কোন মাসে কোন সবজি চাষ করতে হয় pdf জানুন
আসসালামু আলাইকুম, আমাদের দেশ ছয় ঋতুর দেশ এই দেশে নানা ধরনের সবজি চাষ করা হয়
প্রায় সারা বছর। কোন মাসে কোন সবজি চাষ করতে হয় pdf এবং বারোমাসি সবজি চাষ pdf
ও টবে বারোমাসি সবজি চাষ সম্পর্কে আজকে আমি এই পোস্টটির মাধ্যমে আপনাদের সামনে
তুলে ধরবো। তাই এগুলো জানার জন্য আপনারা এই পোস্টটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
ষড়ঋতুর দেশ আমাদের এই বাংলাদেশ আমাদের এই দেশে বারোমাসি সবজি চাষ করা হয় এখন।
আবহাওয়া ও জলবায়ুর
তারতম্যের কারণে এখন অনেক আগাম যাতে সবজি চাষ করা হয় মৌসুমীর আগেই। এখানে আমি
কোন মাসে কোন সবজি চাষ করতে হয় pdf এবং বারোমাসি সবজি চাষ pdf ও টবে বারোমাসি
সবজি চাষ ছাড়াও আরো কয়েকটি সবজি চাষের বিষয় নিয়ে এই পোস্টটিতে আলোচনা করেছি
আপনাদের জন্য। আপনারা এগুলো পড়ে উপকৃত হবেন তাই এই পোস্টটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
ভূমিকা
আমাদের দেশ ছয় ঋতুর দেশ এই দেশে বিভিন্ন রকমের শাকসবজি বিভিন্ন সময়ে চাষ করা
হয়। অর্থাৎ বছরের প্রায় সব সময় বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি এ দেশের কৃষকেরা চাষ করে
থাকেন এবং বাজারে বিক্রি করে লাভবান হন। আমাদের দেশে বারোমাসি সবজি চাষ করা হয়
এছাড়াও তবে চাষ করা হয় বিভিন্ন রকমের সবজি এই সবজিগুলো আমাদের পুষ্টির চাহিদা
পূরণ করে এবং এই সবজিগুলোতে বিভিন্ন পরিমাণে খনিজ পদার্থ ভিটামিন এবং পুষ্টিগুণ
রয়েছে যা আমাদের শরীরের জন্য
অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এই শাকসবজি গুলো খেলে আমরা সুস্থ থাকব। আমাদের দেশের
আবহাওয়ার তারতম্যের কারণে ও বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সবজি চাষ করা কষ্টকর হয়ে যায়
এর জন্য এখন নানা ধরনের টেকনোলজি ব্যবহার করে আগাম জাতের সবজি চাষ করা সম্ভব
হচ্ছে এখন। এবং এগুলো মৌসুমের আগে বাজারে তোলার ফলে কৃষকেরা বেশি দামে বিক্রি করে
লাভ করতে পারছে। আমাদের দেশে শীত মৌসুমে অনেক সবজি পাওয়া যায় যথা ফুলকপি,
বাঁধাকপি, মূলা, বেগুন, টমেটো ,লাল শাক ,
পুঁইশাক, পালং শাক, ধনেপাতা ,কাঁচামরিচ, পেঁয়াজ ,রসুন ও আলু ইত্যাদির সবজি।
এগুলো পরিচর্যা করার জন্য জমিতে প্রয়োজন মত পানি সেচ দিতে হয় সার প্রয়োগ করতে
হয় বালাই নাশক ব্যবহার করতে হয় এবং আগাছা পরিষ্কার করে রাখতে হয় তবে ভালো সবজি
চাষ করা সম্ভব।
জানুয়ারি মাসে কি কি সবজি চাষ করা যায়
বছরের প্রথম মাস হচ্ছে জানুয়ারি মাস এই জানুয়ারি মাসে পৌষ এবং মাঘ মাস এই দুই
মাস চলমান থাকে। এই দুই মাসে অর্থাৎ জানুয়ারি মাসে আমাদের দেশে প্রচুর পরিমাণে
ঠান্ডা পড়ে এ সময় অনেক সবজি পাওয়া যায় এবং এর ফলন অনেক ভালো হয়। অনেক চাষীরা
বাণিজ্যিক ভাবে মৌসুমীর ফল ফুল সবজি চাষ করে থাকে তাদেরকে এই সময়ে গাছের গোড়ায়
মাটি দিতে হবে সার দিতে হবে পানি সেচ দিতে হবে এবং আগাম সবজি চাষের জন্য বীজতলা
তৈরি করতে হবে এবং বীজ বপন করতে হবে।
যাতে করে যে সকল সবজির চাষ করবে সেগুলোর ফলন ভালো হয়। এই শীতকালে অনেক ধরনের
সবজি পাওয়া যায় এই শীতকাল টাই হচ্ছে সবজির ভালো একটা মৌসুম। এই জানুয়ারি মাসে
অনেক ধরনের সবজি চাষ করা হয় যথা
- পেয়াজ
- রসুন
- লাল শাক
- পালং শাক
- মুলা শাক
- ধনেপাতা
- আলু
- সিম
- লাউ
- ফুলকপি
- বাঁধাকপি
- টমেটো
- গাজর
- মটরশুঁটি
- বাটি শাক
- বেগুন ও
- ওলকপি ইত্যাদি
কোন মাসে কোন সবজি চাষ করতে হয় pdf জানুন
আমাদের বাংলাদেশে ছয় ঋতুর দেশ। প্রত্যেকটি ঋতুতে দুইটি করে মাস থাকে এর বারোটি
মাস নিয়ে ছয়টি ঋতু হয় এই বারো মাসে বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করা হয় আমাদের
দেশে এক এক ঋতুতে এক এক রকম সবজি চাষ করা হয়। কৃষি মৌসুম রয়েছে তিনটি যথা
খরিফ-১, খরিফ- ২ এবং রবি। উৎপাদনের ওপর ভিত্তি করে কৃষি মৌসুমকে তিন ভাগে ভাগ করা
হয়েছে কিন্তু ভৌগোলিক অবস্থান এদেশের আবহাওয়া ও জলবায়ু এবং বিভিন্ন সময়
বিভিন্ন সবজি প্রয়োজনের তাগিদে প্রতি মাস
গুলোতে কিছু না কিছু কৃষি কাজকর্ম করে থাকেন আমাদের দেশের চাষীরা। এর জন্য বছরের
বা মাসের প্রতিটি দিনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ কৃষি কাজের জন্য। আমাদের দেশের চাষীরা
এই বারো মাসে বিভিন্ন রকমের সবজি চাষ করে অনেক লাভবান হচ্ছে এখন এবং নতুন নতুন
সবজি চাষ করছে। এতে করে আমাদের দেশের সবজি চাহিদা এবং আমাদের দেশের মানুষের
পুষ্টি চাহিদা পূরণ হচ্ছে। আগেকার দিনে মানুষ বাড়ীর আঙ্গিনার চারপাশে সবজি চাষ
করতো কিন্তু এখন তার পরিবর্তন হয়েছে।
এখন কৃষকেরা বাণিজ্যিকভাবে বিভিন্ন ধরনের সবজি আবাদ করে লাভবান হচ্ছে। কোন মাসে
কোন সবজি চাষ করতে হয় চলুন জেনে নেওয়া যাক এ সম্পর্কে
জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারি মাসে চাষ করা হয়ঃ জানুয়ারি মাসে প্রচুর শীত থাকে
আমাদের দেশে এ সময় অনেক ধরনের সবজি পাওয়া যায় এবং এ জানুয়ারি ফেব্রুয়ারি
মাসে প্রচুর পরিমাণে নতুন নতুন সবজি চাষ করা হয়। এ সময় আলু,পেঁয়াজ, রসু্ন,
টমেটো, বেগুন ,ফুলকপি ,বাঁধাকপি , পালং শাক , লাল শাক ও সিম ইত্যাদি নানা ধরনের
সবজি পাওয়া যায় বা চাষ করা হয়। এ সময় আলু, পেঁয়াজ এবং রসুনের গোড়ায় মাটি
দিতে হয় শেষ দিতে হয় সার প্রয়োগ করতে হয় এছাড়াও টমেটোর ফল
ছাটাই ও কান্ড ছাঁটাই করতে হয়। নতুন সবজি চাষের জন্য বীজতলা তৈরি করা এবং চারা
রোপন করতে হয় বীজ বপন করতে হয় যাতে করে সুস্থ ও
রোগ মুক্ত
চারা রোপন করা যেতে পারে। এ সময় কৃষকেরা সবজির প্রচুর পরিমাণে পরিচর্যা করে
থাকেন ভালো ফলনের জন্য। এই জানুয়ারি মাসে শীতের জন্য নানারকম সবজি পাওয়া যায়
এবং শীতকাল হচ্ছে সবজির একটা ভালো মৌসুম।
ফেব্রুয়ারি এবং মার্চ মাসঃ এ সময় সবজির বীজ তলা তৈরি করা বীজ বপন
ডালপালা বপন এবং লাল বাধা কপির ডাল পালা বপন করা হয়। এছাড়াও খরিফ সবজির জন্য
চারা উৎপাদন করা এবং মূল জমি তৈরি করা চারা রোপন করা এবং সার দিতে হয়। মিষ্টি
আলু এবং আলু সংগ্রহ করতে হয় এবং রবি সবজির জন্য বীজ সংগ্রহ করতে হয়। আলু
সংরক্ষণের জন্য অনেক সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে আলু লাগানোর পর গাছের বয়স যখন ৯০
দিন হবে তখন জমির আগাছা পরিষ্কার করে গর্তে আবর্জনা দিয়ে সার তৈরি করতে হবে।
মার্চ- এপ্রিল মাসেঃ এ সময় টমেটো ,বেগুন ও মরিচের বীজ বপন করতে হয় এবং
রোপন করতে হয়। এবং নতুন বীজ তলা তৈরি করে সেগুলোতে বীজ বপন করতে হয়। কুমড়া
সবজির আগাছা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে সেচ এবং সার দিতে হবে এবং কীটপতঙ্গ ও রোগ
নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। রবি সবজির চাষের জন্য বীজ সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করে রাখতে হবে
এবং ফসলের জমিতে মাটিতে রসের অভাব হলে পানি সেচ দিতে হবে তা না হলে ফল ঝরে পড়বে।
তাই জমিতে সেচের ব্যবস্থা করা উচিত।
এপ্রিল- মে মাসেঃ এ সময় বেগুন মরিচ আদা হলুদ মুড়ি বীজ সবুজ পেঁয়াজ ,লাল
বাঁধাকপিও ডাটা ইত্যাদি এবং গ্রীষ্মকালীন টমেটো এর চারা বপন করা হয়। এছাড়াও
মিষ্টি কুমড়া , চিচিঙ্গা , শসা ,চাল কুমড়া ও করলা ইত্যাদি সবজির চারা উৎপাদন
করা হয় এবং কুমড়া সবজির ক্ষেত্রে কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণ এবংসেচ দেওয়া হয়। এ
সময় কাঁচা কাঁঠাল ,সজিনা , তরমুজ পাওয়া যায়। এছাড়াও এই সময়টায় ফল চাষ করার
জন্য নির্বাচন করা হয় জায়গা চারা সংগ্রহ এবং পুরাতন ফল গাছে সার প্রয়োগ এবং
সেচ দেওয়া হয়।
মে -জুন মাসেঃ এই সময় বিভিন্ন সবজি রোপন করা হয় এবং সেচ ও সার দেওয়া
হয়। সজিনা সংগ্রহ করা হয় এবং গ্রীষ্মকালীন টমেটোর বীজ রোপন করা হয় এবং
পরিচর্যা করা হয়। এছাড়াও চিচিঙ্গা ,পটল , কাঁকড়া ইত্যাদির পোকা দমন করা হয়
এবং তার সাথে যে নবী কুমড়া ফসলের চাষ করা হয় তার জন্য মাচা তৈরি এবং সার
প্রয়োগ এবং সেচ দেওয়া হয়। ফল সংগ্রহ করা হয় এবং জাত ও প্রক্রিয়াজাতকরণ করা
হয়।
জুন- জুলাই মাসেঃ এই সময়টা বর্ষা কাল এ সময় বেগুন টমেটো সবুজ মরিচের
পরিচর্যা করা হয় মটরশুঁটি বপন করা হয়। শস্যদানা সবজির কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণ করা
হয় ফলের চারা রোপন করার জন্য গর্ত তৈরি করা হয় এবং পরিপক্ক ফল সংগ্রহ করা হয়
এবং গাছে সার প্রয়োগ করা হয়। আগে যে সকল সবজি রোপন করা হয়েছিল সেগুলো থেকে ফল
সংগ্রহ করা হয় এবং সংগ্রহ করার পর আবার সেগুলোতে পরিচর্যার কাজ করা হয়। ঔষধি
গাছ রোপন করা হয় এবং সেগুলো খুটির সাথে বেঁধে দেওয়া হয়।
জুলাই -আগস্ট মাসেঃ এসময় বীজতলা তৈরি করা হয় এবং বাঁধাকপি ,ফুলকপি ,
টমেটো ,লাউ ও বেগুনের মত আরো বিভিন্ন রকম সবজি বপন করা হয় এ সময়। এছাড়াও
সবজিগুলোর কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা করা হয় এবং যাতে দ্রুত বৃদ্ধি হয়
সেগুলো লক্ষ্য করা হয়। আরো লাল বাঁধাকপি ,পালং শাক এবং শিম বীজ বপন করা হয়।
রোপন করা সবজির পরিচর্যা করা হয় এবং সংগ্রহ করার পর সেগুলো বাজারজাত এবং
প্রক্রিয়াজাতকরণের কাজ করা হয়।
আগস্ট- সেপ্টেম্বর মাসেঃ এ সময় অধিকাংশ খরিফ-২ সবজি গুলো সংগ্রহ এবং
সঞ্চয় করা হয়। খরিফ-১ সবজির জন্য বীজ সংগ্রহ করা হয়। এছাড়া আগাম রবি সবজির
জন্য অর্থাৎ বাঁধাকপি, ফুলকপি , টমেটো ,বেগুনও লাউ ইত্যাদি সবজির জন্য চারা রোপন
সার দেওয়া কাজ করা হয়। রবি সবজির জন্য বীজ তলা তৈরি এবং বোপনের পর কীটনাশক
ব্যবহার করা হয়। আগে যে সকল সবজি রোপন করা হয়েছে সেগুলোর যত্ন এবং ফলের কলম,
খুঁটি ,বেড়া দেওয়া এবং ফল সংগ্রহের পরে অঙ্গ ছাটাই ইত্যাদি কাজ করা হয়।
সেপ্টেম্বর- অক্টোবর মাসেঃ এই সময় আগাম রবি সবজির চারা রোপণ জমিতে সেচ
দেওয়া এবং সার প্রয়োগ করা হয় এবং জমিতে থাকা আগাছা পরিষ্কার করে দেওয়া হয়।
নবী রবি শাকসবজির জন্য চারা তৈরি বীজ বপন করা এবং আগাছা নিয়ন্ত্রণ করা হয় আগাম
জাতের টমেটো ফুলকপি সবুজ ফুলকপি বাঁধাকপির শিকড় ইত্যাদি এগুলোর। এছাড়া লাউ
মটরশুটি রসুন পেঁয়াজের বীজ বপন আলোর ওপর এবং এগুলোর আগাছা ও ময়লা পরিষ্কার করা
এবং সার প্রয়োগ করা হয়।
অক্টোবর- নভেম্বর মাসেঃ এই মাসে আলু এবং আগাম রবি সবজির পরিচর্যা করা হয়
এবং সবজি সংগ্রহ করা হয়। নবী বারি সবজির জন্য চারা উৎপাদন জমি তৈরি করা এবং রোপন
করা হয়। বাঁধাকপি এবং ফুলকপির মূল বাধা আগাছা নিয়ন্ত্রণ মরিজের বীজ বপন এবং
রোপন করা ইত্যাদি কাজ করা হয়। সবজি এবং ফল গাছের গোড়ায় মাটিতে রস না থাকলে তার
জন্য সার সেচ এবং মালচিং ব্যবহার করা হয়।
নভেম্বর- ডিসেম্বর মাসেঃ এই দুই মাসে মিষ্টি আলু চাষ করার জন্য মিষ্টি
আলুর লতা রোপন করা হয়। এছাড়াও আগে যেগুলো লাগানো হয়েছিল সেগুলোর পরিচর্যা করা
হয়। রসুন ,পেঁয়াজ ও মরিচের চারা রোপন করা হয় এবং অন্যান্য রবি ফসল যেমন
ফুলকপি, টমেটো , বেগুন ও বাঁধাকপির ইত্যাদি যত্ন নেওয়া হয় সেচ দেওয়া হয় তার
প্রয়োগ করা হয় এবং সবজি সংগ্রহ করা হয়।
ডিসেম্বর- জানুয়ারি মাসে চাষ করা হয়ঃ এ সময় বিভিন্ন রকমের সবজি আবাদ বা
চাষ করা হয় এ সময় আগাম ও রবি শাকসবজি পোকামাকড় দমন করা হয় সবজি কাটা বা
সংগ্রহ করা হয় জমিতে সেচ দেওয়া হয় সার প্রয়োগ করা হয়। নবী বা্রি শাকসবজি
গুলোর রক্ষণাবেক্ষণ এবং ফল গাছের পোকা দমন রোগ দমন ব্যবস্থা করা হয়। এই সময়
যারা ফুলের চাষ করতে চায় তারা ফুল গাছের চারা রোপন করতে পারেন এবং যত্ন নিতে হবে
ভালোভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে।
ফেব্রুয়ারি মাসের সবজি চাষ
ফেব্রুয়ারি মাস হচ্ছে শীতের শেষ মাস এ মাসে প্রচুর শাকসবজি চাষ করা হয় কারণ
ফেব্রুয়ারি মাসে মোটামুটি ভাবে শীতকালীন আবহাওয়া টা থেকে যায়। এ মাসে
বায়ুমণ্ডল ঠান্ডা থাকে। এই শীতের মধ্যেও আমাদের দেশের কৃষক ভাইয়েরা সবজি চাষ
করে থাকে এবং সে সকল সবজির পরিচর্যা ও করে থাকে নানা রকম ভাবে। সবজি সংগ্রহ করা
থেকে শুরু করে জমিতে সেচ দেওয়া সার প্রয়োগ করা আগাছা দমন করা সবই করে থাকে কৃষক
ভাইয়েরা যাতে করে তারা ভালো ফলন পায়।
আবার ফল বা সবজি সংগ্রহ করার পর সেগুলোকে বাজারজাতকরণ করা এবং প্রক্রিয়াজাতকরণ
করেও থাকে এরা। ফেব্রুয়ারি মাসে যে সকল সবজিগুলো চাষ করা হয় সেগুলো হচ্ছে গাজর,
লেটুস, পেঁয়াজ, মটর, পালং শাক, মুলা ,গ্রীষ্মকালীন বাঁধাকপি, রসুন, শসা, আলু,
টমেটো, ফুলকপি, মিষ্টি মরিচ, তুলসী ও আগাম বিটরুট ইত্যাদি। এছাড়া ফেব্রুয়ারি
মাসে গম এর জমিতে সেচ দেওয়া হয় এ সময় গম থেকে শিষ বের হয় এবং গাছের বয়স যদি
৫৫ থেকে ৬০ দিন হয় তাহলে এ সময় জমিতে পানি
দিতে হয়। এ সময় ভুট্টা গাছের গোড়ায় মাটি তুলে দিতে হয় এ সময় ভুট্টা গাছে
পোকার আক্রমণ দেখা যায় এ জন্য বালায় নাশক দিতে হবে। আলু চাষের ক্ষেত্রে এর
সময়ে আলুর নাবি ধসা রোগের আক্রমণ দেখা যায় তার জন্য স্প্রে করতে হবে এবং গাছের
বয়স যখন ৯০ দিন হবে তখন গাছ কেটে খেলে দশ দিন পর থেকে আলু তুলতে হবে। এপাশে
মসুর, ছোলা, মাসকালাই ,মুগ, তিসি ও মটর জাতীয় ডাল গুলো পাকে এজন্য এ সময়ে এই
ডালগুলো মাঠ থেকে সংগ্রহ করা ভালো যত তাড়াতাড়ি সম্ভব।
বারোমাসি সবজি চাষ pdf ও টবে বারোমাসি সবজি চাষ
আমাদের এই দেশ ছয় ঋতুর দেশ ঋতুবৈচিত্রের তারতম্যের কারণে আমাদের দেশে নানারকম ফল
ও শাক-সবজি চাষ করা যায়। আমাদের বাংলাদেশের কৃষি মৌসুমকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়
খরিফ-১ খরিফ-২ এবং রবি। আমাদের দেশের ভৌগোলিক অবস্থান আবহাওয়া এবং জলবায়ুর ওপর
ভিত্তি করেও আমাদের দেশে অনেক সময় অনেক শাকসবজি চাষ করা হয় বারোমাসি চাষ করা
যায় এ সকল শাকসবজি। চলুন জেনে নেওয়া যাক বারো মাসি সবজি চাষ সম্পর্কে
বৈশাখ মাসে চাষ করা হয়ঃ টাটা পাতা পেঁয়াজ পাট শাক লাল শাক বেগুন আদা
হলুদ মরিচ ঢেঁড়স ইত্যাদি সবজির বীজ বপণের সময় এই মাস। এই সময় গ্রীষ্মকালীন
টমেটো চারা রোপন ও করা হয়। এছাড়া মিষ্টি কুমড়া চিচিঙ্গা চাল কুমড়া করলা
ইত্যাদির মাচা তৈরি করা হয় এবং চারা উৎপাদন ও করা হয় এ সময়ে। এছাড়াও খরিফ-২
এর সবজিগুলোর জন্য চারা তৈরি করা এবং জায়গা তৈরি করতে হয় এ সময়টায়। শাকসবজি
গুলোর জন্য পানি সেচ দেওয়া সার প্রয়োগ করা এবং যত্ন নিতে হয়।
জ্যৈষ্ঠ মাসে চাষ করা হয়ঃ এ সময় খরিফ-২ এর সবজিগুলোর চারা রোপন করতে হয়
এবং পানি দিতে হয় ও সার প্রয়োগ করে তার পরিচর্যা করা দরকার। সজিনা সবজিটি
সংগ্রহ করা হয় এবং গ্রীষ্মকালীন টমেটোর চারা রোপন করে তার পরিচর্যা করা হয়। এ
সময় নাবি গোমরা জাতীয় সবজির মাচা তৈরি করে দিতে হয় এবং পানি ও সার দিতে হয়।
পোকামাকড় দমনের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয় পটল, কাকরোল এবং চিচিঙ্গা সংগ্রহ
করে।
আষাঢ় মাসে চাষ করা হয়ঃ মাসে চাষ করা হয় গ্রীষ্মকালীন বেগুন টমেটো সিমের
বীজ বপন করা হয় কাঁচামরিচের যত্ন করতে হয় এবং রোগ বালাই ও পোকামাকড় দমন করার
জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়। আগে থেকে লাগানো বেগুন, টমেটো এবং ঢেঁরস সংগ্রহ
করতে হয়। খরিফ-২ সবজির জন্য চারা রোপন করতে হয় এবং পানি সেচ দেওয়া এবং তাতে
সার প্রয়োগ করা হয়। এ সময় বিভিন্ন ঔষধি গাছের চারা রোপন করা হয় এবং তা খুঁটি
দিয়ে বেঁধে দেওয়া হয় কলম দেওয়া হয়।
শ্রাবণ মাসে চাষ করা হয়ঃ শ্রাবণ মাসে আগাম রবি সবজিগুলো যেমন ফুলকপি,
লাউ, বেগুন ,বাঁধাকপি ও টমেটোর জন্য বীজ তলা তৈরি করতে হয় এবং বীজ বপন করা শুরু
করে দিতে হয়। এ সময় খরিফ-২ এর সবজিগুলো তুলতে হয় এবং পোকামাকড় দমন করার
প্রয়োজন পড়ে। এ সময় লাল শাক, পালং শাক এবং শিমের বীজ বপন করা হয় এবং এগুলোর
পরিচর্যা করা হয় এছাড়াও ফলের পরিচর্যা ও তাদের কলম খুঁটি দেওয়া এবং ফল সংগ্রহ
করা হয়।
ভাদ্র মাসে চাষ করা হয়ঃ সময় আগাম রবি সবজিগুলোর মধ্যে বাঁধা কপি, ওলকপি
,ফুলকপি, টমেটো, কুমড়া ,বেগুন এবং লাউয়ের জন্য জমি তৈরি করা হয় এবং চারা রোপন
করে তারপরে স্যার প্রয়োগ করা হয়। নাবি রবি এবং মধ্যম সবজি গুলোর জন্য বীজতলা
তৈরি করে তারপর বীর বপন করতে হয়। আগে থেকে লাগানো ফসলের পরিচর্যা করে ফসল সংগ্রহ
করে তারপরে গাছের অতিরিক্ত অঙ্গ ছাঁটাই করা হয়।
আশ্বিন মাসে চাষ করা হয়ঃ এ মাসে লাউ বরবটি এবং সিমের মাচা তৈরি করা হয়
এবং এর পরিচর্যা করা হয় এছাড়াও পেয়াজ ,রসুন বীজ বপন করতে হয় এবং আলু লাগাতে
হয়। আবার ফল গাছের গোড়ায় মাটি দিতে হয় আগাছা পরিষ্কার করতে হয়। আগাম রবি
সবজিগুলোর জন্য বীজতলা তৈরি করে সেগুলো বীজ বপন করার পরে সেগুলোর যত্ন করতে হবে
এবং টমেটো, ফুলকপি, বাঁধাকপি এবং ওলকপির আগাছা পরিষ্কার করতে হবে।
কার্তিক মাসে চাষ করা হয়ঃ কার্তিক মাসে আলুর পরিচর্যা করা হয় এবং মধ্যম
রবি সবজি পরিচর্যা করে তার সার ও পানি শেষ দিতে হয় এছাড়াও আগাম রবি সবজিগুলোর ও
পরিচর্যা এবং সংগ্রহ করা হয়। সবজিগুলোর জন্য চারা উৎপাদন করে জমি তৈরি করে
তারপরে চারা লাগানোর জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়। এছাড়াও আগে লাগানো সবজিগুলোর
গোড়া বাধা ও পরিস্কার করা হয়।
অগ্রহায়ণ মাসে চাষ করা হয়ঃ এ সময় মরিচ, পেঁয়াজ এবং রসুনের চারা রোপন
করা হয় এবং মিষ্টি আলুর জন্য লতা রোপন করা হয়। আলুর জমিতে সার দেওয়া পানি সেচ
দেওয়া ইত্যাদি কাজগুলো করতে হয়। এছাড়াও অন্যান্য রবি ফসল গুলোর আগাছা পরিষ্কার
করে ও পানি প্রদান করা হয় এবং সবজি সংগ্রহ করা হয় এবং ফল গাছের গোড়ায় মালচিং
পদ্ধতি করতে হবে এবং সার দিতে হবে।
পৌষ মাসে চাষ করা হয়ঃ এ সময় নাবী রবি সবজিগুলোর পরিচর্যা করতে হবে এবং
পোকামাকড় ও রোগবালায় দমন করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এছাড়াও আগাম ও মধ্যম
রবি সবজি গুলোর ও যত্ন নিতে হবে এবং পোকামাকড় দমন ব্যবস্থা করতে হবে এবং সবজি
সংগ্রহ করে সেগুলো বাজারজাতকরণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ করতে হবে। এ সময় কেউ যদি
ফুলের গাছ লাগাতে চান তাহলে লাগাতে পারেন তবে বেশি করে যত্ন নিতে হবে।
মাঘ মাসে চাষ করা হয়ঃ এ সময়ে পেঁয়াজ , আলু এবং রসুনের গোড়ার দিকে মাটি
দিতে হবে পানি সেচ দিতে হবে এবং সার প্রয়োগ করতে হবে। টমেটোর ফল ছাটার এবং ডাল
ছাঁটাই করতে হবে। আগাম খরিফ-১ সবজি গুলোর জন্য বীজ তোলা তৈরি করে বীজ বপন করতে
হবে এবং এ সময় সুস্থ রোগমুক্ত চারা রোপন করলে ভালো হয় যাতে পরবর্তীতে ভালো ফলন
পাওয়া যায়।
ফাল্গুন মাসে চাষ করা হয়ঃ এসময় ঢেঁড়স এবং ডাটা শাকের বীজ বপন করা হয়
এবং খরিফ-১ সবজিগুলোর জন্য বীজ তোলা তৈরি করে বীজ বপন করা হয়। এছাড়াও মিষ্টি
আ্লু এবংআলু সংগ্রহ করা হয়। এছাড়াও আরো অন্যান্য ফসলের জন্য বিশেষ যত্ন নিতে
হয় পানি সেচ দিতে হয় সার প্রয়োগ করতে হয় রোগবালায় দমন ব্যবস্থা করতে হয়।
আলুর বয়স ৯০ দিন হলে গাছগুলো মাটি সমান করে কেটে দিতে হবে এবং তার দশ দিন পর
থেকে আলু সংগ্রহ করতে হবে।
চৈত্র মাসে চাষ করা হয়ঃ এ সময় টমেটো, মরিচ এবং গ্রীষ্মকালীন বেগুনের বীজ
বপন করা হয় এবং চারা ও রোপন করার প্রয়োজন পড়ে। যেগুলো তারা তৈরি হয়ে গেছে
সেগুলো মূল জমিতে লাগাতে হয় তারপরে সেগুলো ধীরে ধীরে পর্যায়ক্রমে সেচ দিতে হয়
সার প্রয়োগ করতে হয় পোকামাকড় রোগবালায় দমনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়।
এছাড়াও নাবি রবি সবজি গুলো মাঠ থেকে সংগ্রহ করতে হয় এবং সংরক্ষণ করে রাখতে হয়।
এ সময়ে মাটিতে পানির রস কমে গেলে ফল ঝরে যেতে পারে তাই পানি সেচ দিতে হবে।
এখন অনেকেই বাড়ির ছাদে বা আঙিনায় টবে করে সবজি চাষ করছে। টবে করে এখন বিভিন্ন
ধরনের সবজি যেমন বেগুন, লাউ ,শিম, মূলা ,ওলকপি, বাঁধাকপি, ফুলকপি, গাজর, পটল
,করলা, ঢেঁড়স, ধনেপাতা, আলু এবং শালগম ইত্যাদি নানা ধরনের সবজি আবাদ করছে এতে
করে টাটকা এবং বিশুদ্ধ সবজি খেতে পারা যায়। এই সবজি গুলো লাগানোর ৬০ থেকে ৯০
দিনের মধ্যে উৎপাদন শুরু হয়ে যায় এবং সেগুলো সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রি করা ও
যায় ও বাড়িতে খাওয়া যায়। টবে সবজি লাগানোর
জন্য প্রথমে মাটি ভালোভাবে প্রক্রিয়াকরণ করে নিতে হবে মাটির সাথে সার মিশিয়ে
তৈরি করতে হবে। এ মাটির সাথে আমরা জৈব সার এবং গোবর সার ব্যবহার করতে পারি।
এছাড়াও ইউরিয়া মিউরেট অব পটাশ এবং ম্যাগনেসিয়াম ফসফেট সার দিতে হবে প্রয়োজন
মত তারপরে টবে চারা লাগাতে হবে এবং প্রয়োজনমতো মাটি দিতে হবে পানি দিতে হবে তবে
টবের কাজ ভালো হবে এবং ফলন ও ভালো পাওয়া যাবে।
আগাম সবজি চাষের তালিকা
এখন অনেক কৃষকেরায় আগাম সবজি চাষের ওপর বেশি গুরুত্ব দিয়েছে কারণ বাজারে আগাম
সবজি তুলতে পারলে দাম পাওয়া যাবে বেশি। এতে করে কৃষকেরা অনেক লাভবান হবে। তাই
অনেক ইস ওকে এরাই এখন শীতের আগেই বাজারে শীতকালীন শাকসবজি তুলতে সক্ষম হচ্ছে আগাম
জাতের সবজি চাষ করে। আগাম জাতের সবজির মধ্যে আছে বেগুন, শিম, বাঁধাকপি, লাল শাক,
ফুলকপি, করলা , ঢেঁড়স ,পালং শাক, টমেটো এবং পুঁইশাক ইত্যাদি। এ সকল সবজি চাষ
আগের চেয়ে অনেক
ভালো হওয়ার সম্ভাবনা আছে সামান্য বৃষ্টি হওয়ার জন্য। শুধু এ সকল সবজি নয় যে
কোন মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই যদি সেই মৌসুমের সবজি বাজারে শুরুতে দেখা যায় তাহলে
সে সবজিগুলোর দাম বেশি পাওয়া যায় এবং ব্যাপকভাবে কৃষকেরা লাভ করে। এতে করে যেমন
সবজি চাহিদা মেটানো যায় স্থানীয় বাজারে এবং অন্য জায়গাতেও তার রপ্তানি করা
যায়। এখন আগাও জাতের সবজি চাষ পদ্ধতি জন্য অনেক উন্নত মানের চাষ পদ্ধতি ব্যবহার
করা হচ্ছে যার ফলে কৃষকেরা অতি দ্রুত এবং অল্প
সময়ের মধ্যে আগাম সবজি চাষ করতে পারছে। প্রতিদিন একজন সুস্থ মানুষের ২২০ গ্রাম
সবজি খাওয়া দরকার সেখানে মানুষ প্রতিদিন খাচ্ছে মাত্র ৫০ গ্রাম পরিমাণে সবজি।
বর্তমানে এখন অনেক টেকনোলজি ব্যবহার করে অর্থাৎ কৃত্রিম পরিবেশ তৈরি করার মাধ্যমে
গ্রীষ্মকালীন সবজিকে সহজে শীতকালে চাষ করা সম্ভব হচ্ছে। এর জন্য টানেল টেকনোলজি
বা ছাউনি পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। এই চ্যানেল পদ্ধতির দুই রকম একটা নিচু টানের
এবং অপরটি উঁচু টানেল। নিচু টানেল যে সব
এলাকায় জোরে বাতাস হয় সেসব এলাকার জন্য প্রযোজ্য নয় যে সকল এলাকায় সবজি চাষ
করা হয় সে সকল এলাকায় বাতাস খুব জোরে একটা প্রবাহিত হয় না তার জন্য এর সকল
পদ্ধতি গুলো ব্যবহার করে মানুষ এখন কমপক্ষে মৌসুমের এক মাস আগেই সবজি চাষ করতে
পারছে এবং সেগুলো বাজারে নিতে পারছে। আর এভাবেই কৃষকেরা এখন আগাম সবজি চাষ করতে
পারছে।
লেখক এর মন্তব্য
ম্যাক্সিমো ইনফো এখানে কোন মাসে কোন সবজি চাষ করতে হয় pdf এবং বারো মাসি সবজি চাষ ও
তবে বারো মাসে সবজি চাষ পদ্ধতি এছাড়াও জানুয়ারি মাসে কোন কোন সবজি চাষ করা যায়
ইত্যাদি সবজি চাষের কয়েকটি বিষয় নিয়ে এই পোস্টটিতে অনেক বিস্তারিতভাবে আলোচনা
করেছে। এগুলো পড়ে জানার মাধ্যমে আপনারা অনেক উপকৃত হবেন এবং অন্য কেউ সাহায্য
করতে পারবেন। তাই এই পোস্টটি পড়ে যদি আপনাদের ভালো লাগে তাহলে আপনারা এই পোস্টটি
সবার মাঝে শেয়ার করে দিবেন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url