পুরুষদের জন্য খেজুরের উপকারিতা-দিনে কয়টা খেজুর খাওয়া উচিত
আসসালামু আলাইকুম, আজকে আমি আপনাদের পুরুষদের জন্য
খেজুরের উপকারিতা-দিনে কয়টা খেজুর খাওয়া উচিত এবং খেজুর খেলে কি ওজন বাড়ে এ সকল বিষয়ে অনেক
বিস্তারিত সঠিক তথ্য আলোচনা করার চেষ্টা করব। আপনারা এ সকল বিষয়ে হয়তো আগে অনেক
সঠিক তথ্য পাওয়ার চেষ্টা করেছেন কিন্তু পাননি। আজকে আমার এই পোষ্টের মাধ্যমে তা
পেতে পারবেন তাই শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
খেজুর এটি উচ্চ পুষ্টি গুন সম্পন্ন খাবার
খেজুর
কে প্রাকৃতিক শক্তির উৎস বলা হয় কারণ খেজুরে অনেক শক্তি আছে অল্প পরিমানে খাবার
ফলে আমরা বেশি পরিমাণে কিলোক্যালরি পেতে পারি। আজকে আমি আপনাদের এই পোস্টের
মাধ্যমে খেজুর সম্পর্কিত অনেক বিষয় আলোচনা করেছি। যেমন খেজুর ভিজিয়ে খাওয়ার
উপকারিতা, খেজুর খেলে কি ওজন বাড়ে, খেজুর খাওয়ার উপযুক্ত সময়, কোন খেজুর
সবচেয়ে ভালো ও খালি পেটে খেজুর খেলে কি হয় ইত্যাদি। এ সকল বিষয়ে তথ্য পাওয়ার
জন্য এই পোস্টটি পড়ুন।
ভূমিকা
খেজুর আমাদের জন্য অনেক উপকারী একটা ফল এটা আপনারা সকলেই জানেন। কারণ খেজুরে আছে
অনেক পুষ্টিকর ভিটামিন ও খনিজ এবং আছে এন্টি অক্সিডেন্ট, ফাইবার, ক্যালসিয়াম
,পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ,আয়রন ও জিংক ইত্যাদি যেগুলো আমাদের শরীর ও
স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী এবং এগুলো আমাদের পুষ্টির চাহিদা মেটাতে সাহায্য
করে যার জন্য আমরা ভালো থাকি অনেক অসুখ থেকে রক্ষা পায়। খেজুর যেমন মহিলাদের
জন্য উপকারী তেমনি পুরুষদের জন্য খেজুরের অনেক উপকারিতা রয়েছে।
খেজুর খাওয়ার ফলে পুরুষদের হার্ট ভালো থাকে, যৌন শক্তি বৃদ্ধি পায়, বীর্য ঘন
হয়, পুরুষরা শক্তিশালী হয় এবং দীর্ঘস্থায়ী রোগ ভালো হয় ইত্যাদি । আমাদের
খেজুর খাওয়া উচিত পরিমাণ মতো বেশি পরিমাণে খাওয়া ঠিক না তাহলে স্বাস্থ্যের জন্য
সেটা ভালো হবে না। বিশেষজ্ঞরা বলেন আমাদের দৈনিক ২থেকে ৩টি খেজুর খাওয়া উচিত এই
অল্প পরিমাণে খেজুর খাওয়ার ফলে শক্তি যোগাবে আমরা এনার্জি পাব এবং পুষ্টি পাবো।
এর জন্য বেশি পরিমাণে খেজুর খাওয়া উচিত না।যারা ওজন বাড়াতে চায় তারা প্রতিদিন
চারটি খেজুর খেতে পারেন ।
খেজুর ভিজিয়ে খাওয়ার উপকারিতা
খেজুরে রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ যার উপকারিতার কথা নতুন করে আর বলার কোন প্রয়োজন
পড়ে না। কারণ খেজুরে রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ এবং
ভিটামিন
উপাদান যার জন্য খেজুর খাওয়ার ফলে আমাদের শরীর ও স্বাস্থ্যের অনেক উপকার হয়।
আমাদের শরীর স্বাস্থ্য থাকে ভালো, মস্তিষ্কের কার্যকারিতার উন্নতি হয় ,আমাদের
হার্ট ভালো থাকে এবং আমরা বিভিন্ন মারাত্মক রোগ থেকে রক্ষা পেতে পারি। খেজুরে আছে
অনেক পুষ্টিগুণ যেমন শর্করা ,ক্যালসিয়াম, প্রোটিন,
আমিষ, ফাইবার, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ,খনিজ পদার্থ ,আয়রন, ম্যাঙ্গানিজ,
ম্যাগনেসিয়াম ,ভিটামিন বি১, বি ২ এবং আছে ভিটামিন সি ইত্যাদি আরও অনেক ভিটামিন
উপাদান এগুলোর জন্যই আমরা খেজুর খেলে অনেক উপকারিতা পেয়ে থাকি। আবার বিশেষজ্ঞরা
বলেছেন, খেজুর ভিজিয়ে রেখে সেটা সকালে খালি পেটে খেতে হবে তাহলে অনেক রোগ থেকে
রক্ষা মিলবে। খেজুর ভিজিয়ে খাওয়ার ফলে আপনারা যে সকল উপকারিতা পেতে পারেন চলুন
সে বিষয়ে জানা যাক
খেজুরে থাকা পুষ্টিগুণ শোষণেঃ আপনারা যদি খেজুর সারারাত ভিজিয়ে রাখেন
তাহলে এর ফাইটিক এসিড দূর হয়ে যাবে যা এতে থাকা পুষ্টিগুণকে সহজে শোষণ করবে।
আবার ভিজিয়ে রাখা খেজুর খাওয়ার ফলে আপনার হজম প্রক্রিয়া সহজ হবে। তাই আপনাদের
যদি এই খেজুর ভিজিয়ে খাওয়ার অভ্যাস না থাকে তাহলে আজ থেকে শুরু করে দিন নিয়মিত
খেজুর ভিজিয়ে খাওয়ার অভ্যাস।
সতেজ অনুভব করতেঃখেজুর আট থেকে দশ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখুন তারপর এই ভিজিয়ে
রাখা খেজুর সকালে উঠে খালি পেটে খেতে হবে এতে করে খেজুরে থাকা পুষ্টি গুণ আপনি
শোষণ করে নিতে পারবেন। এটা খাওয়ার ফলে আপনারা সতেজ ভাব বোধ করবেন সারাদিন এবং
এটা আপনাদের পেট ভরিয়ে রাখতে সাহায্য করবে অনেক সময় ধরে।
ওজন কমাতেঃযারা শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমাতে চান তারা খেজুর খেতে পারেন কারণ
খেজুরে আছে ফাইবার। ফাইবার থাকার কারণে খেজুর আপনাদের অনেকক্ষণ পেট ভরিয়ে রাখতে
সাহায্য করবে এবং আপনার ক্ষুধা কমাবে। প্রতিদিন নিয়ম করে ভেজানো খেজুর খেলে
আপনাদের ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতেঃভেজানো খেজুর খাওয়ার ফলে আপনার কোষ্ঠকাঠিন্যের
সমস্যা দূর হবে এবং আপনার মলত্যাগের প্রক্রিয়াকে সহজ করে তুলবে আবার আপনার
বদহজমের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করবে। তাই প্রতিদিন কম করে দুইটি ভেজানো খেজুর
খাবেন এতে করে আপনাদের কষ্ট কাঠিন্য সমস্যা প্রতিরোধ করতে পারবেন।
হাড় মজবুত করতেঃ আপনারা যদি আপনাদের হাড়গুলো মজবুত করতে চান তাহলে এবং
হাড়ের ক্ষয়জনিত সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে চান তাহলে আপনারা ভেজানো খেজুর খেতে
পারেন। কারণ এতে আছে ক্যালসিয়াম ,ম্যাগনেসিয়াম ,ফসফরাস ও খনিজ পদার্থ ইত্যাদি
উপাদান যেগুলো আপনাদের হাড়েরক্ষয় এবং হাড় শক্তপোক্ত করতে সাহায্য করবে।
ব্রেনের কার্যকারিতা বাড়ানোর ক্ষেত্রেঃ গবেষণা থেকে জানা যায় ব্রেনের
কার্যকারিতা বাড়ানোর জন্য খেজুর অনেক উপকারী। এতে আছে ফ্ল্যাভানয়েডস উপকারী
উপাদান যেটা আমাদের মস্তিষ্কের ওপর অনেক ভালো কাজ করে থাকে। যার ফলে আমরা স্মৃতি
ভ্রমের মতো সমস্যা হওয়া থেকে সহজে মুক্তি পেতে পারি। তাই এ সকল সমস্যা মেটানোর
জন্য প্রতিদিন সকালে এক থেকে দুইটা পানিতে ভেজানো খেজুর খেতে হবে।
কোন খেজুর সবচেয়ে ভালো
রমজান মাসে আমাদের দেশে খেজুরের চাহিদা বেড়ে যায় রমজান মাসে আমাদের অন্যতম
খাবার হয় খেজুর। ইসলামেও খেজুর সম্পর্কে অনেক কথা বলা হয়েছে ইফতারের খেজুর
খাওয়া সুন্নত। আমাদের দেশে বাজারে অনেক ধরনের খেজুর দেখা যায় কিন্তু এর মধ্যে
কোনটা ভালো এটা বোঝা মুশকিল। সৌদি আরব আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্য ইত্যাদি দেশে
খেজুর চাষ করা হয়ে থাকে। খেজুর দেখতেও যেমন সুন্দর এবং খেতে সুস্বাদু এবং এর
অনেক পুষ্টিগুণ আছে। ৬০০ রকমের আকৃতির
খেজুর সারা বিশ্বে দেখা যায়। খেজুরে অনেক পুষ্টিগুণ এবং ভিটামিন থাকে থাকে
ফাইবার, মিনারেল ,পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম ,অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ,শর্করা ও আমিষ
ইত্যাদি। এগুলো আমাদের শরীর এবং স্বাস্থ্যের জন্য খুব উপকারী কিন্তু কোন খেজুর
ভালো এ সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানিনা তাই আজকে আমার এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনারা
কয়েকটি ভালো এবং উন্নত মানের খেজুর সম্পর্কে জানতে পারবেন।
আজওয়া খেজুরঃ
আজওয়া খেজুর
আমাদের সবার কাছেই খুব জনপ্রিয় এবং সুস্বাদু একটি খেজুর। এই খেজুর দেখতে কালো
রঙের হয় এবং নরম খেতেও অনেক ভালো ও মিষ্টি স্বাদের হয়। সৌদি আরবের মদিনাতে এই
খেজুর চাষ করা হয়ে থাকে। আমাদের নবী এই খেজুর অনেক পছন্দ করতেন। এই খেজুর
খাওয়ার ফলে আমাদের হার্ট ভালো থাকে, হাড় এবং দাঁত মজবুত হয় প্রদাহ জনিত সমস্যা
দূর হয়, ডায়াবেটিস রোগীরাও এই খেজুর খেতে পারবেন। খেজুর খাওয়ার ফলে আমাদের রোগ
প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং শক্তি যোগায় ।
ডেগলেট নূরঃ এই খেজুর আলজেরিয়াতে চাষ হয় এবং এই খেজুর মাঝারি আকৃতির এবং
দেখতে কিছুটা বাঁকা হয় মিষ্টি স্বাদের হয়। এই খেজুরে পটাশিয়াম ,ম্যাগনেসিয়াম
,ফাইবার ও জিংক ইত্যাদি থাকে। এই খেজুর কে সূর্যের আলোতে ধরলে এই খেজুরের ভেতরটা
সোনালী রঙের দেখা যায় এই খেজুর কে খেজুরের রানী বলা হয়ে থাকে।
মেজুলঃ এই খেজুর কেও বিশ্বের জনপ্রিয় একটি খেজুরের মধ্যে অন্যতম বলা হয়
কারণ এই খেজুর কে মরক্কোতে চাষ করা হয় এছাড়াও আমেরিকা সহ অন্যান্য দেশে এই
খেজুর পাওয়া যায় এখন। এই খেজুর দেখতে আকারে বড় এবং বাদামী রঙের হয়ে থাকে। এই
খেজুরের মধ্যে অনেক পুষ্টিগুণ ভিটামিন থাকে যা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি
করে হজম শক্তি বাড়ায় মস্তিষ্ক এবং হাড়ের জন্য অনেক উপকারী হয় এবং খেতেও অনেক
সুস্বাদু হয়।
ওমানিঃ ওমানি খেজুর আকারে বড় হয় এবং মিষ্টি স্বাদের রসালো খেজুর এই
খেজুর চাষ করা হয় ওমানে। এই খেজুরে প্রচুর পুষ্টি এবং ভিটামিন আছে যেমন
সোডিয়াম, আয়রন ও পটাশিয়াম ইত্যাদি।
মাজাফাতিঃ এই খেজুর নরম হয় এবং ঘন বাদামি রং এর হয়। এই মাজাফাতি খেজুর
মূলত ইরানের কেরমান এর সিটিতে চাষ করা হয়। এই খেজুর খেতে মিষ্টি স্বাদের হয় এবং
চকলেটের স্বাদের মত হয়। এই খেজুরে অনেক ভিটামিন থাকে যেমন এ, বি, সি এছাড়াও
ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ইত্যাদি আরো অনেক পুষ্টিগুণ ও ভিটামিন আছে।
হালাউয়িঃ এই খেজুর চাষ করা হয় মূলত ইরাকের হেলা নগরে। এই খেজুর দেখতে
সোনালী বাদামী রঙের হয়ে থাকে এবং এই খেজুর খেতে অনেক সুস্বাদু হয়। একে জোরে আছে
ফাইবার ,পটাশিয়াম, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও আয়রন ছাড়াও আরো অনেক পুষ্টিগুণ ও
ভিটামিন।
আরবারাঃ সৌদি আরবের বাজারে এই খেজুর অত্যন্ত দামে বিক্রি করা হয় এই খেজুর
ছোট হয় না আকারে বেশ বড় এবং লালচে বাদামি এবং পুরু মাংসল হয় এবং বিটিগুলো খুব
ছোট হয়ে থাকে।
বারহিঃ এই খেজুরগুলো আকারে ছোট এবং গোলাকার হয়ে থাকে।পাকার পরেও এই
খেজুরগুলো কিছুটা শক্ত হয়ে থাকে। এই খেজুরের রঙ হলদেটে এবং বাদামি হয়। এই
খেজুরের হলদে অংশটুকু টক-ভাব লাগে এবং বাদামী অংশ মিষ্টি হয়। এই খেজুরে অনেক
ফাইবার, আইরন, পটাশিয়াম ইত্যাদি থাকে।
এছাড়াও আমাদের দেশে আরো অনেক রকমের খেজুর পাওয়া যায় যেমন মরিয়ম খেজুর এটি
ইরানে চাষ করা হয়। সৌদি আরবের আম্বার এবং সুকারি খেজুর ও অনেক ভালো। এছাড়া সৌদি
আরবের আনবারা , সাফাওয়ি ,সেগাই এবং বারহি জাতের খেজুর আছে। এগুলো খেজুর ছাড়াও
আরো অনেক উপকারের জাতের খেজুর আছে তবে কেনার সময় আপনাকে ভালো মানের খেজুর চিনে
কিনে নিতে হবে।
খেজুর খেলে কি ওজন বাড়ে
খেজুর হচ্ছে ক্যালরি সমৃদ্ধ একটি খাবার এই খাবারে অনেক পুষ্টিগুণ আছে এবং শক্তি
বৃদ্ধি কারক ফল হচ্ছে খেজুর। খেজুরের আছে অনেক পরিমাণে প্রাকৃতিক চিনি আছে
ভিটামিন ক্যালসিয়াম আঁশ ফসফরাস ম্যাগনেসিয়াম শর্করা ইত্যাদি যেগুলো আমাদের শরীর
ও স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। এই খেজুর কে প্রাকৃতিক শক্তির উৎস বলা হয়ে
থাকে। আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটি আমাদের প্রতিদিন ২০ থেকে ৩৫ গ্রাম আঁশ জাতীয়
খাবার খেতে বলেন আর এই আঁশ আমরা পেয়ে থাকি খেজুর থেকে।
খেজুরে অনেক প্রাকৃতিক চিনি, গ্লুকোজ এবং ফ্রুক্টোজ ইত্যাদ আছে যা আমাদের অল্প
সময়ের আমাদের শরীরে শক্তি যোগাতে সাহায্য করে অল্প পরিমাণে খাওয়ার ফলে। এছাড়াও
খেজুর খাওয়ার ফলে আমাদের চোখের নানা রকম সমস্যা থেকে আমরা মুক্তি পেতে পারি।
আমাদের হার্ট ভালো থাকবে, আমাদের মস্তিষ্ক কর্মক্ষম ও সতেজ থাকবে ,আমরা ক্যান্সার
রোগ প্রতিরোধ করতে পারব, আমাদের হাড় ও দাঁতের গঠন মজবুত হবে এবং আমাদের হজম
ক্রিয়া উন্নত হবে ইত্যাদি অনেক রোগ ও সমস্যা থেকে আমরা মুক্তি পেতে পারি
খেজুর খাওয়ার ফলে। আবার ও আমাদের ওজন বাড়ানোর জন্য খেজুরের কোন জুড়ি নেই কারণ
একটি খেজুর থেকে আপনারা পেতে পারেন ২৩ কিলো ক্যালরি। আবার ১০০ গ্রাম খেজুর থেকে
আপনারা পেতে পারেন ২৮২ কিলো ক্যালরি শক্তি যা আমরা খুব অল্প পরিমানে খেয়ে বেশি
পরিমাণে কিলোক্যালোরি শক্তি পেয়ে থাকি যা আমাদের ওজন বাড়ানোর জন্য খুব কার্যকর।
খেজুর খাওয়ার ফলে আমাদের যেমন ক্ষুধা লাগে না আমাদের পেট ভর্তি থাকে অতিরিক্ত
খাওয়া থেকে বিরত রাখে এজন্য ওজন কিন্তু আবার নিয়ন্ত্রণে থাকে।
খালি পেটে খেজুর খেলে কি হয়
আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খেজুর খাওয়া খুব দরকার কারণ খেজুরে আছে অনেক পুষ্টিগুণ
এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট এছাড়াও আছে অনেক ভিটামিন যেগুলো আমাদের স্বাস্থ্যের পক্ষে
খুব উপকারী। এই ফলটি অনেক পুষ্টিগুণে ভরপুর। খেজুর খেলে যে শুধু আমাদের
স্বাস্থ্যের উপকার হয় তা না এটা আমাদের ত্বক ও চুলের জন্য অনেক উপকারী।
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, প্রতিদিন সকালে খালি পেটে খেজুর খেলে বেশি উপকারিতা
পাওয়া যাবে। খালি পেটে খেজুর খেলে কি হয় সে সম্পর্কে আপনাদের আজকে বলবো
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতেঃ খেজুরে আছে অনেক ফাইবার যা আমাদের কোষ্ঠকাঠিন্য
এবং বদ হজমের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে থাকে। যে সকল খেজুরগুলো শক্ত সেগুলো
পানিতে সারারাত ভিজিয়ে রেখে সকালে খালি পেটে খেতে হবে তাহলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর
হবে। আবার খেজুর খেলে মুখের লালা খাবারের সাথে ভালোভাবে মিশে যায়। ফলে আমাদের
বদহজমের সমস্যা কিছুটা দূর হয়।
মস্তিষ্ক সচল রাখতেঃ খেজুর খাওয়ার ফলে আমাদের মস্তিষ্ক সচল এবং প্রাণবন্ত
থাকে। এটা আমাদের শরীরের ক্লান্তি দূর করতে সাহায্য করে এবং শরীরে শক্তি যোগায়।
ওজন নিয়ন্ত্রণেঃ যারা ওজন কমাতে চান তাদের জন্য খেজুর খাওয়া অনেক ভালো
কারণ খেজুরে আছে ফাইবার আমাদের ক্ষুধা কমায় এবং আমাদের পেট ভর্তি রাখতে সাহায্য
করে আবার অতিরিক্ত খাওয়া এ রাতে সাহায্য করে থাকে যার ফলে আমাদের ওজন
নিয়ন্ত্রণে থাকে।
হিমোগ্লোবিন বাড়ায়ঃ খেজুরে আছে অনেক আইরন যা আমাদের শরীরে হিমোগ্লোবিন
বাড়াতে সাহায্য করে। আমাদের শরীরে রক্ত সরবরাহ করে থাকে এবং খালি পেটে খেজুর
খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বেড়ে যায়।
হার্টের সমস্যা দূর করতেঃ হার্টের সমস্যা দূর করার জন্য খেজুর অনেক উপকারী
কারণ আমাদের দুর্বল হার্ট কে মজবুত রাখতে অনেকটাই সক্ষম খেজুর। আপনারা যদি
প্রতিদিন সকালে খালি পেটে খেজুর খেতে পারেন তাহলে আপনাদের হার্টের সমস্যা কিছু
দিনের মধ্যে দূর হয়ে যাবে এবং অনেক উপকার পাবেন। এর ফলে আবার হৃদরোগের ঝুঁকিও
কমবে।
খুশখুসে কাশি দূর করতেঃ খুসখুসে কাশি দূর করতে হলে এক গ্লাস পানিতে এক
থেকে দুইটি খেজুর সারারাত ভিজিয়ে রাখতে হবে তারপর সকালে খালি পেটে ওই খেজুর এবং
পানি খেতে হবে এতে করে আপনাদের খুশখুসে কাশি ১৫ দিনের মধ্যেই দূর হয়ে যাবে।
গর্ভবতী মহিলাদের জন্যঃ খেজুর গর্ভবতী মহিলাদের জন্য অনেক উপকারী একটা ফল।
খেজুরে থাকা আয়রন মহিলাদের রক্তে ভরপুর করে তুলতে সাহায্য করে। খেজুর খাওয়ার
ফলে গর্ভের শিশুর হাড় ও রক্ত উৎপন্ন হয়। প্রসবকালীন অনেক সমস্যা থেকে সমাধান
পাওয়া যায় কারণ খেজুরে আছে অনেক ভিটামিন এবং খনিজ। এ সময় গর্ভবতী মহিলারা এক
থেকে দুইটি খেজুর খেতে পারবেন।
ক্যান্সার প্রতিরোধ করতেঃ ক্যান্সারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার ক্ষমতা রাখে
খেজুর। আবার মুখ গহবরের ক্যান্সার প্রতিরোধ করতেও খেজুর অনেক উপকারী।
ত্বকের ক্ষেত্রেঃ বয়স বাড়ার ফলে আমাদের মুখের চামড়া কুঁচকে যায় এই
সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আপনারা খেজুর খেতে পারেন কারণ খেজুরে আছে
ভিটামিন বি এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের ত্বকের জন্য খুব উপকারী। এছাড়াও সকালে
খালি পেটে খেজুর খেলে মুখের বলি রেখা দাগ দূর হয়ে যাবে মুখ হবে উজ্জ্বল এবং
সুন্দর।
চুলের জন্য উপকারীঃ চুলের গোড়া শব্দ করতে এবং উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনতে চুল
পড়া রোধ করতে এছাড়া রুক্ষ ও শুষ্ক ভাব কাটানোর জন্য খেজুর অনেক উপকারী। খেজুরের
মধ্যে আছে এক প্রকারের তেল যা পুষ্টিতে ভরপুর এবং এই তেল আমাদের চুলের জন্য খুব
উপকারী।
এছাড়াও খেজুর খাওয়ার ফলে আমাদের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে ,রক্তস্বল্পতা দূর
হয় ,কোলেস্টেরলের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকে ,প্রদাহ প্রতিরোধ করা যায় ,আমাদের
হাড় ভালো থাকে ইত্যাদি আরো অনেক উপকারিতা পাওয়া যায়। তাই আজ থেকে প্রতিদিন
নিয়ম করে আপনারা সকালে খালি পেটে খেজুর খাওয়া শুরু করেন তাহলে এই সকল রোগ থেকে
রক্ষা পেতে পারবেন সহজেই।
পুরুষদের জন্য খেজুরের উপকারিতা
খেজুর খেলে যেমন আমাদের স্বাস্থ্যের অনেক উপকারিতা হয় তেমনি নারী ও পুরুষদের
জন্য খেজুর খাওয়া অনেক উপকার। গর্ভবতী মহিলাদের জন্য যেমন অনেক উপকারিতা মিলবে
খেজুর খেলে তেমনি পুরুষদের জন্যও খেজুর খাওয়ার অনেক উপকারিতা আছে পুরুষদের জন্য
খেজুরের উপকারিতা সম্পর্কে আজকে আমি বলব আপনাদের পুরুষদের জন্য খেজুরের উপকারিতা
গুলো হল
যে সব পুরুষদের হার্টের সমস্যা আছে তারা খেজুর খেলে অনেক উপকারিতা পাবেন অর্থাৎ
তাদের হার্ট ভালো থাকবে।
- রক্তচাপ কমানোর জন্য খেজুর অনেক উপকারি পুরুষদের জন্য।
- খেজুর খাওয়ার ফলে নারী-পুরুষ উভয়ের ক্যান্সার রোগ প্রতিরোধ করা যায়।
- খেজুর খাওয়ার ফলে পুরুষদের ত্বকের বার্ধক্য দূর হয় এর ফলে পুরুষদের ত্বক অনেক চকচকে উজ্জ্বল এবং মসৃণ হয়।
- খেজুর খাওয়ার কারণে পুরুষদের বন্ধ্যাত্ব দূর হয়।
- যে সকল পুরুষদের ডায়াবেটিসের সমস্যা আছে খেজুর খাওয়ার ফলে তাদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
- খেজুরে অনেক পুষ্টি ও ভিটামিন আছে যা পুরুষদের কর্ম শক্তি বাড়াতে সাহায্য করবে।
- পুরুষদের যৌন সমস্যা থাকলে তা দূর হয় খেজুর খাওয়ার ফলে এবং যৌন শক্তি বহুগুণ বেড়ে যায়।
- পুরুষদের বীর্য ঘন করার জন্য খেজুর খাওয়া প্রয়োজন।
- যে সকল পুরুষদের দীর্ঘস্থায়ী রোগ আছে যেমন ডায়াবেটিস ,ক্যান্সার আলঝাইমার হৃদরোগ ইত্যাদি রোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য খেজুর খেতে পারেন।
- খেজুর খাওয়ার ফলে পুরুষদের দুর্বলতা দূর হয় এবং পুরুষদের শুক্রাণু বৃদ্ধি পায়।
- পরিপাকে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য রোধ করতে ও সাহায্য করে থাকে।
দিনে কয়টা খেজুর খাওয়া উচিত
আমাদের শরীর এবং স্বাস্থ্যের জন্য কোন খাবারই অতিরিক্ত বেশি পরিমাণে খাওয়া ঠিক
না এতে করে আমাদের স্বাস্থ্যের অনেক ক্ষতি হতে পারে সেটা যতই উপকারী খাবার হোক না
কেন। খেজুর খাওয়ার ক্ষেত্রেও আমাদের একটা পরিমাপ আছে। আমরা যদি বেশি পরিমাণে
প্রতিদিন খেজুর খেতে থাকে তাহলে সেটা আমাদের শরীর এবং স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো হবে
না। বেশি পরিমাণে খাওয়ার ফলে আমাদের পেটের সমস্যা বদহজম দেখা দিতে পারে যাদের
ডায়াবেটিস আছে তাদের ডায়াবেটিসের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। আবার যাদের
এলার্জিজনিত সমস্যা
আছে খেজুর খাওয়ার ফলে তাদের এলার্জি বেড়ে যেতে পারে। খেজুর অনেক উচ্চ পুষ্টিগুণ
সমৃদ্ধ একটি খাবার যেটা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুব উপকারী কিন্তু এটা বেশি
খাবার ফলে ও আমাদের শরীরে দেখা দিতে পারে অনেক সমস্যা। তাই পুষ্টিবিদরা বলেন
প্রতিদিন দুই থেকে তিনটি খেজুর খেলেই ভাল হয়। এভাবে আমরা প্রতিদিন যদি দুই থেকে
তিনটি করে খেজুর খায় তাহলে এর অনেক উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ আমরা পেতে পারি এর থেকে
বেশি খাওয়ার প্রয়োজন হবে না। তবে যারা ওজন বাড়াতে চায় তারা প্রতিদিন
চারটি খেজুর খেতে পারবেন।
খেজুর খাওয়ার উপযুক্ত সময়
খেজুর খাওয়ার ভালো অথবা সেরা সময় সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানিনা আজকে তাহলে জেনে
নিন খেজুর খাওয়ার সেরান সময় সম্পর্কে
- সকালে প্রতিদিন খালি পেটে
- দুপুরে খাবার খাওয়ার আগে
- আপনাদের যখন মিষ্টি খেতে ইচ্ছে করবে তখন আপনি খেতে পারেন
- আবার যারা ওজন বাড়াতে চান তারা রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে ঘি এর সাথে খেজুর খেতে পারেন।
শুকনো খেজুর খাওয়ার উপকারিতা
শুকনো খেজুর খাওয়ার উপকারিতার কথা আপনারা হয়তো অনেকেই জানেন না। আমরা যেমন
এমনিতেই নরমাল খেজুর খায় এটা খেলেও যেমন আমাদের অনেক উপকার হয় তেমনি শুকনো
খেজুর খাওয়ার ফলেও আমরা অনেক উপকারিতা পেয়ে থাকি। আজকে চলুন জানা যাক শুকনো
খেজুর খাওয়ার উপকারিতা
- শুকনো খেজুর খাওয়ার ফলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
- হার্টের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায় শুকনো খেজুর খাওয়ার ফলে।
- ডাইবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে অর্থাৎ যাদের ডায়াবেটিস আছে তারা শুকনো খেজুর খেতে পারেন সকালে।
- শুকনো খেজুর খাওয়ার ফলে হজম শক্তি উন্নত হয়।
- খাবার খাওয়ার রুচি বাড়ে শুকনো খেজুর খাওয়ার ফলে।
- যাদের হজমে সমস্যা আছে তারা নিয়মিত শুকনো খেজুর খেতে পারেন তাহলে উপকার পেতে পারেনা।
- শুকনো খেজুর খাওয়ার ফলে চোখের সমস্যা দূর হয় চোখ ভালো থাকে।
- খেজুর খাওয়ার ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পেতে থাকে।
- এই খেজুর খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরের ফাইবারের চাহিদা অনেকটাই পূরণ হয়।
লেখক এর মন্তব্য
ম্যাক্সিমো ইনফো এখানে পুরুষদের জন্য খেজুরের উপকারিতা দিনে কয়টা খেজুর খাওয়া
উচিত এবং খেজুর খেলে কি ওজন বাড়ে ইত্যাদি ছাড়াও আরো কয়েকটি বিষয় নিয়ে এই
পোস্টটিতে অনেক বিস্তারিত আলোচনা করেছে এবং সঠিক তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছে
আপনাদের সামনে এ পোস্টটি পড়ে আপনারা অনেক উপকৃত হবেন। ভালো লাগলে আপনাদের
পরিচিতদের সাথে শেয়ার করবেন এই পোস্টটি এবং আরও তথ্য পেতে নিয়মিত এই ওয়েব
সাইটটি ভিজিট করুন এবং কমেন্টে জানাবেন কেমন হয়েছে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url