা সেহরিতে মাছ গোস্ত দুধ খেজুর অথবা কিছু হালকা খাবার খেতে পারি। আবার আমরা যদি কেউ সেহরিতে উঠতে না পারি বা কোন খাবার খেতে না পারি তাহলে ও আমাদের রোজা রাখতে হবে কারণ সেহরি খাওয়া মুস্তাহাব ও বরকত। সেহরি খাওয়া বিষয়ে অনেক ফজিলত বর্ণিত করা হয়েছে হাদিস শরীফে।

রাসূল পাক সাঃ বলেন,‘আহলে কিতাব তথা ইহুদি-খ্রিস্টান আর মুসলমানদের রোজার মধ্যে শুধু সেহরি খাওয়াই পার্থক্য। অর্থাৎ তারা সেহরি খায় না আর আমরা সেহরি খাই।’(মুসলিম, হাদিস: ১৮৪৩; তিরমিজি, হাদিস: ৬৪২)।তবে আমাদের সকলেরই উচিত দেরী করে সেহরি খাওয়া এভাবে সেহরি খাওয়া উত্তম তবে সময় শেষ হয়ে যাওয়ার আগে খেতে হবে।

নফল রোজা রাখার নিয়ম

ইসলামের ফরজ ও ওয়াজিব রোজা ছাড়াও আমাদের জন্য নফল রোজা রাখার কথা বলা হয়েছে কারণ নফল রোজার অনেক উপকারিতা আছে যা দুনিয়া ও আখেরাত এই উভয় দিক বিবেচনা করে বলা হয়েছে। তবে নফল রোজা পালন করার জন্য ইসলামে কোন বাধ্য করা হয়নি কেউ যদি নফল রোজা রাখতে চাই তাহলে রাখতে পারবে। এতে করে সেই ব্যক্তি অনেক সওয়াব অর্জন করতে পারবে। নফল রোজার লাভ হচ্ছে-রোজাদার ব্যক্তির ওপর আল্লাহ সন্তুষ্ট হয়ে যান।


 নফল রোজার সম্পর্কে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য একটি নফল রোজা রাখবে আল্লাহ তা'আলা তাঁর মাঝে এবং জাহান্নামের মাঝে একটি দ্রুতগামী ঘোড়ার ৫০ বছর রাস্তার দূরত্ব রাখবেন।(কানযুল উম্মাল, হাদীস: ২৪১৪৯)। নফল রোজা আমরা সপ্তাহের সোমবার এবং বৃহস্পতিবার এই দুই দিন পালন করতে পারি এই দুইদিন রোজা রাখা সুন্নত। কারণ এই দিনে অর্থাৎ সোমবারে আমাদের নবীর জন্ম হয় এবং

এই দিনে আমাদের নবীকে নবুয়াত দেওয়া হয়েছে অর্থাৎ নবীর উপর কোরআন নাজিল হওয়া শুরু হয়েছে।(সহীহ মুসলিম : ১১৬২) আবার সোমবার ও বৃহস্পতিবারে বান্দার আমলনামা আল্লাহ তায়ালার কাছে পেশ করা হয়। এছাড়া আমরা মাসিক রোজা হিসেবে চান্দ্রমাসের ১৩-১৪ ও ১৫ তারিখ রোজা রাখতে পারি কারণ এই দিনে রোজা রাখার অনেক ফজিলতের কথা হাদিস শরীফে বর্ণিত আছে। এই তিন দিনকে ইসলামে শরীয়তের পরিভাষায় আইয়ামে ্বিজ বলা হয়ে থাকে।

তিন দিনের রাতের রাতগুলো অনেক চাঁদের আলোয় আলোকিত থাকে। এছাড়াও আমরা বার্ষিক রোজা হিসেবে প্রতিবছর শাওয়াল মাসে ছয়টি রোজা রাখতে পারি বা রাখা সুন্নত।আল্লাহর রাসূল সা: বলেন, ‘যারা রমজানে রোজা পালন করবে এবং শাওয়ালে আরো ছয়টি রোজা রাখবে; তারা যেন পূর্ণ বছরই রোজা পালন করল।’ (মুসলিম শরীফ: ১১৬৪)। আল্লাহ তাআলা শাওয়াল মাসের এই ছয় দিনে আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন এ কথাটি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন।

এই ছয় দিন যে ব্যক্তি রোজা রাখবে আল্লাহ তাআলা তাকে অনেক সওয়াব দিবে প্রত্যেক সৃষ্টি করা জীবের সংখ্যার সমান এবং সমপরিমাণের গুনাহ মাফ করে দিবে আরো তাকে পরকালে উচ্চ মর্যাদা দান করবে। এছাড়া শাওয়াল মাসের অন্য যে কোন সময় এ রোজা আদায় করা যায়। রমজান মাসে আমরা যেমন ফরজ রোজা করে থাকি এবং নিয়ত করি সে দিক থেকে অন্যান্য সব রোজার নিয়ত আমরা সেহরির সময়ের মধ্যেই করতে পারি। আবার সেহরি না খেতে পারলে ও আমরা

রোজা করতে পারব। আবার কেউ যদি ঘুমিয়ে পড়ার আগে বা তারও আগে ওইদিনের রোজার সংকল্প করে থাকে তাহলে তাকে আর নতুন করে নিয়ত করতে হবে না। সাধারণত নফল রোজার নিয়ত রাত থেকে করার কোন শর্ত নেই। দিনের যেকোনো সময়ে আমরা যদি কেউ নিয়ত করি এবং সূর্যাস্ত পর্যন্ত রোজা পূর্ণ করি তবে সেটা জায়েজ হবে।

নফল রোজা রাখার উত্তম দিন

আমরা বছরের পাঁচ দিন রোজা রাখতে পারব না এই পাঁচ দিন রোজা রাখলে হারাম হবে। ঈদুল ফিতরের দিন ঈদুল আযহার দিন এবং ঈদুল আযহার পরের তিন দিন রোজা রাখলে হারাম হবে। পবিত্র মাহে রমজানের রোজা রাখা ফরজ। এছাড়াও আমরা বছরের বাকি অন্যান্য দিনগুলোতেও নফল রোজা রাখতে পারি। এ বিষয়ে কোনো বাধা ধরা নিয়ম নেই আমরা বছরের যে কোন সময়ই নফল রোজা রাখতে পারি। আমাদের নবী (সাঃ) যে সকল দিন নফল রোজা আদায় করতেন অর্থাৎ নফল রোজা রাখার উত্তম দিন হচ্ছে

সপ্তাহের নফল রোজাঃ আমাদের নবীজি (সা.) সপ্তাহের সোমবার এবং বৃহস্পতিবার রোজা রাখতেন। কারণ এই দুই দিনের রোজার অনেক ফজিলত আছে। এই দুইদিন বান্দার আমল আল্লাহর কাছে পেশ করা হয়। তাই এই দুইদিন আমাদের নবী রোজা রাখতে পছন্দ করতেন। আবার সোমবারের দিন আমাদের নবী জন্মগ্রহণ করেন এবং এই দিনে নবীকে নবুওয়াত দেওয়া হয়েছে এ সকল কথা হাদিসে বর্ণিত আছে। সহীহ মুসলিম, হাদিসঃ ১১৬২।

মাসিক নফল রোজাঃ প্রতি চান্দ্র মাসের ১৩,১৪ এবং ১৫ তারিখে নফল রোজা রাখা যাবে এই দিনে রোজা রাখলে অনেক ফজিলত পাওয়া যাবে হাদিসে বর্ণিত আছে। এই দিনগুলোকে ইসলামের পরিভাষায় আইয়ামে বীজ বলা হয়। আমাদের পৃথিবী চাঁদের আলোয় আলোকিত হয় এবং ঝলমল করে। আমাদের নবী (সাঃ) বলেন তোমরা যদি প্রতি মাসে রোজা রাখতে চাও তাহলে এই তিন দিন রোজা রাখতে পারো। সুনানে তিরমিজি হাদিসঃ ৭৬১।

বার্ষিক নফল রোজাঃ আমাদের নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শাওয়াল মাসে রোজা রাখতেন অর্থাৎ শাওয়াল মাসের ছয় রোজা। নবীজি (সাঃ) বলেন, যে রমজানের রোজা রাখার পরেও শাওয়ালের ছয় রোজা রাখে, সে যেন সারা বছর রোজা রাখল একটি হাদিসে এটি বর্ণিত আছে হাদিসটি হল সুনানে তিরমিজি হাদিসঃ৭৫৯।

আবার আরেকটি দিনের রোজা হল আরাফার দিন অর্থাৎ জিলহজের ৯ তারিখ বা কোরবানি ঈদের আগের দিন। এই দিনে রোজা রাখার অনেক ফজিলত আছে। আমাদের নবী করিম হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে আরাফার দিনে রোজা রাখল আমি আল্লাহর কাছে আশা করি আল্লাহ তা'আলা তার আগের এক বছর এবং পরের এক বছরের গুনাহ মাফ করে দিবেন। সুনানে তিরমিজি হাদিসঃ ৭৪৯।

আবার আরেকটি দিন হল আশুরার দিন অর্থাৎ মহররমের ১০ তারিখ। এই দিনে রোজা রাখাও ভালো আমাদের নবী ও এই দিনে নফল রোজা রাখতেন। এই দিনে রোজা রাখার সম্পর্কে নবীজি বলেছেন যে ব্যক্তি আশুরার দিন রোজা রাখল আল্লাহ তাআলা তাকে আগের এক বছর এর গোনাহ মাফ করে দিবেন। সুনানে তিরমিজি হাদিসঃ ৭৫২।

যুবকদের জন্য আমাদের নবীজি (সাঃ) এক বিশেষ রোজা রাখার কথা বলেছেন অর্থাৎ যে সকল যুবকের বিবাহের বয়স হয়ে গেছে অথচ তার কাছে কোন টাকা পয়সা নেই আমাদের নবীজি (সাঃ) তাকে নফল রোজা রাখতে বলেছেন। কারণ রোজা রাখলে যৌন চাহিদা অবদমিত হয়। এজন্য যুবকদের নফল রোজা রাখার কথা বলেছেন আমাদের নবীজি (সাঃ)। এটি একটি হাদিসে বর্ণনা করা হয়েছে।

সেহরি না খেয়ে নফল রোজা হবে কিনা

সেহরি না খেয়ে নফল রোজা হবে কিনা এ বিষয়ে হয়তো আপনারা অনেকেই জানেন না আজকে আমার এ পোষ্টের মাধ্যমে আপনারা তা জানতে পারবেন। সেহরি খাওয়া হচ্ছে সুন্নাত এসে ফরজ রোজা হোক আর নফল রোজাই হোক। আমাদের প্রত্যেক মুসলমানের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে। তবে মানুষ এই ফরজ রোজা করার পরও কিছু নফল রোজা করে থাকে। রোজা রাখার জন্য আমাদের সকলের সেহরি খাওয়া অতটা জরুরী না। 


নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমার সেহরি খাও কারণ সেহরিতে বরকত আছে (বুখারী ১৯২৩)। যেহেতু সেহরি খাওয়া সুন্নত সেহেতু সেহেরী না খেলে আপনাদের সুন্নত আদায় হবে না তবে সেহরি না খেয়ে রোজা রাখা যাবে রোজার কোন ক্ষতি হবে না। সেহরি না খেয়ে নফল রোজাও রাখা যাবে এতে কোন রোজার ক্ষতি হবে না রোজা পালন করা হবে। তবে রোজা রাখার জন্য নিয়ত করতে হবে।

নফল রোজার নিয়ত কখন করতে হয়

নফল রোজা আমরা বছরের যে কোন সময় করতে পারি। এর জন্য কোন বাধা ধরা দিন নেই। নফল রোজার নিয়ত কখন করতে হয় এ সম্পর্কে আজকে আমি আপনাদের বলব। নফল রোজার নিয়ত করতে হয় সেহরির সময় অর্থাৎ নফল রোজার নিয়ত করার জন্য সর্বোত্তম সময় হচ্ছে সেহরির সময় নিয়ত করা। আবার রাতের যেকোনো সময় ও আমরা নিয়ত করতে পারি বা করা যাবে। আমরা যদি ফজরের আযান দেওয়ার আগে নিয়ত করি তাহলে নফল রোজা আদায় করা হবে।

এই নিয়ত আমরা মনে মনে করতে পারি আবার মুখে উচ্চারণ করেও করতে পারে বা করা যাবে। নিয়ত করার সময় কেবলামুখী হয়ে নিয়ত করা উত্তম। এই নফল রোজা আমরা রমজান মাস ছাড়া অন্য যেকোনো মাসে যদি করি তাহলে সেটা ভালো হবে। নফল রোজা রাখার পর কেউ যদি তা ভেঙ্গে ফেলে তাহলে সেটা হবে মাকরুহ। কেউ যদি শবে বরাতের রাতে নফল রোজা রাখে তাহলে তার অত্যন্ত ফজিলত আছে। আবার শাবান মাসে নফল রোজা রাখা উত্তম।

আমরা অনেকেই জানিনা যে আশুরার দিন নফল রোজা রাখা সুন্নত তাই আপনারা আশুরার দিন নফল রোজা রাখতে পারেন। আবার সপ্তাহের সোমবার এবং বৃহস্পতিবার নফল রোজা রাখার জন্য ভালো দিন। আমাদের নবী ও সোমবার ও বৃহস্পতিবার রোজা রাখতেন। নফল রোজা রাখার মাধ্যমে আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করতে পারি এবং আমাদের পাপ ধুয়ে মুঝে যাবে এবং নফল রোজা রাখার মাধ্যমে আমরা জান্নাতের পথ সুগম করতে পারি।

রোজা কাদের উপর ফরজ করা হয়েছে

আমাদের প্রত্যেক মুসলমানদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে। হাদিসের রোজা রাখার অনেক ফজিলতের কথা বর্ণনা করা হয়েছে। রোজা রাখার মাধ্যমে আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারি এবং আমাদের পাপা ধুয়ে মুছে যায় আবার আমাদের জান্নাতে যাওয়ার পথ সুগম হয়। রোজার মাধ্যমে ধনী গরিবের পার্থক্য লাঘব হয়। অনেকেই অনেক খারাপ কাজ থেকে রমজান মাসে অর্থাৎ রোজা রাখার মাধ্যমে বিরত থাকে। 

রমজান মাস হচ্ছে সংযমের মাস এবং বরকতের মাস। এই মাসে আমরা মুসলমান ধর্মের সকলেই রোজা রাখি।রোজা কাদের উপর ফরজ করা হয়েছে এ বিষয়ে হয়তো আপনারা অনেকেই সঠিকটা সম্পর্কে জানেন না এ বিষয়ে আপনাদের আমি জানাবো। ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় রোজা ফরজ করা হয়েছে মুসলমানদের ওপর,

  • প্রাপ্তবয়স্ক মুসলমানদের ওপর
  • সুস্থ বিবেক ও বুদ্ধি সম্পন্ন ব্যক্তিদের ওপর
  • ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী এবং ইসলাম ধর্মের অনুসারীদের রোজা রাখা ফরজ
  • সাবালক বা প্রাপ্তবয়স্ক এবং মানসিকভাবে সুস্থ নারী পুরুষের উপর
  • রোজা পালন করতে সক্ষম বা রোজা পালন করতে শারীরিকভাবে সক্ষম ব্যক্তিদের ওপর
  • রোগমুক্ত এবং অসুস্থ ও বার্ধক্য থেকে মুক্ত ব্যক্তিদের ওপর
  • ঋতুস্রাব এবং প্রসব পরবর্তীকালীন সময় এ স্রাব থেকে মুক্ত নারীদের ওপর
  • রোজার মাসে দিনের বেলায় যদি কোন অমুসলিম ব্যক্তি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে মুসলমান হয় তাহলে তার ওপর রোজা রাখা ফরজ।
  • আবার রমজান মাসে দিনের বেলায় অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলেমেয়ে যদি প্রাপ্তবয়স্ক হয় তাহলে তার ওপর রোজা ফরজ
  • রমজান মাসের আগে যদি কোন ব্যক্তি পাগল থাকে এবং রোজা শুরু হওয়ার পর যদি সেই ব্যক্তি ভাল হয়ে যায় তাহলে তার ওপর ও রোজা রাখা ফরজ
  • আবার যারা মাঝে মধ্যে পাগল হয় আবার ভালো হয় মাঝেমধ্যে যদি ভালো সময়টাই রোজা শুরু হয় তাহলে সেই ব্যক্তিকে রোজা রাখতে হবে।
  • আবার নিজ বাসস্থানে অবস্থানকারী ব্যক্তিদের উপরে রোজা ফরজ করা হয়েছে।

রোজা কাদের ওপর ফরজ নয়

আমাদের প্রত্যেক মুসলমানদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে। তবে কিছু কিছু ব্যক্তির উপর বা মানুষের ওপর রোজা ফরজ করা হয়নি আজকে আমি আপনাদের রোজা কাদের উপর ফরজ নয় এ সম্পর্কে জানাবো আশা করি সঠিক তথ্য পাবেন।

অমুসলিমদের উপরঃ যারা অমুসলিম এবং কাফির তাদের ওপর রোজা ফরজ নয়। ইসলাম ধর্ম গ্রহনের আগে কাফিরদের ওপর রোজা ফরজ নয় এবং পরে যদি তারা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে তার জন্য সেই রোজার কাজা করাও জরুরি না।

অপ্রাপ্তবয়স্কদের ওপরঃ যারা অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলে-মেয়ে তাদের ওপর রোজা ফরজ নয়। কিন্তু পরবর্তীতে তাদের রোজা রাখার জন্য অভ্যাস করার আদেশ দেওয়া হয়েছে বা আদেশ দেওয়া যাবে।

পাগলদের ওপরঃ পাগল প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার কারণে ও তার ওপর রোজা ফরজ নয়। আবার যদি কারো মতিভ্রম হয় এবং ভাল মন্দ বিচার করার ক্ষমতা নেই বা করতে পারে না বা যাদের জ্ঞান লোভ পেয়েছে তাদের ওপর রোজা ফরজ নয়।

চির রোগী ও অক্ষম ব্যক্তিদের উপরঃ যে সকল ব্যক্তি বৃদ্ধ যে তারা রোজা রাখতে গেলে তারা শারীরিক ভাবে অক্ষম এবং বেশিরভাগ সময়ে অসুস্থ থাকে এবং রোগমুক্তির জন্য ওষুধ খেতে হয় তাদের ওপর রোজা রাখা ফরজ নয়।

অশীতিপর বৃদ্ধঃ বার্ধক্যে উপনীত হওয়ার কারণে যারা বাজে সকল ব্যক্তি ভালো-মন্দ বিচার করতে পারে না আবার বার্ধক্যের কারণে ক্ষিধার জ্বালা ও সহ্য করতে পারে না সে সকল ব্যক্তির ওপর রোজা ফরজ নয়।

মুসাফিরঃ মুসাফির অর্থাৎ যে সকল ব্যক্তি সফর করে তারা সফর করার সময় রোজা রাখা বা না রাখার আদেশ আছে তবে পরবর্তীতে সে সকল রোজার জন্য কাজা করে নিতে হবে। একজন মুসাফির ব্যক্তি যতদিন সফরে থাকবে ততদিন রোজা পালন নাও করতে পারে বা রোজা ছাড়তে পারবে।

গর্ভবতী ও দুগ্ধ দানকারী নারীদের উপরঃ যে সকল নারী গর্ভবতী এবং বাচ্চাদের দুধ দান করে থাকে এসব কারণে যদি সেই নারী অসুস্থ এবং সন্তানের অনিষ্টের আশঙ্কা থাকে তাহলে তারা রোজা রাখতে পারবে না কিন্তু পরবর্তীতে কাজা আদায় করে নিতে হবে।

ঋতুবতী মহিলাদের ওপরঃ যে সকল মহিলারা ঋতুবতে অর্থাৎ হায়েজ অথবা মাসিক ঋতুস্রাব কালে বা নিফাস কালে স্রাব হয় তাহলে তারা রোজা রাখতে পারবেনা কিন্তু পরবর্তীতে কাজা আদায় করে নেওয়া যেতে পারে।

দুর্ঘটনা কালে রক্ষাকারী ব্যক্তিঃ যদি কারো কোন দুর্ঘটনা হয় এবং সেই দুর্ঘটনার সময় কোন ব্যক্তি যদি তাকে রক্ষা করতে গিয়ে তাকে রোজা ছাড়তে হয় তাহলে তাকে রোজা ছেড়ে দিতে হবে ।তবে পরবর্তীতে সেই ব্যক্তিকে কাজা আদায় করে নিতে হবে।

রোগ আক্রান্ত ব্যক্তিদের ওপরঃ যে সকল ব্যক্তি অসুস্থ বা অস্থায়ীভাবে রোগাক্রান্ত থাকে এবং তাদের পক্ষে যদি রোজা রাখা কঠিন হয় তাহলে তারা রোজা রাখতে পারবে না। কিন্তু পরবর্তীতে সুস্থ হয়ে গেলে তাকে কাজা আদায় করে নিতে হবে। আবার যদি রমজান মাসে অসুস্থ থাকে তাহলে তাকে সুস্থ হয়ে যাওয়ার পর সেই রমজান মাসের রোজা কাজা করে নেওয়া যেতে পারে।

লেখকের মন্তব্য

ম্যাক্সিমো ইনফো এখানে সেহরি না খেয়ে নফল রোজা হবে কিনা এ সম্পর্কে এবং নফল রোজা রাখার নিয়ম সম্পর্কে অর্থাৎ সমস্ত পোস্টে নফল রোজা বিষয়ক এবং রোজা কাদের ওপর ফরজ এবং তাদের ওপর ফরজ না এ সকল বিষয়ে অনেক সঠিক তথ্য তুলে ধরেছি। আশা করি আপনারা এ সকল বিষয়ে পড়ে অনেক সঠিক তথ্য জানতে পারবেন। তাই এই পোস্টটি পড়ে আপনারা আপনাদের পরিচিতদের এবং বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন যাতে অন্যরাও পড়ার সুযোগ পায় এবং আরো নতুন তথ্য পেতে এই ওয়েবসাইটটি প্রতিদিন ভিজিট করুন। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url