শাক সবজির পুষ্টিগুন ও শাক খাওয়ার উপকারিতা জানুন
আসসালামু আলাইকুম, আজকে আমি
শাক সবজির
পুষ্টি গুণ ও শাক খাওয়ার উপকারিতা এবং সিদ্ধ সবজি খাওয়ার উপকারিতা ছাড়াও কাঁচা
সবজি খাওয়ার উপকারিতা ইত্যাদি আরো কয়েকটি বিষয় নিয়ে এইখানে আলোচনা করব। এগুলো
পড়ে আপনারা অনেক উপকৃত হবেন এবং বিভিন্ন তথ্য জানতে পারবেন। তাই দয়া করে সবাইকে
অনুরোধ করছি এই পোস্টটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
আজকে আমি আমার এই পোস্টে আপনাদেরকে সবজির উপকারিতা এবং সিদ্ধ সবজি খাওয়ার
উপকারিতা সম্পর্কে আপনাদের জানাবো। এই পোস্টটিতে আমি শাক সবজির পুষ্টি গুন ও শাক
খাওয়ার উপকারিতা ছাড়াও আরো কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি।
শাকসবজি প্রতিদিন কতটুকু পরিমাণে খাওয়া উচিত তাহলে আপনারা রোগমুক্ত থাকবেন
আপনাদের শরীর স্বাস্থ্য ভালো থাকবে এ সকল বিষয়ে জানার জন্য এবং অন্যকে সাহায্য
করার জন্য শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
ভূমিকা
আমরা সকলে আমাদের খাবার তালিকায় প্রতিদিন কিছু না কিছু শাক-সবজি রাখি কারন এই
শাকসবজি খেলে আমাদের শরীর সুস্থ থাকবে আমরা থাকবো রোগমুক্ত। আমাদের হাট ভালো
থাকবে ক্যান্সার প্রতিরোধ করা যাবে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকবে। আপনাদের
মস্তিষ্ক সতেজ হবে দৃষ্টি শক্তি ভালো হবে এছাড়া বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি কমাতে
সাহায্য করবে এ শাকসবজি। শাকসবজিতে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন খনিজ পদার্থ
ক্যালসিয়াম আয়রন মিনারেল ফাইবার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ইত্যাদি বিভিন্ন
পুষ্টি উপাদান যেগুলো আমাদের শরীরকে সুস্থ করে। এছাড়া আপনাদের রান্না করে
খাওয়ার চাইতে সবজি সিদ্ধ অবস্থায় খাওয়া ভালো কারণ রান্না করে খেলে পুষ্টিগুণ
হারিয়ে যায় এজন্য সবজি সিদ্ধ করে খাওয়ায় ভালো। আপনারা অনেকেই কাঁচা সবজি
খেয়ে থাকেন যেমন পেঁয়াজ ,রসুন ,ছালাত হিসেবে টমেটো ও গাজর ইত্যাদি অনেক
উপকারিতা পাওয়া যায়। প্রতিদিন খাবার তালিকায় ৫ থেকে ৯ পরিবেশন পরিমাণে শাকসবজি
খাওয়া উচিত। আপনারা সুস্থ এবং আপনাদের শরীর থাকবে রোগ মুক্ত।
সিদ্ধ সবজি খাওয়ার উপকারিতা
খাবারের স্বাদ ভালো হলে আমরা সেই খাবার খেতে চাই। কিন্তু খাবারের পুষ্টিগুণ ঠিক
রেখে খাবার রান্না করে খেতে হবে এজন্য পুষ্টিবিদদের মতে খাবারের স্বাদ হলেই সেই
খাবার খাওয়া ঠিক না খাবার খেতে হলে যেভাবে তার পুষ্টিগুণ বেশি থাকবে সেই ভাবে
খেতে হবে। গবেষণা করে দেখা গেছে যে সবজি যদি সিদ্ধ করে খাওয়া হয় তাহলে তার
জীবাণুমুক্ত হয় এবং বেশি পরিমাণে স্বাস্থ্যকর পুষ্টি গুণ সম্পূর্ণ খাবার হয়।
অতিরিক্ত ভাবে বেশি করে কষিয়ে রান্না করলে সেই সবজির পুষ্টিগুণ অনেকটাই নষ্ট
হয়ে যায়।
সবজিতে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন খনিজ পদার্থ এবং তন্তু থাকে যা আমাদের শরীরের রোগ
প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয় এবং ডায়াবেটিস হৃদরোগ এবং ক্যান্সার সহ আরো
বিভিন্ন রোগের সাথে লড়াই করতে সাহায্য করে থাকে। এর জন্য সবচেয়ে ভালো উপায় হলো
সবজিটা সেদ্ধ করে খাওয়া তাহলে এর পুষ্টিগুণ এবং বজায় থাকবে এবং এটা স্বাস্থ্যকর
হবে। সিদ্ধ সবজি খাওয়ার উপকারিতা বলা হলো
পুষ্টি সংরক্ষণ করেঃ গবেষণা করে বলা যায় যে ব্রকলি, গাজর এবং ধুন্দুল এই
সবজিগুলোতে অনেক উপকারী গুণ আছে এবং এ সকল সবজিগুলোতে অনেক বেশি পরিমাণে পুষ্টি
সংরক্ষিত অবস্থায় থাকে।
রোগের ঝুঁকি কমায়ঃ আমরা প্রতিদিন আমাদের জীবনে নানা রকম সবজি তরকারি
হিসেবে খেয়ে থাকি কিন্তু এই সবজিগুলো যদি আমরা সিদ্ধ করে খায় তাহলে আমাদের
শরীরের ক্যান্সার ,হৃদরোগ ,স্থলতা , ডায়াবেটিস ইত্যাদি আরো অনেক রোগের ঝুঁকি
কমিয়ে দিতে পারবে।
উপকারিতা বেড়ে যাওয়াঃ বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা করে বলেছেন যে সিদ্ধ করা সবজি
অর্থাৎ সবুজ শাকসবজির অনেক উপকারিতা সর্বাধিক পরিমাণে বেড়ে যায় যেমন পালং শাক
সহ আরো অনেক সবুজ শাকসবজি।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বাড়ায়ঃ উত্তাপে সবজির অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বেড়ে যায়
যেগুলো আপনার দেহের অক্সিডেশন দ্বারা আপনার শরীরের উৎপাদিত অস্থির অনু অকার্যকরী
করার পাশাপাশি এগুলো বিভিন্ন রোগের সাথে লড়াই করতে পারে।
সহজপাচ্য হয়ঃ সিদ্ধ করা সবজি সহজে চিবিয়ে খাওয়া যায় এবং হজমে সাহায্য
করে। যারা বয়স্ক মানুষ বা যাদের দাঁত নেই তাদের জন্য এই সেদ্ধ করা সবজি খাওয়া
ভালো।এতে করে যারা রোগাক্রান্ত এবং অসুস্থ অবস্থায় থাকে তাদের খেতে দেওয়া ভালো।
নিরাপদ খাবারঃ উত্তাপের কারণে সবজির বিভিন্ন মাইক্রো অর্গানিজম বের হয়ে
যায় আর এটাই আপনার খাবার কে স্বাস্থ্যকর এবং নিরাপদ করে তুলতে সাহায্য করে থাকে।
ওজন কমাতে সাহায্য করেঃ আপনি যদি আপনার শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমাতে চান
তাহলে সেদ্ধ করা সবজি খেতে পারেন এতে করে আপনার শরীরের চর্বি কমে যাবে এবং আপনার
ওজন কমতে শুরু করবে।
সময় বাঁচেঃ সবজি সিদ্ধ করা খুব কম সময়ের মধ্যে হয়ে যায় এবং এটি রান্না
করার জন্য কম পরিমাণে উপাদানের প্রয়োজন পড়ে এবং রান্না করার প্রক্রিয়াটি সহজ ও
তাড়াতাড়ি হয়।
খাবারের স্বাদ সুস্বাদু হয়ঃ সেদ্ধ করা খাবার অনেক সুস্বাদু হয় এবং এর
স্বাদ একটু অন্যরকম হয় যেন খাবারের স্বাদ বদলে যায়। যেমন টমেটোর চাটনি সিঙ্গারা
বানাতে সেদ্ধ করা আলুর দরকার হয়।
স্বাস্থ্যকর উপায়ঃ আপনি যদি একটি স্বাস্থ্যকর উপায়ে খাবার খেতে চান
তাহলে সিদ্ধ করা খাবার খান এতে করে কোন ক্ষতি কর পদার্থ থাকবে না এতে এবং এর
পুষ্টিগুণ ও বজায় থাকবে।
সবচেয়ে উপকারী সবজি কোন গুলো
আমাদের খাবার তালিকায় প্রতিদিন শাকসবজি রাখা উচিত মাছ মাংস এবং অন্যান্য সবজির
পাশাপাশি। কারণ এখন চিকিৎসক এবং পুষ্টিবিদরা বলেন যে আপনার ডায়েট কন্ট্রোল করতে
হলে আপনার খাবার তালিকায় শাকসবজি রাখা উচিত অবশ্যই। মাছ মাংস বা অন্যান্য যে সকল
দামি খাবার রয়েছে সেগুলো শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টির যোগান দেয় কিন্তু এর
পাশাপাশি সুস্থ থাকতে হলে আপনাদের খাবার তালিকায় রাখতে হবে শাকসবজি। কারণ এই সকল
শাকসবজি আমাদের বিভিন্ন রোগের থেকে
সুরক্ষা করে এবং আমাদের জীবনের আয়ু বাড়াতে সাহায্য করে। আজকে আমি আমার এই
পোষ্টের মাধ্যমে আপনাদের সবচেয়ে উপকারী কয়েকটি সবজিগুলোর কথা বলব চলুন জেনে
নেওয়া যাক এই সবজিগুলো কোনগুলো।
পালং শাকঃ পালং শাকে অন্যান্য পাতাযুক্ত সবুজ শাক এর মতই প্রচুর পরিমাণে
আছে ক্যারোটিনয়েড। এই উপাদানটি আমাদের চোখের সুস্থতা রক্ষা করে এবং ম্যাকুলার
ডিজেনারেশন প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। আপনাদের মধ্যে অনেকের অন্ধত্ব এই সমস্যাটি
থাকে আর এর প্রধান কারণ ম্যাকুলার ডিজেনারেশন এর জন্য হয়। এই পালং শাক আপনি যদি
রান্না করে খান তাহলে আপনার শরীরে লুটে ইন শোষিত হবে ভালোভাবে।
পেঁয়াজঃ পেঁয়াজকে যদি আপনারা কাঁচা অবস্থায় খেতে পারেন তাহলে আপনার
ক্যান্সার রোগ প্রতিরোধ হবে। আর যদি পেঁয়াজকে আপনি উচ্চ তাপ মাত্রায় রান্না করে
খান তাহলে পেঁয়াজের ফাইটো কেমিক্যাল এর উপকারী গুণ ধীরে ধীরে কমতে থাকে। মানুষের
প্রটেস্ট ক্যান্সার এবং ফুসফুসের ক্যান্সার এর থেকে আমাদের সুরক্ষা দিতে পারে। এই
কাঁচা পেঁয়াজ আমাদের ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখে এর জন্য আমাদের কাঁচা পেঁয়াজ
সালাতের সঙ্গে খাওয়া উচিত।
ভুট্টাঃ শুধু মাত্র যে ভুট্টার দানা উপকারি তা নয় এটার মোচাও আমাদের জন্য
স্বাস্থ্যকর। কারণ ভোটটাতে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ ,বি, ই ও কে, ফসফরাস,
ম্যাগনেসিয়াম এছাড়াও আছে হাই নিউট্রিয়েন্ট প্রফাইল যেগুলো আমাদের রক্তনালীর
রোগ, ডায়াবেটিস, হাটের রোগ এবং স্থলতা কমাতে সাহায্য করে এবং এইসব সবজিটি আমাদের
পরিপাকের স্বাস্থ্য ও আরো উন্নত করতে সাহায্য করে।
বাঁধাকপিঃ বাঁধাকপি অন্যান্য সবজির মতো সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর একটি সবজি।
বাঁধাকপিতে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি এটা আমাদের মেজাজ বা মানসিক অবস্থা
উন্নত করতে সাহায্য করে। আপনারা যদি আপনাদের স্মৃতিশক্তি, মনোযোগ, যুক্তিবিদ্যা
এবং জ্ঞান অর্জন তা ভালোভাবে ধরে রাখতে চান তাহলে প্রতিদিন খাবার তালিকায়
দেড়বাটি করে সবুজ পাতাযুক্ত শাকসবজি খেতে পারেন।
লাল ক্যাপসিকামঃ আপনারা যদি লাল ক্যাফটি কাম খান তাহলে আপনাদের শরীরের
ভিটামিন সি এর ১৫০ ভাগ সরবরাহ করতে পারবে এই লাল ক্যাপসিকাম। একটি ভালো মাঝারি
আকারের লাল ক্যাপসিকামে আছে মাত্র ৩২ ক্যালোরি কিন্তু লাল ক্যাপসিকামে আছে
ভিটামিন সি। এই লাল ক্যাপসিকাম খেলে আপনাদের শরীরের রক্তের ধমনীর পাঁচীরে জমে
থাকা প্লেক এবং ধমনী শক্ত হওয়া ও সরু হওয়া থেকে আপনাদের সুরক্ষা দিতে পারবে।
ব্রকলিঃ ব্রকলি খেলে আপনার শরীরের মুত্রাশয়ের ক্যান্সার হওয়া থেকে রক্ষা
পাবেন। ক্যান্সার প্রতিরোধী এন্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফাইটোকেমিক্যাল এর উৎস হল ব্রকলি
সবজিটি।
কাকরোলঃ কাকরোল এ আছে প্রচুর পরিমাণে লুটেন এর মত ক্যারটনয়েড যা মানুষের
চোখের রোগ ও হৃদরোগ ও ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। এটা আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ
ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে কারণ এর মধ্যে আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। ভারতে এই
সবজিটাকে অনেকে আচার করে খান।
সবুজ শাকঃ সবুজ শাক সবই আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী কথায় আছে
সবুজ শাকসবজি এবং হলুদ ফলমলে আছে ভিটামিন এ যা আমাদের রাতকানা রোগ প্রতিরোধ করে।
এ সকল সবজি খেলে আমরা আরো বিভিন্ন ধরনের রোগ থেকে রক্ষা পাব আমাদের স্বাস্থ্য
ভালো থাকবে কারণ এ সকল সবুজ শাক-সবজিতে অনেক পুষ্টিগুণ ও স্বাস্থ্য উপকারিতা আছে।
এছাড়া আপনারা গাজর, কাঁচা মরিচ ,কলা ,কুমড়ো ও টমেটো ইত্যাদি সবজি খেতে পারেন।
গাজর সবজিতে আছে ভিটামিন এ এবং কলাতে আছে পটাশিয়াম সমৃদ্ধ পুষ্টি উপাদান। টমেটো
তে আছে ভিটামিন সি, কে এবং লাইকোপিন সমৃদ্ধ পুষ্টি উপাদান যা আমাদের স্বাস্থ্যের
জন্য খুবই উপকারী। আবার কাঁচামরিচ এ আছে ভিটামিন সি এবং ক্যাপসাইসিন এবং অন্যান্য
পুষ্টি উপাদান যেগুলো শরীরকে ভালো রাখার জন্য প্রয়োজনীয়। তাহলে বুঝতেই পারছেন এ
সকল শাকসবজি আমাদের শরীরের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
কাঁচা সবজি খাওয়ার উপকারিতা
অনেক কাঁচা সবজিতে ক্যালসিয়াম পটাশিয়াম এবং আয়রন থাকে এই সকল সবজিগুলো যদি
রান্না করে খাওয়া হয় তাহলে রান্নার সময় এই পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়ে যায় তাই এ সকল
কিছু কিছু সবজি কাঁচা অবস্থায় খাওয়া ভালো। কাঁচা ফল এবং কাঁচা সবজিতে ভিটামিন
সি এবং ভিটামিন বি থাকে এছাড়াও থাকে অনেক পুষ্টি উপাদান এজন্যই অনেক ফল এবং
শাকসবজি কাঁচা অবস্থায় খাওয়া ভালো এতে করে যে সকল পুষ্টি আছে সেগুলো পাওয়া
যাবে। কাঁচা সবজি খাবার উপকারিতা নিচে বর্ণনা করা হলো।
রসুনঃ আমরা সবাই রসুন মসলা হিসেবে রান্নার সময় ব্যবহার করে থাকি কিন্তু
রসুন কাঁচা খেলে এর অনেক উপকার পাওয়া সম্ভব। কাঁচা রসুন আমাদের হার্ট অ্যাটাক
এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। যদি রান্না করে খাওয়া হয় তাহলে
রসুনের এই পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়ে যায়।
পেঁয়াজঃ আমরা বা আপনারা সবাই পেঁয়াজ মসলা হিসেবে ব্যবহার করে থাকি।
পৃথিবীর প্রায় সকল দেশেই এই পেঁয়াজকে মসলা হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
পেঁয়াজ কাঁচা অবস্থায় খেলে ফুসফুসের ক্যান্সার, হার্টের উপকার করে এবং প্রটেস্ট
ক্যান্সার থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। এজন্য পেঁয়াজ কাঁচা অবস্থায় খেলে বেশি
উপকার পাওয়া যাবে।
বাদামঃ বাদাম আমরা অনেকেই ভেজে খায় কিন্তু ভেজে খাওয়ার চাইতে কাঁচা
অবস্থায় খাওয়া ভালো এটি আমাদের স্বাস্থ্যের অনেক উপকারে লাগে এবং এতে অনেক
পুষ্টি উপাদান থাকে।
ছোলাঃ ছোলা আমাদের দেশের প্রায় সব মানুষের রান্না করে খেতে পছন্দ করে
কিন্তু রান্না করে খাওয়ার চাইতে এই ছোলা যদি আপনারা কাঁচা অবস্থায় খান তাহলে
বেশি উপকার পাওয়া যাবে।
বিটঃ আপনারা অনেকেই বিটকে সালাত হিসেবে খেয়ে থাকেন কিন্তু যদি এই বিট
রান্না করে খান তাহলে এর পুষ্টিগুণ ২৫ ভাগ কমে যায় তাই এটি কাঁচা অবস্থায়
খাওয়াই ভালো অনেক উপকার পাওয়া যাবে।
লাল ক্যাপসিকামঃ ডাইবেটিস, ক্যান্সার এবং আরো কয়েকটি রোগের উপকার পেতে
হলে লাল ক্যাপসিকাম খাওয়া উচিত কিন্তু রান্না করলে এটার অনেক পুষ্টিগুণ নষ্ট
হয়ে যায় তাই কাঁচা অবস্থায় খাওয়া ভালো।
ব্রকলিঃ ব্রকলিতে আছে অনেক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন সি যা আপনাদের
শরীরের ক্যান্সার রোগ প্রতিরোধের বিরুদ্ধে লড়াই করে এছাড়াও হৃদরোগের মতো আরো
অনেক অসুখ থেকে আমাদের দূরে রাখতে সাহায্য করে। কিন্তু রান্না করে ব্রকলি খেলে এর
অনেক এন্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান এবং ভিটামিন সি অনেকটাই কম হয়ে যায় তাই কাঁচা
অবস্থায় খাওয়া ভালো।
তাছাড়া আপনারা অনেকেই এখন কাঁচা সবজিগুলো রস করে খেয়ে থাকেন যারা ফিটনেস নিয়ে
ভাবেন তারা কাঁচা শাকসবজি রস করে খেয়ে থাকেন। কাঁচা শাকসবজির মধ্যে প্রচুর
পরিমাণে প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং অন্যান্য খনিজ উপাদান থাকে যা আমাদের রোগ
প্রতিরোধ শক্তি গুলো বাড়াতে সাহায্য করে থাকে। কিন্তু আবার আরেকটি বিষয়ে লক্ষ্য
রাখতে হবে যে যদি অতিরিক্ত বেশি পরিমাণে কাঁচা শাক-সবজি খাওয়া হয় তাহলে আপনাদের
বদহজম এবং পেটের সংক্রমণ হতে পারে।
শাক সবজির পুষ্টিগুন ও শাক খাওয়ার উপকারিতা জানুন
আমাদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় শাকসবজি থাকা উচিত কারণ শাকসবজিতে আছে প্রচুর
পরিমাণে ফাইবার ,প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, আয়রন ,শর্করা এছাড়াও আছে বিভিন্ন রকমের
ভিটামিন এ, বি ও সি ইত্যাদি আরো অনেক পুষ্টি উপাদান আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট
উপাদান। এই সকল পুষ্টি উপাদান আপনাদের হজমে সাহায্য করে স্মৃতিশক্তি উন্নতি করতে
সাহায্য করে এবং আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং শরীরকে সুস্থ
রাখে। শাকসবজির পুষ্টিগুণ ও শাকসবজি খাবার উপকারিতা বলা হলো
দৃষ্টি শক্তি উন্নত করতে সাহায্য করেঃ সবুজ শাক-সবজিতে আছে প্রচুর পরিমাণে
লুটেইন ও জিয়েক্সেথিন এই দুই উপাদান যা আমাদের দৃষ্টি শক্তি উন্নত করতে সাহায্য
করে। আবার অতিরিক্ত বেশি আলোর কারণে চোখের কোন সমস্যা হওয়া থেকে রক্ষা করে এই
দুইটি উপাদান।
ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখেঃ ওজন নিয়ন্ত্রণ এ রাখার জন্য আমাদের প্রতিদিন
শাক-সবজি খাওয়া উচিত। এর জন্য আপনারা কমলা লেবু খেতে পারেন কমলালেবু তে থাকা
এন্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটায় এবং রোগ প্রতিরোধ করে এবং শরীর
থেকে বিষ বের করে দিতে সাহায্য করে। এছাড়াও আপনাদের শরীরে যাতে ক্যালরির প্রবেশ
বেশি পরিমাণে না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখে এবং ওজন কমাতে সাহায্য করে।
কোরেস্টেরলের মাত্রা কমায়ঃ আমাদের শরীরে থাকা খারাপ করেলেস্টেরলের মাত্রা
কমিয়ে দেয় যাতে করে আমাদের হার্ট ভালো থাকে। যারা শাক-সবজি বেশি পরিমাণে খায়
না তাদের হার্টের সমস্যা দেখা দেয়।
ত্বক ভালো রাখতেঃ আপনাদের অনেকেরই শীতের সময়
ত্বকের আদ্রতা কমে যায় এ সময় বেশি করে কমলা লেবু সাইট্রাস যুক্ত ফল খেতে পারেন
এগুলোতে থাকে ভিটামিন সি এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট যেগুলো আপনার শরীরের ভিটামিন সি এবং
এন্টিঅক্সিডেন্ট এর মাত্রা বাড়তে সাহায্য করে। এতে করে আপনাদের মুখের কালো দাগ
ছোপ দূর হবে ত্বক সুন্দর এবং তুলতুলে হয়ে উঠবে।
মানসিক চাপ কমায়ঃ মানসিক চাপ কমানোর জন্য সবুজ শাক-সবজি খাওয়া খুবই
দরকার কারণ এগুলোতে থাকে প্রাকৃতিক সব উপাদান যেগুলো আপনার শরীরে প্রবেশ করে
আপনার হরমোনের ক্ষরণ বাড়িয়ে দিতে সাহায্য করে এর ফলে আপনার মানসিক চাপ কম হবে।
কিডনি রোগের আশঙ্কা কমেঃ প্রতিদিন খাবার তালিকায় শাকসবজি থাকলে এগুলোতে
থাকা ভিটামিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুলো আমাদের কিডনি রোগের আশঙ্কা থেকে মুক্তি
দিবে। কমলা লেবু খেলে আপনাদের শরীরের কিডনি ফাংশনের উন্নতি ঘটবে এবং তার সাথে
কিডনি স্টোনের রোগের আশঙ্কা থেকে মুক্তি পাবেন।
হার্ট ভালো রাখেঃ শাকসবজি খেলে আমাদের হার্ট ভালো থাকে, কমলালেবুতে থাকে
ফাইবার এবং অন্যান্য উপকারী পুষ্টি উপাদান যেগুলো কোলেস্টেরল এর মাত্রা কমাতে
সাহায্য করে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে এর ফলে হার্টের কোন রকমের ক্ষতি হয়
না।
ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়ঃ প্রচুর পরিমানে শাক-সবজি খেলে আমাদের শরীরের
ভেতরে এমন অনেক পরিবর্তন হয় যা ক্যান্সার কোষ জন্মাতে পারেনা। এর ফলে আমাদের
কলোন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।
বয়স কমাতে সাহায্য করেঃ শাকসবজি খেলে আপনাদের মস্তিষ্ক চাঙ্গা হবে। এতে
করে আপনাদের বয়সের ছাপ পড়তে দেবে না শরীরে খাতা কলমে হিসাব করে দেখলে বয়স বেশি
হবে কিন্তু শাক-সবজি খেলে শরীর ফিট থাকবে কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে আয়ু বৃদ্ধি
পাবে এদিকে থেকে আপনার বয়স বাড়তে দেবে না।
ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণ করেঃ কমলা লেবুতে আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা
আপনাদের শরীরে প্রবেশ করার পরে আপনার রক্তচাপ বা ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে চলে
আসবে এজন্যই চিকিৎসকরা প্রতিদিন কমলা লেবু খেতে বলেন।
হাড় শক্ত করেঃ প্রতিদিন শাক-সবজি খেলে হাড় শক্ত হয় বাহারের শক্তি বাড়ে
এবং হাড়ের মধ্যে যে জয়েন্ট আছে সেগুলো সচলতা বাড়িয়ে দেয়। কারণ শাকসবজিতে আছে
প্রাকৃতিক পুষ্টি উপাদান এবং ক্যালসিয়াম।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়ঃ শাকসবজিতে আছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার
প্রোটিন ক্যালসিয়াম শর্করা এবং আয়রন অর্থাৎ অনেক পুষ্টিগুণ এগুলো আমাদের হজমে
সাহায্য করে এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
প্রতিদিন কতটুকু সবজি খাওয়া উচিত
আপনারা সকলেই প্রতিদিন কিছু না কিছু রকমের সবজি খেয়ে থাকেন কিন্তু এই সবজি
খাওয়ার একটা পরিমাপ আছে। আমাদের অর্থাৎ নারী পুরুষ শিশু বৃদ্ধ সবারই সুস্থ থাকার
জন্য বিভিন্ন রোগের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য শাকসবজি এবং ফল খাওয়া উচিত।
এজন্য আমাদের খাবার তালিকায় প্রতিদিন সবরকমের সবজি এবং ফল থাকা উচিত। এক খাবারের
সব রকম পুষ্টি উপাদান থাকে না এর জন্য সব রকমের শাকসবজি এবং ফল থাকা উচিত খাবার
তালিকায় তাহলে আমাদের শরীরে
পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি হবে না। এ বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছেন
আমাদের প্রতিদিনের খাবার তালিকায় ৮০ গ্রাম হিসেব করে পাঁচ পরিবেশনে সবজি এবং ফল
খাওয়া উচিত। এজন্য আমাদের প্রতিদিন খাবার তালিকায় পাঁচ মিশালে শাক-সবজি এবং ফল
থাকা উচিত এ কথাটি ইউ এস ডি এ এর নির্দেশিকায় জানা যায়। তবে এর মধ্যে কিছু সবজি
যেগুলো শ্বেতসার এবং মূল জাতীয় সবজি অর্থাৎ আলু, মিষ্টি আলু, লাউ, মূলা,
গাজর,ভুট্টা, শালগম ,ডাল জাতীয ছোলা এবং বীজ বাদ দিতে হবে।
এক পরিবেশন বলতে বলা হয় যদি কাঁচা শাক-সবজি এবং ফল হয় তাহলে এক কাপ আর যদি টিন
জাত এবং রান্না করা হয় তাহলে আধা কাপ এবং শুকনো ফল এর ক্ষেত্রে খেতে হবে কাপের
এক চতুর্থাংশ পরিমাণে। এবং যদি ফল এবং সবজি রস কিংবা জুস করে খাওয়া হয় তাহলে
চার আউন্স তবে এটি অবশ্যই চিনিমুক্ত হওয়া দরকার। জুস করে খাওয়ার চাইতে ফল এবং
সবজি খাওয়ায় বেশি উপকারী হয়। দুই থেকে ছয় বছরের শিশুদের প্রতিদিন তিন পরিবেশন
সবজি এবং দুই পরিবেশন ফল
খাওয়া উচিত। পরিশ্রমী মহিলা পুরুষ এবং বাড়ন্ত বয়সের মেয়েদের প্রতিদিন চার
পরিবেশন সবজি এবং তিন পরিবেশন ফল খাওয়া উচিত। এছাড়াও যারা বাড়ন্ত বয়সের
ছেলেরা পরিশ্রম করে তাদের পরিবেশন সবজি এবং চার পরিবেশন ফল খাওয়া উচিত প্রতিদিন।
এই শাক-সবজি এবং ফল যদি পুষ্টির চাহিদা অনুযায়ী সঠিক পরিমাপের খাওয়া হয় তাহলে
আমাদের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করবে এবং শরীর থাকবে রোগমুক্ত।
ফল খাওয়ার উপকারিতা জানুন
আমাদের প্রতিদিনের খাবার তালিকায় যেকোনো ধরনের ফল একটি করে থাকা উচিত এতে করে
আমাদের শরীরের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে মস্তিষ্ক সজাগ হবে কারণ ফলের মধ্যে আছে
প্রাকৃতিক শর্করা যেগুলি আমাদের রক্তের সাথে মিশে অনেক উপকার করে। ফল আপনাদের
স্বাস্থ্যের জন্য বা শরীরের পক্ষে খুবই উপকারী একটি জিনিস। এর মধ্যে আছে ভিটামিন
সি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং আরো অন্যান্য উপকারী সব পুষ্টি গুণ ও উপাদান যেগুলো
আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। ফল খাওয়ার উপকারিতা গুলো নিচে বর্ণনা
করা হলো
- প্রতিদিন ফল খাওয়ার ফলে শরীরে কোনরকম রোগ খুব সহজেই বাসা বাঁধতে পারবে না।
- ফল খেলে স্বাস্থ্য শক্তিশালী হয় এবং রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে ফল। এতে করে আপনাদের ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা কম হবে।
- ফলে থাকে পানি যা আপনার ত্বক সুস্থ এবং নরম রাখতে সাহায্য করবে।
- ফলে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান আমাদের শরীরের ভেতরে থাকা খারাপ ব্যাকটেরিয়া গুলোর বিরুদ্ধে কাজ করে।
- ফলে আছে প্রচুর পরিমাণে আশ যা আমাদের মেদ জমতে দেয় না এর ফলে আপনি মোটা হওয়া থেকে রক্ষা পাবেন সহজেই।
- ফলে থাকা ফাইবার আমাদের শরীরের কোলেস্টেরল এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।
- ফলে আছে বিভিন্ন রকমের ভিটামিন এবং মিনারেল যা আমাদের শরীরের ভিটামিন এবং মিনারেল এর ঘাটতি পূরণ করে থাকে।
- ফল খেলে আপনি এনার্জি পাবেন কারণ ফল হচ্ছে একটি প্রাকৃতিক উপাদান যার জন্য আপনি সুস্থ বোধ করবেন।
- আপনার ব্রেনের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করবে এবং আপনার হার্ট ভালো থাকবে।
- ফল খেলে পেটের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায় কারণ এটি আমাদের হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে থাকে।
- শরীরের ভেতরে জমে থাকা টক্সিন উপাদানগুলি বাহিরে বের করে দেওয়ার প্রক্রিয়া সাহায্য করে এবং ফল খেলে এসিড দূর হয়।
- ফলে থাকে এন্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন সি এবং অনেক উপকারী পুষ্টি উপাদান যেগুলো আপনাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করবে।
লেখক এর মন্তব্য
ম্যাক্সিমো ইনফো এখানে শাক সবজির পুষ্টিগুণ ও শাক খাওয়ার উপকারিতা এবং সিদ্ধ সবজি
খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে অনেক উপকারী তথ্য বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছে। এছাড়াও
আরো কয়েকটি বিষয়ে এই পোস্টটিতে আলোচনা করা হয়েছে এগুলো পড়ে আপনারা অনেক উপকৃত
হবেন এবং অন্য কেউ সাহায্য করতে পারবেন। আপনাদের যদি এই পোস্টটি ভালো লাগে তাহলে
আপনারা সবার মাঝে শেয়ার করে দিবেন এবং কমেন্টে জানাবেন কেমন হয়েছে ভালো থাকবেন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url